السلام عليكم

যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার (তওবা) করবে আল্লাহ তাকে সব বিপদ থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন। [আবূ দাঊদ: ১৫২০; ইবন মাজা: ৩৮১৯]

কারবালার ঘটনা

| comments

১০ই মুহররমের সকালে একটা লাল সূর্য উঠলো রক্তিমাভ পূর্ব দিগন্তে। ফজরের নামাজের পর হযরত হুসাইন (রাঃ) তাঁর সাথীদেরকে সারিবদ্ধ করে দাঁড় করালেন। মাত্র ৩২ জন ঘোড় সওয়ার ও চলিস্নশজন পদাতিক নিয়ে গঠিত তার ক্ষুদ্র বাহিনী। ডানদিকে যুহাইর বিন কাইন এবং বামদিকে হাবীব বিন মুযাইর নিজ নিজ দলের অধিনায়ক নিযুক্ত হলেন। পতাকা দিলেন ছোট ভাই আব্বাসের হাতে। বাহিনীকে এভাবে সাজানো হলো যে, তাঁবুগুলো পেছনে রইল। আর পেছনের দিকটাকে অধিকতর নিরাপদ করার জন্য হযরত হুসাইন (রাঃ) নির্দেশ দিলেন পরীখাসদৃশ গভীর গর্তগুলোতে আগুন জ্বালিয়ে দিতে, যাতে শত্রুরা পেছন দিক দিয়ে আক্রমণ চালাতে না পারে।

ওদিকে আমর বিন সা'দ তার চার হাজারের মত সৈন্যবিশিষ্ট বিশাল বাহিনীকে ডানদিকে আমর বিন হুজ্জাজ যুবাইদ বামদিকে সিমার বিন যিল জাওশানের ঘোড়সওয়ার বাহিনীকে উরওয়া বিন কায়েস আল আহসামীর এবং পদাতিক বাহিনীকে শীস বিন রাবয়ীর অধিনায়কত্বে যুদ্ধ সাজে সজ্জিত করলো। আর পতাকাবাহী হিসেবে নিযুক্ত করলো নিজের ক্রীতদাস দাবীদকে। যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে হযরত হুসাইন (রাঃ) শত্রু বাহিনীর উদ্দেশ্যে একটা মর্মস্পশর্ী ভাষণ দিলেন। আলস্নাহর প্রশংসা ও নবীর প্রতি দরুদ পাঠান্তে তিনি বললেন-

"হে জনমন্ডলী, তাড়াহুড়ো করো না। আগে আমার কয়েকটা কথা শোন। তোমাদেরকে বুঝানোর যে অধিকার আমার রয়েছে সেটা প্রয়োগ করার সুযোগ দাও এবং আমার আগমনের কারণটাও শুনে নাও। আমার যুক্তি যদি তোমরা মেনে নাও এবং আমার প্রতি যদি সুবিচার কর, তাহলে তোমরা অত্যন্ত সৌভাগ্যশালী মানুষ বলে পরিগণিত হবে। কিন্তু সেজন্য তোমরা যদি প্রস্তুত না হও, তাহলে সেটাও তোমাদের ইচ্ছা। তোমরা সবাই মিলে সর্বশক্তি নিয়োগ করে আমার সাথে যে আচরণ করতে চাও করে নিও। আলস্নাহই আমার একমাত্র সহায়। তিনিই তার সৎ বান্দাদেরকে সাহায্য করে থাকেন।" হযরত ইমাম হুসাইনের (রাঃ) এ কথাগুলো যখন তাঁরা শুনলেন তখন দুঃখে ও মর্মবেদনায় তাদের মধ্যে কান্নার রোল পড়ে গেল। তাদের কান্নার শব্দ শুনতে পেয়ে হযরত হুসাইন (রাঃ) তার ভাই আব্বাসকে পাঠালেন তাদেরকে চুপ করতে। আর মনে মনে বললেনঃ "এখনো তো তাদের অনেক কান্না বাকী।"

