السلام عليكم

যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার (তওবা) করবে আল্লাহ তাকে সব বিপদ থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন। [আবূ দাঊদ: ১৫২০; ইবন মাজা: ৩৮১৯]

ইতিকাফের তাৎপর্য

| comments

ইসলাম রাহবানিয়াত অর্থাত্ বৈরাগ্যকে অনুমোদন করে না। কিন্তু রাহবানিয়াত মানবের স্বভাবগত বস্তু, মানব স্বভাবে এই আকাঙ্ক্ষা রয়েছে যে, আমি যাকে ভালোবাসি, তাকে অন্তরের অন্তস্থলে স্থান দিই, তার সঙ্গে নির্জনের একাগ্রতার সঙ্গে প্রাণ খুলে প্রেমালাপে লিপ্ত থাকি। এটা মানুষের স্বভাব, এ হিসেবে আল্লাহপাকের একজন প্রেমিক কামনা করতে পারে যে, আমি আমার করুণাময় প্রভুর সঙ্গে নির্জনে বসে কথোপকথন করি, অন্তরের প্রেম কাহিনী আবেগপূর্ণ হৃদয় নিয়ে আল্লাহপাকের চরণে নিবেদন করি। তাঁর দরবারে অশ্রুপাত করে নিজের ভুল-ত্রুটির ক্ষমা প্রার্থনা করি এবং নব উদ্যমে তওবার মাধ্যমে আনুগত্যের, কৃতজ্ঞতার, উপাসনার অঙ্গীকারে আবদ্ধ হই। অতএব, যেমন মানবের স্বভাব কামনাকে পরিপূর্ণভাবে স্বাধীনতা দেয়া যায় না, তেমনি তার কামনাকেও পরিপূর্ণভাবে বিসর্জন দেয়া শরিয়তের বিধান নয়। তাই আল্লাহপাক মানবকে ইতিকাফের মাধ্যমে তার স্বভাব সিদ্ধির সুযোগ প্রদান করেছেন। যাতে মানব ইতিকাফের মাধ্যমে আপন প্রভুর দুয়ারে মনের গুপ্ত কাহিনী ব্যক্ত করে নিজেকে ধন্য করতে সক্ষম হয় এবং মানবকুলের সেরা হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইতিকাফ করে তাঁর আদবগুলোর পরিপূর্ণ তালিম দিয়েছেন, যাতে মানব স্বভাব সিদ্ধির কামনায় গোস্তাখি ও বেয়াদবি করে ইতিকাফের ফায়েজ ও বরকত থেকে মাহরুম (বঞ্চিত) না হয়ে যায়।

ইতিকাফের পরিচয়ঃ ইতিকাফের অভিধানগত অর্থ ‘কোনো স্থানে নিজেকে বেষ্টিত করে রাখা।’ ইসলামের পরিভাষায় পুরুষ লোকের জন্য আল্লাহর স্মরণার্থে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশ মোতাবেক নামাজে পাঞ্জেগানা বা জুমার মসজিদে এবং স্ত্রীলোকের জন্য আপন গৃহে নামাজের স্থানে অবস্থান করার নাম ইতিকাফ। কোরআনে কারিম এবং হাদিসের বিভিন্ন স্থানে ইতিকাফের কথা উল্লেখ রয়েছে।

ইতিকাফ সুন্নাতে কেফায়াঃ আল্লামা শামী বলেন, ইতিকাফ সুন্নতে মুয়াক্কাদা। এর ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন : ইতিকাফ সুন্নতে কেফায়া, সুতরাং যেমন ফরজে কেফায়া এবং ওয়াজিবে কেফায়ার হুকুম, ঠিক সুন্নতে কেফায়ার হুকুম তা-ই হবে, যদি কেউ এই সুন্নতে কেফায়া আদায় না করে, তাহলে সবাই গোনাহগার হবে, আর যদি এক-দুজনে আদায় করে নেয়, তাহলে তা সবার পক্ষ থেকে আদায় হয়ে যাবে। আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মীরি বলেন, ইতিকাফ সুন্নতে মুয়াক্কাদা কেফায়া, তবে ইতিকাফের মানত করলে ওয়াজিব হয়ে যায়, আর মানত অন্তরে নিয়ত করলেই হবে না বরং মুখে উচ্চারণ করলে গৃহীত হবে। (৮০)

ইতিকাফের প্রকারভেদঃ ইতিকাফ তিন প্রকার— ওয়াজিব, সুন্নতে মুয়াক্কাদা কেফায়া, মুস্তাহাব বা নফল।

