السلام عليكم

যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার (তওবা) করবে আল্লাহ তাকে সব বিপদ থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন। [আবূ দাঊদ: ১৫২০; ইবন মাজা: ৩৮১৯]

নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় ইসলাম

| comments

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম'কে রসূল হিসেবে প্রেরণ করেন এবং তার মাধ্যমেই ইসলামের পরিপূর্ণতা সাধন করেন। নারীদের নিয়ে এ সকল মনুষ্যত্বহীন কার্যকলাপের বিরুদ্ধে ইসলাম সোচ্চার হয়ে উঠে এবং এ সকল অবহেলিত, লাঞ্ছিত, বঞ্চিত, নিপীড়িত, অসহায়, নি:স্ব নারীদেরকে একমাত্র ইসলামই মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করে। মূলত ইসলাম নারী জাতিকে এক করুণ অমানবিক অবস্থা থেকে উদ্ধার করে তাদেরকে মানুষ হিসাবে যথাযোগ্য অধিকার এবং সম্মানজনক মর্যাদা নিশ্চিত করে। পবিত্র কুরআন মাজীদে নারীদের অধিকার ও মর্যাদা সম্পর্কে বলা হয়েছে,"আর পুরুষদের যেমন স্ত্রীদের ওপর অধিকার রয়েছে, তেমনিভাবে স্ত্রীদেরও নিয়ম অনুযায়ী পুরুষদের ওপর অধিকার রয়েছে। আর নারীদের ওপর পুরুষদের শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে। আর আলস্নাহ হচ্ছে পরাক্রমশালী, বিজ্ঞ।" (সুরা আল-বাকারা, আয়াত নং-২২৮)

একমাত্র ইসলামই মাতা, কন্যা, স্ত্রী প্রভৃতি হিসাবে নারীদেরকে বিশেষ মর্যাদা ও অধিকার প্রদান করেছে। নারীর প্রথম পরিচয় সে পিতা-মাতার কন্যা। কিন্তু কন্যা হিসাবে ইসলাম-পূর্ব যুগে তার কোন মর্যাদাই ছিল না। আরবে তো লজ্জা-শরমে, মনের কষ্টে কন্যাশিশুদেরকে জীবন্ত কবর দেয়া হতো। তাছাড়া পৃথিবীর সর্বত্রই কন্যাসন্তান হলে পরিবারের সকলের মুখ কালো হয়ে যেতো। এ সম্পর্কে পবিত্র কুরআন মাজীদে বলা হয়েছে-"যখন তাদের কন্যা সন্তানের সুসংবাদ দেয়া হয়, তখন তাদের মুখ কালো হয়ে যায় এবং অসহ্য মনোস্তাপে ক্লিষ্ট হতে থাকে। তাকে শোনানো সুসংবাদের দুঃখে সে লোকদের কাছ থেকে মুখ লুকিয়ে থাকে। সে ভাবে, অপমান সহ্য করে তাকে থাকতে দেবে, না তাকে মাটির নিচে পুঁতে ফেলবে। শুনে রাখো, তাদের ফায়সালা খুবই নিকৃষ্ট।" (সূরা আন-নাহল, আয়াত নং-৫৮-৫৯)

এ আয়াতে কারীমা দ্বারা স্পষ্ট বুঝা যায় যে, কন্যাসন্তান জন্মগ্রহণ করলে খুশি হওয়া উচিত। হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, ''যখন কন্যাসন্তান ভূমিষ্ঠ হয় তখন আলস্নাহপাক ফেরেশতাদের প্রেরণ করেন। তারা এসে বলে-পরিবারের সকলের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। অতঃপর তারা তাদের বাহু দিয়ে কন্যাসন্তানটিকে আবেষ্টন করে এবং তার মাথায় হাত রেখে বলে- এক অবলা হতে আর এক অবলা বের হয়েছে। যে ব্যক্তি এর রক্ষণাবেক্ষণে মনোযোগী হবে সে কেয়ামত পর্যন্ত সাহায্য পাবে।"

রসূলে করীম (সা:) বলেছেন, কারো কন্যাসন্তান ভূমিষ্ঠ হলে সে যদি তাকে পুঁতে না ফেলে, তাকে যদি সে অপমানিত না করে এবং তাকে উপেক্ষা করে যদি সে পুত্রসন্তানের পক্ষপাতিত্ব না করে, তাহলে আল্লাহপাক তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।'' (আবু দাউদ শরীফ) স্ত্রী হিসাবেও ইসলাম নারীর অধিকার সংরক্ষণ করেছে। পবিত্র কোরআন মাজীদে বলা হয়েছে ''তারা তোমাদের পরিচ্ছদ এবং তোমরাও তাদের পরিচ্ছদ।" (সূরা আল-বাকারা, আয়াত নং ১৮৭)