কান্নার আওয়াজ থেমে গেলে তিনি পুনরায় তার অসমাপ্ত ভাষণ শুরু করলেনঃ জনমন্ডলী, তোমরা আমার বংশ পরিচয় ও মান-মর্যাদার দিকটা বিবেচনা কর যে আমি কে? নিজেদের বিবেকের কাছে জিজ্ঞেস কর, আমাকে হত্যা করা বা অপমান করা কি তোমাদের শোভা পায়? আমি কি তোমাদের নবী, নবীকুল শিরোমণি মুহাম্মদ (সাঃ)-এর দৌহিত্র এবং তাঁর চাচাতো ভাই আলীর (রাঃ) ছেলে নই? যিনি সবার আগে কিশোর বয়সেই তাঁর দাওয়াতে সাড়া দিয়ে ঈমান এনেছিলেন? শহীদদের সরদার হযরত হামজা (রাঃ) কি আমার পিতার চাচা ছিলেন না? হযরত জাফর তাইয়ার কি আমার চাচা ছিলেন না? রাসুলুলস্নাহর (সাঃ) সেই উক্তিটা কি তোমাদের মনে নেই, যাতে তিনি আমাকে ও আমার ভাই হাসানকে বেহেশতের যুবকদের নেতা বলেছেন? আমার এ বর্ণনা অকাট্য সত্য। কেননা আমি যেদিন শুনেছি, মিথ্যাবাদীর ওপর আলস্নাহ অসন্তুষ্ট হন, সেদিন থেকে আজ পর্যন্ত কখনো মিথ্যা বলিনি। আর এ কথা যখন সত্য, তখন তোমরাই বল, নগ্ন তরবারী নিয়ে আমার ওপর আক্রমণ চালানো কি তোমাদের উচিত? আর যদি আমাকে তোমরা মিথ্যাবাদী মনে কর, তাহলে এখনো তোমাদের ভেতরে এমন অনেকে জীবিত আছে, যারা আমার সম্পর্কে রাসুল (সাঃ)-এর এ হাদীস শুনেছে। তোমরা তাদের কাছে জিজ্ঞেস করতে পার। আমি তোমাদের কাছে জানতে চাই যে, এই হাদীসের উপস্থিতিতেও কি তোমরা আমার রক্ত ঝরানো থেকে বিরত থাকতে পার না?"

তারপর হযরত ইমাম হুসাইনের (রাঃ) কোন কোন সহকমর্ীও অনুরূপ ভাষণ দিলেন। কিন্তু শিমার ও তার সমমনা লোকেরা হযরত ইমাম হোসাইনের (রাঃ) সাথে যুদ্ধ করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্তই নিয়ে ফেলেছিল। কেননা যে বাহিনীর সৈন্যসংখ্যা একশোরও কম তার সাথে চার হাজার সৈন্যের লড়াই বিপক্ষকে নিশ্চিহ্ন করার এমন এক নজীরবিহীন সুবর্ণ সুযোগ, যাকে হাতছাড়া করা কোনমতেই বুদ্ধিমানের কাজ নয়। এতে হুসাইনকে (রাঃ) সবংশে খতমও করা যাবে, আবার সম্ভাব্য গণঅসন্তোষকে এই বলে ধামাচাপাও দেয়া যাবে যে, হুসাইনকে (রাঃ) সরাসরি হত্যা করা হয়নি, যুদ্ধের মাধ্যমে তাকে পরাজিত ও নিহত করা হয়েছে। তারা হযরত হুসাইনের (রাঃ) এ প্রস্তাবও প্রত্যাখ্যান করে যে, তাকে ইয়াযীদের কাছে নিয়ে যাওয়া হোক। তিনি নিজেই তার সাথে বিরোধ মিটিয়ে ফেলবেন। কেননা তিনি আশা করতেন যে, ইয়াযীদ তার প্রতি সম্মান দেখাবে। কিন্তু শিমার ও তার সমমনারা দেখলো, রাসুলুলস্নাহ (সাঃ) নাতিকে খতম করার এমন সুযোগ হয়তো আর আসবে না। উনি বেঁচে থাকলে হয়তোবা একদিন খেলাফতে অধিষ্ঠিত হয়ে যাবেন। এইসব সাত-পাঁচ ভেবে তারা স্থির করলো, কোনক্রমেই এ সুযোগ হাতছাড়া করা যাবে না। বিরোধীদের বাহিনীতে এ সময় মাত্র এক ব্যক্তি এমন ছিল যার মনে হযরত হুসাইনের (রাঃ) ভাষণ কিছুটা প্রভাব বিস্তার করেছিল। এই ব্যক্তি ছিল হুর বিন ইয়াযীদ তামীমী। এই ব্যক্তিই সর্বপ্রথম ইমাম হুসাইন (রাঃ) ও তার দলকে মক্কায় যেতে বাধা দিয়েছিল এবং কারবালার প্রান্তরে আটক করেছিল।

