السلام عليكم

যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার (তওবা) করবে আল্লাহ তাকে সব বিপদ থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন। [আবূ দাঊদ: ১৫২০; ইবন মাজা: ৩৮১৯]

পরিপূর্ণ ঈমানদারগণ জান্নাতে প্রবেশ করবেন

| comments

মুসলমানগণ অনেকেই কেবল নামেই মুসলমান কাজে মুসলমান নই। অনেকে প্রকৃত মুসলমানের কাজ কি কি মুলসমানের মূল ধর্ম কি তা জানতে চান না। আমাদের আগে সে বিষয়ে জানতে হবে। আমরা জাতিতে মুসলমান, আমাদের ধর্মের নাম হল ইসলাম। আর এই ইসলাম অর্থ হল শান্তি। ধর্ম অর্থ পথ। ইসলামের বিধান যারা মেনে চলে তাদেরকে মুসলিম বা মুসলমান বলে। আর এই ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক হচ্ছেন হযরত মুহাম্মদ (স.)। ইসলামের ৫টি ভিত্তি রয়েছে, তার প্রথম ভিত্তি হচ্ছে ঈমান। এই ঈমান অর্থ বিশ্বাস। ইসলামের মূল বিষয়গুলোকে মুখে স্বীকার করা এবং অন্তরে বিশ্বাস করা ও সেই মোতাবেক কাজ করাকে ঈমান বলেন। ঈমানের ৭টি ফরজ রয়েছে সংক্ষেপে আমরা সে সম্পর্কে জানব। ঈমানের প্রথম ফরজ হচ্ছে আল্লাহ ও আল্লাহর প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করা। আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয়। আল্লাহকে কেউ জন্ম দেয়নি, তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং তার সমতুল্য কেউ নেই। মহান আল্লাহ আমাদের মাবুদ আমরা তার বান্দা। তিনি সব কিছু দেখেন, শোনেন ও জানেন। তার হাতেই সকল প্রাণীর জীবন ও মৃত্যু। তিনি আমাদের লালন-পালনাকারী। তার দয়া ও দান ছাড়া আমরা এক মুহূর্তও বেঁচে থাকতে পারি না। দ্বিতীয়ত বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে ফেরেশতাদের ওপর। ফেরেশতারা নূরের তৈরি। তারা সব সময় আল্লাহর হুকুম পালনে ব্যস্ত থাকেন। ফেরেশতরা অনেক, এর মধ্যে চারজন ফেরেশতা প্রধান। আল্লাহর প্রধান প্রধান কাজগুলো এই ফেরেশতারা সম্পাদন করে থাকেন। ফেরেশতাদের নেতা হলো হযরত জিবরাইল (আ.)। তৃতীয়ত বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে নবী রসূলগণের ওপর। আল্লাহ মানুষকে অযথা সৃষ্টি করেননি, একটি নেক উদ্দেশ্য নিয়েই তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন, তা হল আল্লাহর ইবাদত করা। কিভাবে ইবাদত করতে হয়, কোন পথ ভালো পথ আর কোন পথ মন্দ বা শয়তানের পথ তা চিনবার জন্য আল্লাহ যুগে যুগে অনেক নবী রাসূল পাঠিয়েছেন। কোনটা ভাল কাজ আর কোনটা খারাপ কাজ, কোন কাজ করলে আল্লাহ খুশি হন তা নবী রসূলগণ মানুষকে শিখিয়েছেন। নবী রাসূলগণ ছিলেন নিষ্পাপ। তাদের ব্যবহার ছিল খুবই সুন্দর। ধনি গরিব সবাইকে ভালো কাজের নির্দেশ দিতেন আর মন্দ কাজে বাধা দিতেন। আমাদের প্রথম নবী হযরত আদম (আ.) এবং শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (স.)। আমরা শেষ নবীর উম্মত। চতুর্থ ঈমান আনতে হবে আসমানি কিতাবসমূহের ওপর। আল্লাহ ফেরেশতাগণের মাঝে নবী রসূলগণের কাছে যে বাণী পাঠাতেন তার সমস্টিকে আসমানি কিতাব বলে। আসমানিকিতাব মোট ১০৪ খানা। প্রধান কিতাব ৪ খানা। কুরআন মাজীদ এর মধ্যে শেষ। আমরা কোন পথে চলবো আর কোন কাজ করবো এসবই কুরআন মাজীদে লেখা আছে। এই কুরআন হযরত মুহাম্মদ (স,)-এর ওপর নাজিল হয়। পঞ্চমত আমরা ঈমান আনবো আখেরাতের ওপর। আখেরাত হচ্ছে মৃত্যুর পরের জীবন। আখেরাতে ভালো ও মন্দ কাজের বিচার হবে। যারা দুনিয়ায় ভালো কাজ করবেন তার পুরস্কার হিসেবে তাকে পরম সুখের স্থান জান্নাত দান করা হবে এবং যে মন্দ কাজ করবে নবীর দেখানো পথে চলবে না তাকে কস্টের স্থান জাহান্নাম ভোগ করতে হবে। হাদীছে আছে ‘দুনিয়া আখেরাতের শষ্যক্ষেত্র’। ষষ্ঠত ঈমান আনতে হবে তাকদীরের প্রতি। মানুষের ভালো মন্দের তাকদীর বা ভাগ্য আল্লাহ নির্ধারণ করেন। মানুষের এক বছরের ভাগ্য আল্লাহ পবিত্র শব-ই কদরের রাত্রিতে নির্ধারণ করেন। তাই আমাদের সকলকে পবিত্র শব-ই ক্বদর রাত্রিতে আল্লাহর ইবাদত করা প্রয়োজন। অন্য হাদীসে আছে ‘সমস্ত কাজই নিয়তের ওপর নির্ভর করে’। সপ্তমত ঈমান আনতে হবে পুনরুত্থান দিবসের প্রতি। হযরত ইসরাফীল (আ.) যখন প্রথম সিঙ্গায় ফুত্কার দেবেন তখন পৃথিবীর সকল বস্তু ধ্বংস হয়ে চূর্ণ-বিচুর্ণ হয়ে তুলার ন্যায় বাতাসে উড়তে থাকবে এরপর দ্বিতীয় ফুত্কার দেয়ার পর সকল মৃত মানুষ নিজ নিজ কবর থেকে উঠে দাঁড়াবে। মৃত মানুষ ও সকল জীবজন্তু পুনরায় জীবিত হবে কেয়ামতের দিনে। এই জীবিত হওয়াকে পুনরুত্থান বলে। এর পরই সওয়াল জওয়াব, হাশর মীযান, জান্নাত বা জাহান্নাম ইত্যাদি ক্রমান্বয়ে ভোগ করতে হবে। এই হলো ঈমানের ৭টি ফরজ যা জানা থাকলে আমরা আমাদের চলার পথ সহজ ও সুন্দর করে নিতে পারি। এই ৭টি ফরজ জেনে সেই অনুযায়ী পথ চললে আমাদের মন থেকে সকল অন্যায় অপরাধ ধুয়ে মুছে যাবে। ঈমান ঠিক থাকলে মানুষ কোন খারাপ কাজ করতে পারে না। ঈমান ঠিক থাকার ফলে সে সর্বদা পরিপক্ককারী, ন্যায়বান, পরমদয়ালু ইত্যাদি গুনে গুনান্বিত হয়ে উঠে। ঈমানদার ব্যক্তি সর্বদা মনুষের উপকার করে, সত্পথে থেকে জীবিকা নির্বাহ করে। অন্যায়ের প্রতিবাদ করে, কারো দেওয়া আমানত খেয়ানত করেনা। কারও দেওয়া ওয়াদা ভঙ্গ করে না, কাউকে হিংসা করেনা। কারও গিবত করেনা, সকল হারাম খাওয়া থেকে নিজেকে দূরে রাখেন।

