السلام عليكم

যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার (তওবা) করবে আল্লাহ তাকে সব বিপদ থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন। [আবূ দাঊদ: ১৫২০; ইবন মাজা: ৩৮১৯]

রসূল (স.)-এর আদর্শের অনুসরণই শান্তিময় পৃথিবী উপহার দিতে পারে

| comments

প্রশ্ন: প্রতি বছরের মত এবারও পবিত্র মিলাদুন্নবী (স.) আমাদের মাঝে রসূল প্রেমের বার্তা নিয়ে হাজির। এ ব্যাপারে আপনার অনুভূতি কি?

উত্তর: একটি গজলে আছে "রবিউল আওয়াল এলে তোমারী গান গাই, রবিউল আওয়াল গেলে তোমায় ভুলে যাই" মূলত: রবিউল আওয়াল মাস রসূলের (স.)- জন্ম ও ওফাতের মাস বিধায় এ মাস আগমন করলে প্রতিবছরই মুমিন হূদয়ে আনন্দের হিলেস্নাল প্রবাহিত হয় ও শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করে। তবে এ মাসই যে 'কেবল রসুলের প্রেমে নিবেদন করতে হবে তা কিন্তু নয়, সারা বছর সারা জীবনের জন্য রসূলের প্রেমে নিজেকে সমর্পণ করাই রসূলের খাঁটি উন্মতের পরিচয়। আমরা মিলাদুন্নবী (স.) কে স্বাগতম জানাই। কারণ এ মাসে নতুন করে শপথ নিয়ে ঈমানকে উজ্জীবিত করার অনুপ্রেরণা নিহিত।

প্রশ্ন: রসূল (স.) বলেন, আমি আমার পিতা ইব্রাহিম (আ.)-এর দোয়া, হযরত ঈসা (আ.)-এর ভবিষ্যৎ বাণী এবং আমার মায়ের সত্য স্বপ্নের ব্যাখ্যা। এই কথাটি বিশেস্নষণ করবেন কি?

উত্তর: হযরত ইব্রাহিম (আ.) মহানবী (স.)-এর জন্য আলস্নাহতায়ালার কাছে দোয়া করেছিলেন, হে আলস্নাহ! আমার কওমে আপনি এমন একজন নবী পাঠান যিনি আপনার আয়াতগুলো তেলাওয়াত করে শোনাবে। তাদেরকে কিতাব ও হেকমাত শিক্ষা দিবে। তাদেরকে পরিশুদ্ধ করবে। এটা আলস্নাহতায়ালা কবুল করেন। হযরত ঈসা (আ.)-এর উপর নাযিলকৃত ইঞ্জিল কেতাবে আছে-ঈসা(আ.) তাঁর জাতিকে বলেছিলেন, "মিম বা'আদি ইসমুহু আহমাদ," আমার পরে একজন নবী আছেন, যার নাম আহমাদ। এছাড়া রসুল (স.)-এর মা একদিন স্বপ্নে দেখলেন যে, তাঁর পেট হতে একটি আলোকরশ্মি বের হয়ে সিরিয়ার প্রাসাদগুলো আলোকিত করে ফেলেছে। এগুলির ব্যাখ্যাই হলো রসুল (স.)-এর নবী হিসেবে পৃথিবীতে আগমন।

প্রশ্ন: প্রত্যেক শিশু তার মায়ের দুগ্ধ পান করে। কিন্তু তিনদিন পর হতে মহানবী (স.) বনি সা'দ গোত্রের হালিমাতুস সাদিয়া (রা.)-এর দুগ্ধ পান করলেন কেন?

উত্তর: মক্কার প্রথা অনুযায়ী তাকে হালিমার (রা.) দুগ্ধ পান করতে হয়েছে। হালিমা (রা.)-এর কাছে ৬ বছর লালিত পালিত হন। সে সময় তিনি হালিমা (রা.)-এর ডান পাশের স্তন পান করতেন, অন্যটি দুধবোন হযরত সায়মা (রা.)-এর জন্য রেখে দিতেন। শিশুবেলা হতেই তিনি ইনসাফের কেমন মূর্ত প্রতীক ছিলেন এখানেই তার প্রমাণ পাওয়া যায়।

প্রশ্ন: শিশুবেলা হতেই মহানবীর মাঝে নবীসুলভ ভাবগাম্ভীর্য পরিদৃষ্ট হতো। এ বিষয়ে আপনার অভিমত কি?

