নামাজ একটি উত্তম ইসলামী ব্যায়াম, যা মানুষকে সব সময় সতেজ রাখে, অলসতা এবং অবসাদগ্রস্ততাকে শরীরে বাড়তে দেয় না। অন্যসব ধর্মের মধ্যে এমন সামগ্রিক ইবাদত আর নেই যা আদায়ের সময় মানুষের সকল অঙ্গ নড়াচড়া ও শক্তিশালী হয়। নামাজীর জন্য এটা একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্য যে, এটা একান্তই সামগ্রিক ব্যায়াম যার প্রভাব মানবের সকল অঙ্গগুলোতে পড়ে এবং সামগ্রিক মানব অঙ্গগুলোতে নড়াচড়া ও শক্তি সৃষ্টি হয় এবং স্বাস্থ্য অটুট থাকে। তুরস্কের ডাক্তার হুলুক নূর বাকী নামাজের আত্মিক দিকের ওপর অনেক গুরুত্ব দিয়েছেন, কিন্তু তিনিও এর দৈহিক উপকারিতার দিকে দৃষ্টি দেননি। এভাবে তিনি লিখেছেন-
'আজ বস্তুবাদীরাও স্বীকার করে যে, জোড়ার ব্যথা থেকে মুক্তির জন্য আজ নামাজ ব্যতীত আর কোনো ব্যবস্থাপত্র নেই।'
কেমিস্ট্রির ব্যবস্থাপত্র
নামাজের ব্যায়াম যেমন বাইরের অঙ্গ সুনিপুণ সৌন্দর্য ও বৃদ্ধির মাধ্যম, এটা তেমনি ভেতরের অঙ্গগুলো যেমন- হূদয়, পস্নীহা, জঠর, ফুসফুস, মগজ, অন্ত্র, পাকস্থলী, মেরুদন্ডের হাড়, ঘাড়, বুক এবং দেহের সকল গস্নান্ড ইত্যাদি সুদৃঢ় করে ও উন্নত করে এবং দেহের সিডিউল এবং সৌন্দর্য রক্ষা করে।
নামাজের প্রচলন যদি হতো তাহলে
কিছু রোগ এরূপও আছে যেগুলো থেকে নামাজ চালু করার দ্বারা রক্ষা পাওয়া যায়, কেননা নামাজ আদায়ের মাধ্যমে দেহে এসব রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এর ধারাবাহিকতায় ডাক্তার হাসান গজনবীর এ বাক্যগুলো চিন্তার খোরাক জোগায়। তিনি লেখেনঃ
"আমাদেরকে পাপ থেকে রক্ষা করা এবং আধ্যাত্মিকতার উচ্চ শিখরে আরোহণ করানোর সাথে সালাত আমাদের দৈহিক স্বাস্থ্য রক্ষায় বড় ধরনের সাহায্য করে। এটি আমাদের দেহকে সক্রিয় রাখে, হজমে সাহায্য করে, আমাদেরকে জড়তা ও জোড়ার রোগ থেকে নিয়মিত সুষম ব্যায়ামের দ্বারা রক্ষা করে। এটি রক্ত পরিসঞ্চালনে এবং কলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। সালাত হার্ট এ্যাটাক, প্যারালাইসিস, ডায়াবেটিস মেলিটাস ইত্যাদির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। . . . হার্টের রোগীদের প্রতিদিন বাধ্যতামূলক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা উচিত, যেমনিভাবে তারা তাদের ডাক্তারদের নিকট খারাপ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য অনুমতি লাভ করে থাকেন।" (প্রাগুক্ত)
