السلام عليكم

যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার (তওবা) করবে আল্লাহ তাকে সব বিপদ থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন। [আবূ দাঊদ: ১৫২০; ইবন মাজা: ৩৮১৯]

আল্লাহ তায়ালার নিরানব্বইটি নাম

| comments

আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্নিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াছাল্লাম) বলেনঃ আল্লাহ তায়ালার নিরানব্বইটি (এক কম একশ) নাম রয়েছে, যে উহা গণনা করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।(বুখারী হাদীস নং-২৫৩১, মুসলিম হাদীস নং-৪৮৩৬) এ হাদীস থেকে জানতে পারলাম যে আল্লাহ সুবহানাহু তা'য়ালার মাত্র নিরানব্বইটি নাম। আপনি যখন বিভিন্ন কিতাব পাঠ করবেন তখন, কিছু কম বেশী পাবেন তার কারণ হল কোন কোন লেখক আল্লাহর একটি নামকে দুইবার উল্লেখ করেছে এবং অন্য একটি নাম ছেড়ে দিয়েছে। আমি আপনাদের বুঝার সুবিধার্থে কিছু নাম সংযুক্ত করেছি যার শব্দ ভিন্ন, কিন্তু অর্থ একই। আল্লাহর এই যে নিরানব্বইটি নাম তা কিন্তু আল্লাহর গুণ, প্রকৃত স্বরূপ নয়; কেননা গুণ হতে বস্তু পৃথক। যেমনঃ একজন মানুষ তাঁর নাম আব্দুল্লাহ সে প্রফেসার এবং গাড়ীর চালক, তাহলে কি বলতে পারি প্রফেসার যিনি তিনিই আব্দুল্লাহ অথবা গাড়ীর চালক যিনি তিনিই আব্দুল্লাহ। বরং এভাবে বলাটা ভূল, কারণ অনেকেই প্রফেসার হতে পারে আবার অনেকেই গাড়ীর চালক হতে পারে। এগুলো মানুষের গুণ। কিন্তু আল্লাহর গুণ সবকিছুর চেয়ে উর্দ্ধে। শিখার জ্যোতি যেমন প্রকৃত শিখা নয়, আল্লাহর গুণ ও তেমনি আল্লাহ নয়। আল্লাহ হচ্ছেন আসল সত্ত্বা (ইসমে যাত), বাকি নামগুলো তাঁর বিশেষণ (ইসমে সিফাত)। আল্লাহকে কেন্দ্র করে নামগুলি চতুর্দিকে ছড়িয়ে আছে। প্রশ্ন উঠতে পারে তবে কি আল্লাহ তা'য়ালা নিরানব্বই নামের মধ্যে সীমাবদ্ধ? নিশ্চয় নয়। গুণের সংখ্যা নির্ণয় করলে তো আল্লাহ সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েন। আল্লাহ তাই শুধু এগুণগুলোর মধ্যেই সীমিত নহেন; এর বাইরে ও তিনি। মানুষের জ্ঞান সসীম; কাজেই আমাদের জ্ঞানবুদ্ধি যতদুর নাগাল পায় ততদুর পর্যন্তই আল্লাহ নিজের পরিচয় দিয়েছেন। এবং সকল পরিচয়ের উর্দ্ধে (আল্লাহ) নিজের স্বরুপ বর্ণনা করেছেনঃ- *কোন কিছুই তাঁর (আল্লাহ) সদৃশ নহে; তিনি সর্বশ্রোতা সর্বদ্রষ্টা।(সূরাঃ শুরা, আয়াত-১১) আল্লাহর আসলিয়াৎ বুঝবার শক্তি মানুষের নেই; গুণ দ্বারা সেই পরম সত্ত্বাকে বুঝতে হবে। কাজেই আল্লাহর স্বরুপ উপলব্ধির জন্য তাঁর নামগুলো ও তার অর্থ জানা দরকার। এছাড়াও আল্লাহ তা'য়ালার অনেক নাম আছে। আল্লাহর প্রকৃত নাম (ইসম যাত) সঠিকভাবে উচ্চারণ করুন, আল্লাহর নামের গুরুত্ব অনুধাবন করুন, আল্লাহর প্রকৃত সত্তা ও গুণাবলী উপলব্ধি করতে চেষ্টা করুন।
(আল-খালেক) স্রষ্টা, সমস্ত বিশ্বজগতের সৃষ্টিকর্তা।
(আল-কাদের) মহাশক্তিধর, তিনি সর্বশক্তিমান এবং সমস্ত কিছুর উপর সামর্থবান।
(আল-আহাদ (ওয়াহেদ) আমরা যে আল্লাহ সম্পর্কে আলোচনা করছি তিনি একক, অদ্বিতীয়।
(আস-সামী'য়) শ্রোতা, তিনিই আল্লাহ যিনি সবকিছুর শ্রবণকারী।
(আল-বাসীর) মহাদ্রষ্টা, মহাদর্শনকারী, তিনি আল্লাহ যিনি সবকিছু দেখেন।
(আল-হাইউ)(আল-কাইয়ুম) চিরস্থায়ী, তিনি সেই আল্লাহ যার মৃত্যু নেই, চিরঞ্জীব, চিরজীবন্ত, অমৃত।
(আর-রাকীব) অতন্দ্র প্রহরী অর্থাৎ তিনি এমন এক আল্লাহ যার কোন তন্দ্রা (ঘুম) নেই।