উত্তর: ছোট বেলা হতেই মহানবী (স.)-এর মধ্যে নবীসুলভ অনেক অবস্থা গোচরীভূত হতো। যেমন তিনি সব সময় থাকতেন সৌম্যশান্ত, ধীরস্থির, ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ। অহেতুক কথা বলতেন না। অন্য শিশুদের মত দৌড়-ঝাঁপ, চেঁচামেচি ইত্যাদি করতেন না।

প্রশ্ন: কি কারণে "হিলফুল ফুযুল" গঠিত হয়েছিল? মহানবী (স.) কেন এই সংগঠনে যোগ দিয়েছিলেন?

উত্তর: ফজল নামক এক ব্যক্তি এই সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। মহানবী (স.) কিশোর অবস্থায় তার চাচা আব্বাসের সাথে হরবুল ফুজ্জার যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে বিজয়ী হয়েছিলেন। যুদ্ধ শেষ করে ভাবলেন যে, সমাজ থেকে যুদ্ধবিগ্রহ বন্ধ করতে হলে একা একা সম্ভব নয়। সে কারণে তিনি এমন একটি সংঘবদ্ধ সংগঠনের কথা ভাবছিলেন। যারা সমাজ থেকে যুদ্ধবিগ্রহ, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি, লুটতরাজ, জেনা, ব্যভিচার বন্ধ করার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। হিলফুল ফুযুলের শপথনামায় এসব কথাগুলোর সনি্নবেশ ঘটায় মহানবী (স.) অবিলম্বে এই সংগঠনের সদস্য হয়ে তাবত অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। কিন্তু আশাতীত সফুল পাওয়া সম্ভব হয়নি।

প্রশ্ন: মহানবী (স.)-এর সঙ্গে হযরত খাদিজা (রা.)-এর যখন বিবাহ সংঘটিত হয় তখন মুহাম্মদ (স.)-এর বয়স তাঁর চেয়ে ১৫ বছর কম। এ বিয়ের প্রেক্ষাপট সম্পর্কে কিছু বলুন।

উত্তর: রসূল (স.)-এর যশখ্যাতি সেই বাল্যকাল হতেই সবার মুখে মুখে ছিল। সে সময় তিনি আল আমিন, আস সাদিক উপাধী পেয়েছিলেন। মক্কায় যদি একজন ব্যক্তিকে বিশ্বাস করা যায় তিনি ছিলেন মুহাম্মদ (স.)। হযরত খাদিজা (রা.)-এর পিতা খুয়াইলিদের ইন্তেকালের পর হতে তিনি তাঁর ব্যবসা দেখার জন্য একজন বিশ্বস্ত লোক খুঁজছিলেন। অবশেষে মহানবী (স.)-ব্যবসায়ে নিয়োগ এবং তাঁর কাজে মুগ্ধ হয়ে দাসী নফিসা কতর্ৃক বিবাহের প্রস্তাব। রসূল (স.) চাচা আবু তালিবের পরামর্শে এই বিবাহে সম্মতি জ্ঞাপন করেন। তখন রসুল (স.)-এর বয়স ২৫ বছর। খাদিজা (রা.)-এর বয়স ৪০ বছর।

প্রশ্ন: মহানবী (স.) গারে হিরা থেকে প্রকম্পিত অবস্থায় ঘরে ফিরে এলেন। এর পর কখন বুঝতে পারলেন যে, তিনি আলস্নাহর নবী?

উত্তর: নবুওয়াতের পূর্বে মুহাম্মদ (স.) দীর্ঘদিন যাবৎ হিরা গুহায় ধ্যানমগ্ন অবস্থায় অতিবাহিত করেন। অবশেষে যখন তার বয়স ৪০ হয় তখন হঠাৎ একদিন জ্যোতির্ময় ফেরেশতা জিব্রাইল (আ.) তাঁর সানি্নধ্যে এলেন। ফেরেশতা তাঁর ওপর সুরা আলাকের ১-৫ আয়াত পর্যন্ত নাজিল করলেন। এরপর কাঁপতে কাঁপতে বাড়ীতে এলেন। পরের দিন সকাল বেলা খাদিজা (রা.) মহানবী (স.)কে তাওরাত বিশেষজ্ঞ ওয়ারাকা বিন নওফেলের কাছে নিয়ে যান। তিনি রসূল (স.)কে নবী হিসেবে ঘোষণা দেন এবং তাকে সকল প্রকার সাহায্যের হাত সম্প্রসারিত করার কথা ব্যক্ত করেন।

