السلام عليكم

যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার (তওবা) করবে আল্লাহ তাকে সব বিপদ থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন। [আবূ দাঊদ: ১৫২০; ইবন মাজা: ৩৮১৯]

কারবালার বিয়োগান্ত ঘটনার ঐতিহাসিক পটভূমি

| comments

মানব ইতিহাসের শুরু থেকে সত্য ও মিথ্যার সংঘাত চলে আসছে বরাবর। সত্য-মিথ্যার এই চিরন্তন দ্বন্দ্ব ও সংঘাতের চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ ছিল কারবালার শাহাদতের ঘটনা যা মুসলিম জাতিকে অনন্তকালের জন্য নিজ আদর্শ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে শক্তি, সাহস ও অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে।

চতুর্থ খলিফা হযরত আলী (রা:) তাঁর নতুন রাজধানী কুফায় শাহাদাত বরণ করলে তাঁর পুত্র নবীজির দৌহিত্র হযরত হাসান (রা:)কে কুফাবাসীরা সিংহাসনে বসালেন। কিন্তু খেলাফতে হযরত হাসানের প্রতিদ্বন্দ্বী হযরত মুয়াবিয়া (রা:) নিজকে সমগ্র মুসলিম জগতের খলিফা হিসেবে ঘোষণা করলেন এবং শেষ পর্যন্ত হযরত হাসান (রা:)-এর সাথে সন্ধির মাধ্যমে হযরত মুয়াবিয়া (রা:) খেলাফতের সম্পূর্ণ দায়িত্বভারে গ্রহণ করলেন। সন্ধির শর্তানুযায়ী মুয়াবিয়া (রা:) জীবিতকাল পর্যন্ত খলিফা থাকবেন, তাঁর মৃতু্যর পর হযরত হোসাইন (রা:) খলিফা নিবাচিত হবেন। প্রকৃতপক্ষে হযরত হাসান (রা:) মুসলমানদের মধ্যে যুদ্ধ-বিগ্রহ, দলাদলি, অনৈক্যের ও রক্তপাত এড়ানোর জন্যই মুয়াবিয়াকে (রা:) শাসক হিসাবে মেনে নিয়ে সন্ধির শর্ত গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু ইসলামের ইতিহাসে সবচেয়ে দুঃখজনক অধ্যায় ছিল হযরত মুয়াবিয়ার (রা:) সেই খেলাফতের শর্ত লংঘন-যার ফলশ্রুতিতে তিনি তার অযোগ্য পুত্রকে নিজের জীবদ্দশাতেই মনোনয়ন প্রদান করেন। পুত্রের প্রতি অন্য আকর্ষণের জন্য শেষ পর্যন্ত হযরত মুয়াবিয়াকে (রা:) ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয়। খেলাফতের পরিবর্তে তিনি শুধু বাদশাহীর দিকেই পা বাড়ালেন না; বরং উত্তরাধিকার নীতি প্রয়োগের মাধ্যমে খেলাফতের মূলধারার পরিবর্তন সাধন করলেন।