(আর-রাব) প্রতিপালক, তিনিই সেই স্রষ্টা যিনি আপনাকে আমাকে এবং সমস্ত জীবকে আলো-বাতাস, অক্সিজেন, পানি ইত্যাদি দিয়ে প্রতিপালন করছেন।
(আল-আওয়াল) আদি, প্রথম, যখন এই বিশ্বজগতের কিছুই ছিল না তখনও আল্লাহ ছিল প্রথম।
(আল-আখের) অনন্ত, শেষ, এই বিশ্বজগতের সবকিছুই একদিন ধ্বংস হয়ে যাবে একমাত্র আল্লাহ (স্রষ্টা) ব্যতীত।
(আস-সামাদ) অভাবহীন, অমুখাপেক্ষী, তিনিই একমাত্র আল্লাহ যার কোন কিছুর অভাব নেই। তিনি সয়ংসম্পূর্ণ অমুখাপেক্ষী।
(আল-ওয়াজেদ) সর্ব বিষয়ে ইচ্ছা করা মাত্র প্রাপ্ত, তিনি এমন এক আল্লাহ যিনি কোন কিছু সম্পর্কে ইচ্ছা করা মাত্র হয়ে যায়।
(আল-মুহয়ী) জীবনদাতা, তিনি সে আল্লাহ যিনি সমস্ত জীবের জীবনদাতা।
(আল-মুমীত) মৃত্যুদাতা, তিনি সে আল্লাহ যিনি সমস্ত জীবের মৃত্যুদাতা।
(আল-হাক) চরমসত্য, সবার উপরে আল্লাহ সত্য তাহার উপরে নাই।
(আল-বা'য়েছ) পুনরূথানকারী, সমস্ত কিছুকে ধ্বংস করার পর আবার আল্লাহ তা'য়ালা পুনরূথান করবেন।
(আল-ওয়াসে'য়) মহা প্রশস্ত, অর্থাৎ তার চেয়ে বড় কেউ নেই।
(আল-আলীউ (আল-আলা) সুউচ্চ, সুমহান, সর্বোচ্চ, তিনি এমন এক আল্লাহ যার স্থান সবার উপরে।
(আল-আযীম (আস-সুব্বুহ) সুমহান, মহা মহিম তিনি তাঁর চেয়ে মহান কেউ নেই।
(আল-মুবদী) প্রথম আবিষ্কারক, পৃথিবীর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যত নব আবিস্কৃত হবে সমস্ত কিছুর প্রথম আবিষ্কারক আল্লাহ তা'য়ালা। তিনিই নির্দিষ্ট কিছু মানুষের মস্তিস্কে জ্ঞান দান করেন যেন নতুন কিছু আবিস্কার করে মানব জাতির রোজগার করার ব্যবস্তা করে দেন। তাই তাঁর (আল্লাহর) আরেকটি গুনঃ
(আল-মু'য়তি) (আল-যাওয়াদ) পরমদাতা, দয়াশীল, তিনি সমস্ত জীবের উপর দয়া করেন, যেন তারা আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে।
(আর-রাযযাক) রিযিকদাতা, তিনি এমন এক আল্লাহ যিনি সমস্ত জীব-জন্তুকে রিযিক দান করেন। এমনকি যারা এক আল্লাহকে অস্বিকার করে, যারা আল্লাহ ব্যতিত অন্যের ইবাদত করে তাদেরকেও আল্লাহ তা'য়ালা রিযিক দান করেন। কেননা তিনি হলেনঃ- আল-মান্নান (আল-মুহসিন) মহাঅনুগ্রহকারী।
(আল-খাবীর) সর্বজ্ঞানময়, মহাসংবাদ রক্ষক আল্লাহ, তাঁর অজানতে কোন কিছুই হয় না।
(আল-কুদ্দুস (আত-তাইব) মহা পবিত্র, তিনি এমন এক আল্লাহ যিনি সমস্ত দোষ ত্রুটি থেকে পবিত্র।
(আল-মালিক) মহাবাদশা, তিনিই একমাত্র বিশ্ব জগতের সম্রাট বা প্রভূ।
(আর-রাহমান) পরম করুণাময়, অতন্ত করুণাময় তিনি, তারই করুণায় অবিশ্বাসিরা বেঁচে আছে। যারা আল্লাহকে অস্বিকার করে।
(আল-ইলাহ) মা'বুদ, উপাস্য, একমাত্র তিনিই উপাসনার যোগ্য, তিনি ছাড়া কারো কাছে মাথা নত করা যাবে না।
(আল-মুগণী) অভাবমোচনকারী, হে মানুষ! কিসের অভাব আপনার? আপনার জীবনের সমস্ত চাওয়া-পাওয়া একমাত্র তিনি (আল্লাহ) পূর্ণ করতে পারেন। আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো কাছে এমন কিছু চাইতে পারেন না, যাহা আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ দিতে অক্ষম। (বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন আল-কুরআনুল কারীম)
এভাবে আমরা আল্লাহ তা'য়ালার গুণাবলী জেনে নিতে পারি।

00 সোনালী কিরণ 00
Share this article :

Post a Comment

 
Support : Creating Website | Johny Template | Mas Template
Copyright © 2011. ইসলামী কথা - All Rights Reserved
Template Created by Creating Website Published by Mas Template
Proudly powered by Premium Blogger Template