তখনও হযরত হুসাইন অত্যন্ত বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করছিলেন এবং বলছিলেন ঃ "ওহে কুফাবাসী, তোমরা কি আমাকে হত্যা করার ব্যাপারে ঐক্যবদ্ধ হয়ে গেলে? আলস্নাহর কসম, আমার হত্যায় আলস্নাহ যত অসন্তুষ্ট হবেন, আমার পর আর কোন বান্দার হত্যায় তত অসন্তুষ্ট হবেন না। আমাকে আলস্নাহ অবশ্যই সম্মানিত করবেন। কিন্তু তোমাদের কাছ থেকে তিনি এমন মর্মান্তিকভাবে প্রতিশোধ নেবেন, যা তোমরা ভাবতেও পারবে না।"।

অনেক সময় কেটে গেল। শত্রুরা চাইলে অনেক আগেই হযরত হুসাইনকে (রাঃ) শহীদ করে ফেলতে পারতো। কিন্তু কেউ তাঁর ওপর চূড়ান্ত আঘাত হানার গুনাহ নিজের ঘাড়ে চাপাতে চাইছিল না, প্রত্যেকে চাইছিল এ কাজটা অন্য কেউ করুক, আর নিজে তা থেকে মুক্ত থাক।

এ পরিস্থিতি দেখে সিমার পদাতিক বাহিনীর মনোবল বাড়ানোর জন্য অশ্বারোহীদেরকে দাঁড় করিয়ে দিল এবং তীরান্দাজদেরকে তীর নিক্ষেপের আদেশ দিল। সে চিৎকার করে বললো:"তোমাদের মরণ হোক, তোমরা কিসের অপেক্ষা করছ? হুসাইনকে খতম করে দিচ্ছ না কেন?" এবার চারদিক থেকে আক্রমণ শুরু করা হলো। যারয়া বিন শারীক তামিমী হযরত হুসাইনের বাম বাহুর ওপর তলোয়ার মারলো এবং বাহুটা বিচ্ছিন্ন করে ফেললো। তারপর তার কপালে তলোয়ার মারলো । তিনি এমন জোরে হেলে-দুলে উঠলেন যে, তা দেখে ভয়ে অনেকে পেছনে সরে গেল। কিন্তু সিনান বিন আনাস আশজায়ী সামনে এগিয়ে গিয়ে তার ওপর বর্শা দিয়ে আঘাত করলো। তিনি তৎক্ষণাৎ মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন। খাওলী বিন ইয়াযীদ তাঁর মাথা কাটার জন্য এগিয়ে গেল। কিন্তু সাহস পেল না। তা দেখে শিমার তিরস্কার করলো। "আলস্নাহ তোর সমস্ত শরীর অবশ করে দিক।" তারপর নিজে ঘোড়া থেকে নেমে তাকে যবাই করে এক বিভৎস দৃশ্যের অবতারণা করলো।

সংগ্রহঃ ইত্তেফাক হতে
Share this article :

Post a Comment

 
Support : Creating Website | Johny Template | Mas Template
Copyright © 2011. ইসলামী কথা - All Rights Reserved
Template Created by Creating Website Published by Mas Template
Proudly powered by Premium Blogger Template