প্রশ্ন: রসূল (স.) নবুওয়াত পাওয়ার পর গোপনে তিন বছর দাওয়াত দেন। এরপর সাফা পাহাড়ে প্রকাশ্যে দাওয়াতের সময় কাফেরদের বিরোধিতার মূল কারণ কি ছিল?

উত্তর: তাদের বিরোধিতার মূল কারণ ছিল একাত্ববাদ নিয়ে। তারা মূলত: বহু ইলাহ্ এর উপর বিশ্বাসী ছিলো। বহু দেবদেবীর পূজা অর্চনা করতো। মহানবী (স.) যখন তাদের মাঝে এক ইলাহ্ এর কথা বললেন তখন শুরু হলো বিরোধিতা।

প্রশ্ন: মহানবী (স.)-এর দাওয়াত স্তব্ধ করার জন্য তারা কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল?

উত্তর: যখন অবিশ্বাসীরা দেখলো মুহাম্মদ (স.) তাদের পূর্বপুরুষদের প্রথা বিরোধী দাওয়াত শুরু করেছেন তখন এটা স্তব্ধ করার জন্য প্রথমদিকে তার চলার পথে কাঁটা বিছিয়ে রাখা হতো। নামাজরত অবস্থায় উটের নাড়িভুঁড়ি মাথায় চাপিয়ে দেয়া হতো। কবি, জাদুকর, পাগল ইত্যাদি বলে তাকে মানসিকভাবে কষ্ট-যন্ত্রণা দেওয়া হতো। এরপর নানা প্রলোভন দেখানো হয়েছিল। যেমন সুন্দরী নারী, নেতৃত্ব ও অর্থসম্পদ দিতে চাওয়া। মহানবী (স.) তাদের ঐ সমস্ত প্রস্তাবের বিপরীতে চাঁদ-সূর্য দিলেও দাওয়াত বন্ধ করবেন না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দেন।

প্রশ্ন: সিরাতুন্নবী (স.) ও মিলাদুন্নবী (স.)-এর মধ্যে পার্থক্য কি? মিলাদুন্নবী (স.)-এর সাথে ঈদ শব্দ যোগ করে ঈদে মিলাদুন্নবী (স.) বলা যাবে কি-না?

উত্তর: শাব্দিক দিক থেকে সিরাত অর্থ জীবন চরিত। আর সিরাতুন্নবী (স.) অর্থ নবী (সা.)-এর জীবন চরিত। আর মিলাদ অর্থ জন্মোৎসব বা জন্মবৃত্তান্ত। মিলাদুন্নবী (স.) অর্থ নবী (স.)-এর জন্মোৎসব বা জন্মবৃত্তান্ত। নিশ্চয় পার্থক্যটা নিরূপিত হলো। সিরাতুন্নবী (স.) বললে তাঁর সমগ্র জীবনচরিতই এর মধ্যে থেকে যায় এমনকি মিলাদুন্নবী (স.)ও এর মধ্যে রয়েছে। কিন্তু কেবলমাত্র মিলাদুন্নবী (স.) রসূল (স.) সমগ্র জীবনের একটি পার্ট বা অধ্যায়। আর ঈদ অর্থ হলো আনন্দ। যেহেতু তিনি আমাদের আদর্শ। আমাদের শাফায়াতের কান্ডারী। তার আগমন নিশ্চয় আমাদের কাছে আনন্দের বিধায় ঈদে মিলাদুন্নবী (স.) বলা হয়। তবে রসূল (স.)-এর অন্য হাদীসে যে বলা হয়েছে, 'তোমাদের জন্য আলস্নাহ দু'টি ঈদ দিয়েছেন একটি ঈদুল ফিতর অন্যটি ঈদুল আজহা। এটা ঐ ঈদের মত নয়।

প্রশ্ন: ইসলামে কারো জন্ম দিবস ও মৃতু্য দিবস বা ওফাত দিবস পালন করার বিধান আছে কি? কখন থেকে এটার প্রচলন হয়েছে?

