আল্লাহর প্রিয় হাবিব হজরত মুহম্মদ (সা.) এই পৃথিবীতে তেষট্টি বছর হায়াত পেয়েছিলেন। এর মধ্যে কখনোই তিনি বড় ধরনের কোনো রোগব্যাধির কবলে পড়েননি। কাফের মুশরিকদের শত অত্যাচার ও নির্যাতনের মাঝেও তিনি ছিলেন হিমাদ্রির ন্যায় অবিচল। শেষ পর্যন্ত আল্লাহ তায়ালা মুহম্মদ (সা.)কে পৃথিবী থেকে উঠিয়ে নেওয়ার প্রাক্কালে রোগে আক্রান্ত করলেন। উম্মুল মু'মেনীনগণ ও সাহাবা আজমাইনগণ তাতে খুবই বিমর্ষ হয়ে পড়েছিলেন। এর আগে সফর মাসের বুধবার তিনি সুস্থতা অনুভব করলেন। তিনি আয়েশা সিদ্দিকা (রা.)কে ডেকে বললেন, বিবি আমার কাছে আসুন ও আমার কথা শুনুন। হজরত আয়েশা (রা.) দৌড়ে চলে এলেন এবং বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (সা.) আমার বাবা-মা আপনার জন্য উৎসর্গ হোক বলুন! আমাকে কি জন্য ডেকেছেন। মহানবী (সা.) বললেন, আয়েশা আমার মাথা ব্যথা চলে যাচ্ছে এবং আমি সুস্থতা অনুভব করছি। আপনি হাসান, হোসাইন ও মা ফাতিমাকে আমার কাছে ডেকে নিয়ে আসেন। হজরত আয়েশা (রা.) তাই করলেন। রাসূল (সা.)-এর মাথায় পানি ঢাললেন। তাকে সুন্দরভাবে গোসল করালেন। এ খবর মদিনায় সব স্থানে ছড়িয়ে পড়ল। অনেক সাহাবী এ খবর পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেলেন। কেউবা দাসমুক্ত করে দিলেন। কেউবা উট দান করলেন। কেউবা বহু দান-সাদ্কা করলেন। সাহাবিরাও অনেকে রাব্বুল আলামীনের কাছে শোকরিয়ার নামাজ ও দোয়া করলেন। এটা ছিল সফর মাসের শেষ বুধবার। এজন্য এ দিনটিকে আখেরি চাহার সোম্বা বলা হয়। আখেরি অর্থ শেষ আর চাহার সোম্বা হলো বুধবার। এটাই ছিল রাসূল (সা.)-এর সুস্থ জীবনের শেষ বুধবার। এরপর বৃহস্পতিবার হতে আবার অসুস্থ হয়ে পড়লেন। রাসূল (সা.) এর আগে তার পরম বন্ধু আল্লাহর সানি্নধ্যে পেঁৗছানোর জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছিলেন। একজন মুসাফির যেমন দূরবর্তী সফরে বের হওয়ার আগে সবার কাছে বিদায় নেন সব কিছু গুছিয়ে নেন। যা দেখে অনুভব করা যায় যে, তিনি কোনো সফরে বের হবেন। ঠিক তদ্রুপ মহানবী (সা.) তাঁর ইন্তেকালের আগেই তার বিদায় যাত্রার প্রস্তুতি দেখে নিকটতম সাহাবিরা অনুভব করতে পেরেছিলেন যে, রাসূল (সা.) বোধ হয় আমাদের মাঝে আর বেশিদিন থাকবেন না। উদাহরণস্বরূপ রাসূল (সা.) প্রত্যেক রমজানের শেষ দশদিন ইতেকাফ পালন করলেন। প্রত্যেকবার রমজানে মহানবী (সা.)-এর কাছে জিব্রাইল (আ.) আসতেন এবং একবার কোরআন পড়ে মহানবীকে শুনাতেন। আর মহানবী (সা.)-ও কোরআন শরীফ পড়ে জিব্রাইল (আ.)কে একবার শুনাতেন। কিন্তু ইন্তেকালের বছর জিব্রাইল (আ.) রাসূল (সা.)কে দুই বার শোনালেন। রাসূল (সা.)ও জিব্রাইল (আ.)কে দুইবার শোনালেন। এরপর বিদায় হজের ভাষণের মাঝে তিনি বললেন, আজকের দিন যে সময় তোমাদের মাঝে আমি একত্রিত হয়েছি। আর হয়ত তোমাদের মাঝে আমি এখানে একত্রিত হতে পারব না।
স্মর্তব্য, আখেরি চাহার সোম্বার পরপরই রাসূল (সা.) আবারও অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং ১২ রবিউল আউয়াল তিনি ইন্তেকাল করেন।
লেখক : মাওলানা জাকির হোসাইন আজাদী; খতিব, ত্রিমোহনী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, খিলগাঁও, ঢাকা।
Post a Comment