السلام عليكم

যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার (তওবা) করবে আল্লাহ তাকে সব বিপদ থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন। [আবূ দাঊদ: ১৫২০; ইবন মাজা: ৩৮১৯]

রসূল (স.) এর মাদানী জীবন

| comments

পৃথিবীর ইতিহাস পর্যালোচনা করলে আমরা দেখতে পাই যে, এই ধরাধমে নানারকমের সংস্কারক, দার্শনিক, চিন্তাবিদ, দিগ্বিজয়ী বীর, দোর্দণ্ড প্রতাপশীল বিপস্নবী নেতা, মহাবীর ইত্যাদি জাতীয় ব্যক্তিত্ব পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়েছেন। তাদের একেকজনের কৃতিত্ব তাঁর সময়ে হয়তবা কিছু সাড়া জাগিয়েছিল। কিংবা তদানীন্তন মানবগোষ্ঠীকে আলোড়িত করেছিল। তাদের শিক্ষা ও রেখে যাওয়া কর্ীতি এবং অবদান পৃথিবীতে পূর্ণাঙ্গ কল্যাণ কিংবা স্থায়ী সুফল বয়ে আনতে পারেনি। কিংবা তাঁদের সংস্কারের ফলে একটি জাতিকে বদলে দিতে পারেনি।

কিন্তু পৃথিবীর রঙ্গমঞ্চে আমরা একজন মহামানবকে দেখতে পাই। যিনি সমাজকে আমূল পরিবর্তন করে পরিবর্তনের ধারা অব্যাহত রেখে মানুষের মন, মগজ, চিন্তাধারা, দৃষ্টিভঙ্গি, রীতিনীতি, অভ্যাস ইত্যাদির মধ্যে একটি বৈপস্নবিক পরিবর্তন আনয়ন করতে সক্ষম হয়েছেন। তিনি আর কেউ নন বিশ্বমানবতার মুক্তিদূত, খাতেমুন নবীয়্যীন হযরত মুহাম্মদ (স.)। তাঁর এই পরিবর্তনের ধারা যুগ যুগ ধরে মানব ইতিহাসের বিভিন্ন সভ্যতার মাঝে অনুপ্রবেশ ঘটল। বিশেষ করে যে সামাজের লোক এক আলস্নাহর ওপর বিশ্বাসী, যাঁরা হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর রিসালাতকে স্বীকার করে এবং আখেরাতকে বিশ্বাস করে তাদের সমাজে রাসূলের (স.)-এর আদর্শ কালজয়ী হয়ে রইল। সত্যিকারভাবে যারা আলস্নাহর একত্ববাদের ওপর অটল বিশ্বাস রাখে এবং তদীয় রাসূল (স.)-এর জীবনাদর্শকে জীবনের একমাত্র অবলম্বন বলে মেনে নিয়েছে তারাই প্রকৃত সফলতার দ্বারপ্রান্তে দণ্ডায়মান।

প্রকৃতপক্ষে এই বাইয়াতকে ইসলামী রাষ্ট্রের ভিত্তিপ্রস্তর বলা যায়। এভাবে যখন মদিনায় একটি অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হল তখন রসূল (স.) এর মদিনায় ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আগ্রহ ও উৎসাহ বেড়ে গেল। তিনি মদিনায় এসে প্রথম যে কাজটি হাতে নিলেন তা হচ্ছে মসজিদ নির্মাণ। জমি ক্রয় এরপর মসজিদে নববীর ভিত্তি স্থাপিত হল। পরবতর্ীকালে এই মসজিদই ইসলামী রাষ্ট্রের সভ্যতার কেন্দ্র ও উৎস হিসেবেই গড়ে তোলা হয়েছিল। মদিনায় রসূলূলস্নাহ (স.) এর আগমনের সাথে সাথে আপনা-আপনি দাওয়াত সমপ্রসারিত হতে লাগলো। কারণ যে সমন্ত মুহাজির মক্কা থেকে হিজরত করে এসেছিলেন তাদেরকে মদিনাবাসীরা যেভাবে সাহায্য ও সহযোগিতা করেছিলেন ইতিহাসে তার দৃষ্টান্ত বিরল। মোহাজের ভাইদের প্রতি আনসাদের ভালবাসা, সরল-সহজ আন্তরিকতা ও আত্মত্যাগের পরিচয়ও এতে পাওয়া যায়। আবার পক্ষে মুহাজেররাও আনসাদের কাছ থেকে কোনরকম বাড়তি সুবিধা গ্রহণ করেননি।