উত্তর: ইসলামে জন্ম দিবস, ওফাত দিবস বা মৃতু্য দিবস পালন উপলক্ষে আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানাদির আয়োজন করার বিষয়টি পরিষ্কার নয়। তবে এদিনে দোয়া করা যাবে, আলস্নাহর কাছে পানাহ চাওয়া যাবে। তাছাড়া ইসলাম কোন অনুষ্ঠানসর্বস্ব ধর্ম নয় যে, অনুষ্ঠান করলেই সবকিছু পাওয়া যাবে।

প্রশ্ন: বিদায় হজ্বের নির্দেশনা মুসলিম উম্মাহর জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যমন্ডিত। এ ব্যাপারে কিছু বলুন।

উত্তর: বিদায় হজ্বের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ ছিল: 'আজ যারা এখানে উপস্থিত তারা অনুপস্থিত ব্যক্তিদের কাছে আমার কথাগুলো পেঁৗছে দেবে, যদি সেটা একটি কথাও হয়।' 'আজ থেকে সুদকে হারাম করে দেওয়া হলো।' 'তোমাদের স্ত্রীদের সাথে ভাল ব্যবহার করবে।' 'দাসত্ব প্রথা রহিত করা হলো।' তোমাদের মাঝে দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছি যা অাঁকড়ে ধরলে কখনোই প্রথভ্রষ্ট হবে না। তা হলো কুরআন ও হাদীস।

প্রশ্ন: রসূল (স.) ইন্তেকালের পূর্ব মুহূর্তে উম্মতদের জন্য কি ওছিয়াত করেছিলেন। তাঁর জানাজা কিভাবে হয়েছিল এবং কেন দাফনকার্য তিনদিন দেরী হয়েছিল?

উত্তর: ৬৩২ খ্রীষ্টাব্দের ১২ই রবিউল আওয়াল ৬৩ বছর বয়সে তিনি ইন্তেকাল করেন। ইন্তেকালের পূর্বে তিনি 'আস্সলাত, আস্সলাত, অমা মালাকাত আয়মানুকুম অর্থাৎ নামাজ', নামাজ, তোমাদের অধীনস্তদের ব্যাপারে সাবধান থেকো, এই কথা বলতে বলতে চিরনিদ্রায় শায়িত হয়ে যান। এরপর তার জানাজায়, সাহাবীরা যার যার মত আসেন এবং ভিন্ন ভিন্নভাবে নামাজ আদায় করে চলে যান। তার জানাজায় কেউ ইমামতি করেননি। কারণ তিনিই তো সকল নবী-রসূল মুত্তাকিনদের ইমাম। তাই তার ওপর ইমামতি করা কারো জন্য শোভনীয় ছিল না। দাফনক্রিয়া বিলম্ব হওয়ার কারণ হলো খেলাফত সমস্যার সমাধান হতে দেরী হওয়া।

প্রশ্ন: রসূল (স.)-এর জীবনীর ওপর প্রসিদ্ধ সিরাত গ্রন্থ কি কি?

উত্তর: আমার জানামতে, দেশী-বিদেশী কয়েকটি সিরাত গ্রন্থ আছে যেমন সিরাতে ইবনে হিশাম, সিরাতুন্নবী (স.) শিবলী নোমানী। আর রাহিকুল মাখতুম, মাওলানা ছফিউর রহমান মোবারকপুরী। মোস্তফা চরিত, মাওলানা আকরাম খাঁ। মুহাম্মদ এ্যাট মক্কা/মদীনা, মন্টোগুমারী ওয়ার্ট, বিশ্বনবী, গোলাম মোস্তফা।

প্রফেসর ড. মো.আতাউর রহমান মিয়াজী
সাক্ষাৎকার গ্রহণে-
মাওলানা জাকির হোসাইন আজাদী
Share this article :

Post a Comment

 
Support : Creating Website | Johny Template | Mas Template
Copyright © 2011. ইসলামী কথা - All Rights Reserved
Template Created by Creating Website Published by Mas Template
Proudly powered by Premium Blogger Template