১. ওয়াজিব ইতিকাফঃ মানতের ইতিকাফ আদায় করা ওয়াজিব, যেমন যদি কোনো ব্যক্তি বলে, আমি যদি পরীক্ষায় পাস করতে পারি, তাহলে ইতিকাফ করব। একে মানতের ইতিকাফ বলে। এটা আদায় করা ওয়াজিব। আদায় না করলে গোনাহগার হবে।

২. সুন্নতে কেফায়াঃ রমজান মাসের শেষ দশ দিন ইতিকাফ করা সুন্নতে কেফায়া। কেননা, রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বদাই এই দিনগুলোতে ইতিকাফ করতেন এবং সাহাবাদের এই দিনগুলোতে ইতিকাফের জন্য অনুপ্রাণিত করতেন।

৩. নফল ইতিকাফঃ রমজান মাসের শেষ দশ দিন ছাড়া বছরের যে কোনো দিন ইতিকাফ করা, রমজানের প্রথম তারিখ থেকে বিশ তারিখ পর্যন্তও এই নফল ইতিকাফ করা যায়।

ইতিকাফের সময়ঃ (ক) নফল অথবা মুস্তাহাব ইতিকাফের জন্য মসজিদে কত সময় অবস্থান জরুরি? এ সম্পর্কে ‘তানবিরুল আবছারে’ বলা হয়েছে, নফল ইতিকাফ সামান্য মুহূর্তের জন্যও হতে পারে। (৮১) অর্থাত্ যদি কেউ এক মিনিট বা আধা মিনিটের জন্য মসজিদে ইতিকাফের নিয়তে অবস্থান, দাঁড়িয়ে অথবা বসে থাকে, তাহলে ওই সময়টুকু ইতিকাফে পরিগণিত হইবে। এ কারণেই আলেমরা লিখেছেন, নামাজের জন্য মসজিদে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে ইতিকাফের ছাওয়াবের অধিকারী হয়ে যাবে।

(খ) ইতিকাফের অধিক সময়ের কোনো সীমা নেই। কোনো ব্যক্তির ইচ্ছা হলে সারা জীবন ইতিকাফে কাটাতে পারে, কিন্তু যেমন ছাওমে বেছাল ইফতার না করে অনবরত রোজা রাখা এবং ছাওমে দহর অর্থাত্ সারা বছর রোজা রাখা ইসলামী দৃষ্টিতে অপছন্দনীয়, তেমনিভাবে জাগতিক সবকিছু বর্জন করে পরিবার-পরিজনের দায়-দায়িত্ব ছেড়ে সারা বছর ইতিকাফ মৌলিক চাহিদারও বিরোধী। তবে জীবনের যে কোনো অংশে যদি কোনো ব্যক্তি একাধারে কিছু অধিক সময় ইতিকাফ পালন করতে চায়, আর এতে পরিবার-পরিজনের অথবা অন্যদের হক এবং প্রয়োজনীয় কাজকর্মের অসুবিধা না হয়, তাহলে এর অবকাশ অবশ্যই আছে।

(গ) সুন্নতে কেফায়া ইতিকাফ কেবল রমজান মাসের শেষ দশ দিনে করতে হয়, অন্য সময় হয় না। আল্লামা বিননুরী বলেন, তিন প্রকারের দ্বিতীয় প্রকার হইল) সুন্নতে কেফায়া রমজানের শেষ দশকে আদায় করতে হয়। (৮২) এ ইতিকাফ নয় দিনেরও হতে পারে। কারণ, অনেক সময় ২৯ দিনে রমজানের মাস হয়। সুন্নতে কেফায়া ইতিকাফের সময় এর কম-বেশি হতে পারে না।

(ঘ) ওয়াজিব ইতিকাফের জন্য ন্যূনতম সময় হলো একদিন, এর চেয়ে কম সময়ের জন্য ইতিকাফের মানত হয় না। অধিক যত দিনের মনে চায়, তত দিনের মানত করা যায়। কিন্তু যেসব দিনে রোজা রাখা নিষেধ ওইসব দিনে ইতিকাফের মানত করা জায়েজ নয়, কারণ মানতের ইতিকাফের সময় রোজাও রাখতে হয়। কেননা, রোজা ছাড়া মানতের ইতিকাফ আদায় হয় না । (৮৩)

সৌজন্যে: আমার দেশের ,
লেখকঃ মাওলানা মাহমুদুল হাসান, প্রিন্সিপাল, যাত্রাবাড়ী মাদরাসা; খতিব, গুলশান সেন্ট্রাল মসজিদ
Share this article :

Post a Comment

 
Support : Creating Website | Johny Template | Mas Template
Copyright © 2011. ইসলামী কথা - All Rights Reserved
Template Created by Creating Website Published by Mas Template
Proudly powered by Premium Blogger Template