আল্লাহ আছেন তার ওপর দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করা তার দেওয়া জীবন বিধান মেনে চলা, নবী রাসূলের নিখুঁত আদর্শ মেনে চললে, কুরআনকে জীবনের সংবিধান হিসেবে মেনে চলা, মৃত্যুর পরের জীবনে বিশ্বাস করলে এবং নিজের মনকে সব সময় ধআল্লাহর ভয়ে ভীত রেখে জীবন চললে তাকে দিনরাত আমল করতে হয় না। তারা সত্ পথে চলার জন্য তার পুরস্কার মিলবে পরম সুখের স্থান জান্নাত। যার নিম্নদেশে প্রবাহিত হয় নহরসমূহ। ঈমানদার ব্যক্তি সর্বদা দু:খ কষ্ট করে এবং নফস শয়তানের তরফ থেকে বিপদে পতিত হয়ে থাকে, যা তার আল্লাহর পথে চলার বাধা সৃষ্টি করে। ইবলিশ শয়তান সর্বদা তাকে বিপদে ফেলার চেষ্টা করে। তাকে দিয়ে অন্যায় কাজ করার জন্য কুমন্ত্রনা দেয়, তার থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আল্লাহর সাহায্য কামনা করে। সে শয়তানের কুমন্ত্রনা থেকে রক্ষা পায় এবং দুনিয়ার অন্যায় অপরাধ করা থেকে নিস্কৃতি পায়। এই নিস্কৃতি তার জন্য উপহারস্বরূপ। মৃত্যুর পর যে জীবন সে জীবনে ও তার জন্য আছে মহাপুরস্কার জান্নাত। দুনিয়ার সব কষ্ট ভোগ করে যে ব্যক্তি তার ঈমানের ওপর দৃঢ় থাকবে সেই পূর্ণ ঈমানদার।

পরিপূর্ণ ঈমানদার বক্তিকে কোন সময় দোযখের আগুন স্পর্শ করবে না। আর পূর্ণ ঈমানদার ব্যক্তি আল্লাহর নিকট বেশি প্রিয়। আল্লাহ তার প্রিয় বান্দাদের সব সময় ভালোবাসেন। আর আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেন, ‘তোমরা নিজেদের মঙ্গলের জন্য যা কিছু আগে প্রেরণ করবে আমার কাছে তা তোমরা পাবে তদপেক্ষা উত্তম ও শ্রেষ্ঠ পুরস্কার হিসাবে। যে ব্যক্তি স্বীয় রবের প্রতি ঈমান আনবে তার কোন আশংকা থাকবে না লোকসানের। আসুন আমরা সবাই দুনিয়ার দু:খ কষ্ট মেনে নিয়ে পূর্ণ ঈমানদার হওয়ার চেস্ট করি ও আল্লাহর নিকট দোয়া করি আল্লাহ আমাদের সবাইকে পরিপূর্ণ ঈমানদার হওয়ার তাওফীক দান করুন, আমীন।

লেখক: রোকসানা পারভীন
Share this article :

Post a Comment

 
Support : Creating Website | Johny Template | Mas Template
Copyright © 2011. ইসলামী কথা - All Rights Reserved
Template Created by Creating Website Published by Mas Template
Proudly powered by Premium Blogger Template