মদীনার গভর্নর মারওয়ান বিন হাকাম ৬৭৯ খৃষ্টাব্দে যখন ইয়াজিদের মনোনয়নের কথা ঘোষণা করলো তখন ইসলামের গভীর জ্ঞানসম্পন্ন কতিপয় ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তি খোলাখুলিভাবে এর বিরোধিতা করলেন। হযরত আব্দুর রহমান বিন আবু বকর সরাসরি বললেন, এটা আবু বকর এবং ওমরের সুন্নত নয় বরং এটা কাইসার ও কিসরার অনুসৃত পথ। মুহাম্মদ বিন আমর বিন হারাম বললেন-প্রত্যেক শাসক নিজের প্রজার জিম্মাদার হয়ে থাকেন। এজন্য যাকে উম্মতের শাসক বানাচ্ছেন, সে ব্যাপারে খুব ভালোভাবে চিন্তা-ভাবনা করবেন।" এভাবে আরও কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি মুয়াবিয়ার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করলেন। কিন্তু সুচতুর হযরত আমির মুয়াবিয়া (রা:) বাদীদের ভয়-ভীতি দেখিয়ে এবং কিছু লোককে দান-দক্ষিণা দিয়ে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করলেন। শেষ পর্যন্ত প্রায় সবাই ইয়াজিদের আনুগত্য স্বীকার করলেও হযরত হোসাইন বিন আলী (রা:) এবং আব্দুলস্নাহ বিন যোবায়ের ইয়াজিদের বাইয়াত গ্রহণে অসম্মতি জ্ঞাপন করেন। ইতিমধ্যে কুফার জনগণ হাজার হাজার চিঠি ও প্রতিনিধি প্রেরণ করে হযরত হোসাইনকে অনুরোধ করলোন, 'আপনি চলে আসুন'। আমরা সার্বিকভাবে প্রস্তুত রয়েছি।

হযরত হোসাইন (রাঃ) ফোরাত নদীর তীরবর্তী যাবিয়া নামক স্থানে তাঁর তাঁবু স্থাপন করলেন। অবশ্য বহুল পরিচিত কারবালা শব্দটি 'কারিবুল বালা' থেকে এনেছে। হযরত হোসাইনকে যখন ইয়াজিদের বাহিনী চতুর্দিকে ঘিরে ফেলে তখন তিনি সঙ্গী-সাথী ও পরিবারকে উদ্দেশ করে বলেছিলেন, 'কারিবুল বালা' বা তোমরা সাবধান হও! বিপদ নিকটবর্তী। এরপর থেকে কারবালা নামের উৎপত্তি। কারবালার রক্তপাত এড়ানোর জন্য ইমাম হোসাইন তিনিটি প্রস্তাব করলে কুফার গভর্নর ওবায়দুলস্নাহ কোন একটি প্রস্তাব গ্রহণ না করেই বিনা শর্তে হযরত হোসাইনকে আত্মসমর্পণের আদেশ দেয়।

হযরত হোসাইন ও তাঁর সঙ্গীর সাথীদের হত্যা করাই হয়তো ইয়াজিদের উদ্দেশ্য ছিল না। তারা ভেবেছিল ফোরাতের পানি বন্ধ করে এবং বিভিন্ন চাপের মুখে ইয়াজিদের খেলাফতের স্বীকৃতি নেয়া সম্ভব হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোন অবস্থায় চাপের মুখে হযরত হোসাইন নতি স্বীকার করলেন না। মহররম মাসের ১০ তারিখ রাত পর্যন্ত হযরত ইমাম হোসাইনকে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য সময় দেয়া হলো।

হযরত হোসাইন ইয়াজিদকে খলিফা হিসেবে স্বীকৃতি দিলে তার পরিবারের সবার জীবন নিরাপদ থাকবে বলে ইয়াজিদের বাহিনী বার বার ঘোষণাও দেয়। কিন্তু হযরত ইমাম হোসেইন (রা:) ও তার সঙ্গী সাথীরা নিরাপদ জীবনের চেয়ে আদর্শের জন্য মৃতু্যকেই শ্রেয় মনে করলেন। নবীজির প্রিয় দৌহিত্র ও তার পরিবার পরিজনবর্গ কারবালার প্রান্তরে যেভাবে নির্মমভাবে শাহাদাত বরণ করেছেন তার নজির জগতের ইতিহাসে নেই।

[লেখক: মাওলানা মুফাজ্জল হুসাইন খান, সাবেক পরিচালক, ইফাবা]
Share this article :

Post a Comment

 
Support : Creating Website | Johny Template | Mas Template
Copyright © 2011. ইসলামী কথা - All Rights Reserved
Template Created by Creating Website Published by Mas Template
Proudly powered by Premium Blogger Template