রসূলূলস্নাহ (স.) মদিনায় এসে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য মদিনার ইহুদি মুশরিক ও মুসলমানদের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠায় মনোনিবেশ করেন। রাজনৈতিক ধরনের সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য উদ্দেশ্যে একটা লিখিত চুক্তিনামা তৈরি করা হয়। যা একটি লিখিত সংবিধানের মত ছিল। এই চুক্তিনামাটি মদিনার সনদ যাকে যথার্থভাবেই পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম লিখিত সংবিধান বলে অভিহিত করা হয়। ইহুদীদের সঙ্গে এই চুক্তি সম্পাদিত হওয়ার পর মদিনা এবং তার আশপাশের এলাকা নিয়ে একটি রাষ্ট্র গঠিত হয়। এই রাষ্র্বের রাজধানী ছিল মদিনা। রসূলূলস্নাহ (স.) ছিলেন সেই রাষ্ট্রের মহানায়ক। এমনি করে মদিনা ইসলামী রাষ্ট্রের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হল। শান্তি ও স্থিতিশীলতার স্বার্থে নবী (স.) পরবতর্ী সময়ে অন্যান্য গোত্রের সাথেও একইরকমের চুক্তি করেন। কারণ মদিনার অবস্থান ও তার পরিবেশগত উপযোগিতাকে কাজে লাগাতে হলে তার সমগ্র জনশক্তিকে একটা শৃঙ্খলার মধ্যে আনা অপরিহার্য ছিল। এই উদ্দেশ্য রাসূল (স.) ইহুদী আওস ও যুবরাজ ও অন্যান্য গোত্রকে তাদের ধমর্ীয় সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক ভেদাভেদ সত্ত্বেও একটা শৃঙ্খলার ্আওতায় এনে ফেললেন।

এদিকে রসূলূলস্নাহ (স.) মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করার পরও মক্কার কুরাইশদের শত্রুতার রেশ থেমে যায়নি। তারা মদিনায় অবস্থানরত আনসাদের নেতা আদুলস্নাহ ইবনে উবাইর সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করল এবং রাসূলুলস্নাহ (স.) কে মদিনা থেকে বের করে দেয়ার জন্য হুমকি প্রদান করতে লাগল। আবদুলস্নাহ ইবনে উবাইও রাসূলূলস্নাহ (স.) এর উপর রুষ্ট ছিল। কারণ তিনি মদিনায় না আসলে মদীনার রাজমুকুট তার মাথায় শোভা পেত। কাজেই আবদুলস্নাহ ইবনে উবাই-এর শত্রুতার ভাব বেড়েই গেল। অপরদিকে মক্কার কুরাইশ নেতৃবৃন্দ তাদের বিরোধিতার জের চালিয়েই যাচ্ছিল। যার ফলশ্রুতিতে শেষ পর্যন্ত মুসলমানদেরকে আত্মরক্ষামূলক যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হল। তাদেরকে প্রথমে গোযওয়া ও ছারিয়ায় মদিনায় যেয়ে একটি ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠর মাধ্যমে প্রমাণ করলেন যে, মাত্র ১০ বছর সময়ের মধ্যে কিভাবে একটি সমাজের বৈপস্নবিক পরিবর্তন আনয়ন করে একটি সুখী-সমৃদ্ধিশালী সমাজ বিনির্মাণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন।

আরবের অভিশাপ সুদ প্রথা বিলোপ করে যাকাতভিত্তিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা কায়েম করে তিনি প্রমাণ করেছিলেন যে, তিনি কত বড় অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবর্তক। এসবই সম্ভব হয়েছিল একমাত্র এই কারণে যে, তিনি সরাসরি আলস্নাহ তাবারাকার দেয়া নির্দেশিকা মত তাঁর সকল কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতেন। তাই আমরা দেখি আলস্নাহ তা'আলা আল কুরআনের সর্বশেষ আয়াতে ঘোষণা করেছেন।

"আজ আমি তোমার জন্য আমার দীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম এবং তোমার ওপর আমার নেয়ামতসমূহ সমাপ্ত করে দিলাম এবং ইসলামকে একমাত্র জীবন ব্যবস্থা হিসেবে দিয়ে আমি সন্তুষ্ট হলাম।" আর তাঁর প্রিয় নবী তার ২৩ বছরের নবুওয়াতী জিন্দেগিতে তাঁর এই মিশন পূর্ণ করে বিদায় হাজ্জের বাণীতে ঘোষণা করলেন, "আজ আমি তোমাদের জন্য দ'ুটো জিনিস রেখে যাচ্ছি। একটি হচ্ছে আলস্নাহর কিতাব (আল কুরআন) আর অপরটি হচ্ছে আমার সুন্নাত (সহীহ হাদীসসমূহ) তোমরা যতদিন পর্যন্ত এ দু'টো জিনিস অাঁকড়ে ধরে থাকবে ততদিন পর্যন্ত তোমরা বিভ্রান্ত হবে না। তাই আসুন, আমরা দ্বিধাহীন চিত্তে রসূলূলস্নাহ (স.) এর বিদায়ী এই হিদায়েতকে গ্রহণ করি সেরাতে মুস্তাকীমের পথকে অাঁকড়ে ধরি। না হলে আমাদের নামায, রোযা, হাজ্জ, যাকাত সব বরবাদ হয়ে যাবে। আলস্নাহ আমাদেরকে সব বিভ্রান্তি থেকে মুক্ত হয়ে আলস্নাহর কালাম ও তদীয় রসূলের বাণী অনুযায়ী জীবন গড়ার তাওফীক দান করুন, আমীন!

-অধ্যাপক মীর আব্দুল ওয়াহ্হাব লাবীব
Share this article :

Post a Comment

 
Support : Creating Website | Johny Template | Mas Template
Copyright © 2011. ইসলামী কথা - All Rights Reserved
Template Created by Creating Website Published by Mas Template
Proudly powered by Premium Blogger Template