ইসলাম বিবাহের ব্যাপারে সুস্পষ্ট বিধান প্রদান করেছে। বহুবিবাহ প্রথাকে নস্যাৎ করার জন্য চারজন পর্যন্ত স্ত্রী গ্রহণের অনুমতি দেয়া হলেও সে ক্ষেত্রে কতিপয় শর্ত আরোপ করা হয়েছে। যার কারণে ইচ্ছা করলেই একাধিক স্ত্রী গ্রহণের প্রবণতা রোধ হয়ে যায়। প্রত্যেক স্ত্রীর ওপর সুবিচার করার ক্ষমতা ও সামর্থ্য না থাকলে একটি বিয়ে করার নির্দেশ জারি রাখা হয়েছে। এ ব্যাপারে পবিত্র কুরআনে হাকীমে বলা হয়েছে-''বিয়ে করবে তোমাদের পছন্দমতো দুই, তিন কিংবা চার নারীকে। আর যদি এরূপ আশঙ্কা করো যে, তাদের মধ্যে ন্যায়সঙ্গত আচরণ বজায় রাখতে পারবে না, তবে একজনকে" নিয়েই সন্তুষ্ট থাকবে (সূরা আন-নিসা, আয়াত নং-৩)

স্বামী-স্ত্রীর বিবাহ বিচ্ছেদকে ইসলাম নিরুৎসাহিত করেছে। মহানবী (সা:) বলেছেন, একটি জিনিস শরীয়তে জায়েজ হলেও আল্লাহ তায়ালা পছন্দ করেন না। আর তা হচ্ছে তালাক।" তাছাড়া তালাক এড়ানোর পরামর্শ দিয়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন- ''যদি তাদের (স্বামী-স্ত্রীর) মধ্যে সম্পর্কচ্ছেদ হওয়ার মতো পরিস্থিতিরই আশঙ্কা করো, তবে স্বামীর পরিবার থেকে একজন এবং স্ত্রীর পরিবার থেকে একজন বিচারক নিযুক্ত করবে। তারা উভয়েই মীমাংসা চাইলে আল্লাহ পাক তাদের মধ্যে অনুকূল অবস্থা সৃষ্টি করবেন। নিশ্চয়ই আলস্নাহ সর্বজ্ঞ, সবকিছু অবহিত।" (সূরা আন-নিসা, আয়াত নং -৩৫)

নারীরা হচ্ছে মায়ের জাতি। মায়ের মর্যাদা সম্পর্কে মহানবী (সা:) বলেছেন, ''মায়ের পদতলে সন্তানের জান্নাত।" একজন সাহাবী নবী করিমের (সা:) নিকট এসে তাকে জিজ্ঞাসা করলেন আমার নিকট খেদমত পাবার সবচেয়ে বেশি হকদার কে? রসূল (সা:) বললেন-তোমার মা। সাহাবী বললেন-তারপর কে? রসূল (সা:) বললেন-তোমার মা। সাহাবী বললেন-তারপর কে? রসূল (সা:) বললেন-তোমার পিতা এবং তারপর পর্যায়ক্রমে তোমার আত্মীয়-স্বজন। (বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী, আবু দাউদ শরীফ)।

রসূলে করীম (সঃ)এর আগমনের পূর্বে ধন-সম্পত্তিতে নারীদের কোন উত্তরাধিকার স্বত্ব স্বীকৃত ছিল না। ইসলামই মৃতের পরিত্যক্ত সম্পত্তির হকদার পুরুষের পাশাপাশি নারীকেও প্রদান করে। পবিত্র আল-কুরআনুল কারীমে বলা হয়েছে-"পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে পুরুষদেরও অংশ আছে এবং পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনদের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে নারীদেরও অংশ আছে। অল্প হোক কিংবা বেশী হোক, এ অংশ নির্ধারিত।" (সূরা আন-নিসা, আয়াত নং-৭)

-মুহাম্মদ ছফিউলস্নাহ হাশেমী
Share this article :

Post a Comment

 
Support : Creating Website | Johny Template | Mas Template
Copyright © 2011. ইসলামী কথা - All Rights Reserved
Template Created by Creating Website Published by Mas Template
Proudly powered by Premium Blogger Template