পশ্চিমারা আজ হরেক রকমের ব্যায়াম করছেন যাতে তাদের দেহের কলেস্টেরল গড়মাত্রা সীমাতিক্রম না করে। এছাড়াও এদের দেহ সব প্রভাবশীল পন্থায় কাজ করে। তারা এ সত্যকে স্বীকার করে নিয়েছেন যে, ইসলামী নামাজ যা কোনোরূপ ব্যায়াম নয় অথচ তা নানারূপ ব্যায়ামের রূপ পরিগ্রহ করে। তা স্বাস্থ্যসম্মতও বটে। যেমন জার্মানের প্রসিদ্ধ পত্রিকা 'ডি হায়েফ'-এ প্রসিদ্ধ জার্মান মান্যবর ও প্রাচ্যবিদ জাওয়াকীম ডি জুলফ এ সত্যকে প্রকাশ করেছেন তার জবানীতে। তিনি লিখেছেন: যদি ইউরোপে ইসলামী নামাজের প্রচলন হতো তাহলে আমাদের দৈহিক ব্যায়ামের জন্য নতুন নতুন ব্যায়াম ও নড়াচড়া আবিষ্কার করার প্রয়োজন হতো না। (আল মাসালিহুল আমলিয়াহ লিল আহকামিশ শরইয়াহ পৃ. ৪০৬)
সর্বোত্তম পর্যায়ের চিকিৎসা
এক পাকিস্তানী ডাক্তার মাজেদ জামান উসমানী ইউরোপে ফিজিওথেরাপির ওপর উচ্চতর ডিগ্রী গ্রহণের জন্য গিয়েছেন। যখন সেখানে সম্পূর্ণ নামাজের ব্যায়াম পড়ালেন এবং বুঝালেন তখন তিনি এ ব্যায়াম দেখে উদ্বিগ্ন হয়ে গেলেন যে, আমরা এতদিন পর্যন্ত নামাজকে এক ধমর্ীয় আবশ্যক বলেই জানতাম এবং পড়তে থাকতাম, অথচ এখানে তো আশ্চর্য ও অজানা জিনিসের আবিষ্কার হয় যে, নামাজের মাধ্যমে বড় বড় রোগ নিরাময় হয়ে যায়।
ডাক্তার সাহেব তাকে একটি তালিকা প্রদান করেন যা নামাজের মতো ব্যায়ামের মাধ্যমে নিরাময় হয়-
১. মানসিক রোগ ২. স্নায়বিক রোগ ৩. মনস্তত্ত্ব রোগ ৪. অস্থিরতা, হতাশা ও দুশ্চিন্তা রোগ ৫. হার্টের রোগ ৬. জোড়ার রোগ ৭. ইউরিক এসিড থেকে সৃষ্ট রোগ ৮. পাকস্থলীর আলসার ৯. চিনি রোগ ১০. চোখ এবং গলা ইত্যাদির রোগ
মনস্তাত্তি্বক রোগ নামাজের মধ্যে মনস্তাত্তি্বক রোগ যেমন- গুনাহ, ভয়, নীচুতা, হতাশা, অস্থিরতা, পেরেশানি ইত্যাদিরও চিকিৎসা রয়েছে। যার বর্ণনা পুস্তকের কলেবর দীর্ঘ হওয়ার ভয়ে বাদ দিতে হচ্ছে। একই সঙ্গে নামাজ দ্বারা পূর্বোক্ত উপকারিতা ছাড়াও দৈহিক ও মেধাগত উপকারিতাও হয়। আজ ইসলামি ইবাদতের বৈজ্ঞানিক যুক্তিগুলো সামনে আসছে। নামাজের প্রত্যেকটি রুকন কোনো না কোনো চিকিৎসাগত ও মনস্তাত্তি্বক উপকারের বাহক।
ব্যায়াম ও নামাজ
নামাজের রুকনগুলো এককভাবে ব্যাখ্যা করলে তার আলোকে দেখা যায় নামাজের প্রত্যেক রুকন আদায়ের মধ্যেই বিশেষ অঙ্গ ও জোড়ার আন্দোলন সৃষ্টি হয় এবং বিশেষ অঙ্গগুলোর ব্যায়াম হয়। শরীরতত্ত্ব বিদ্যার (চযুংরড়ষড়মু) একটি মূলনীতি এই যে, যখন মানুষ নড়াচড়ার ইচ্ছে করে তখন সংশিস্নষ্ট মস্তিষ্কের কেন্দ্র থেকে নড়াচড়া স্নায়ুর মাধ্যমে সংশিস্নষ্ট অঙ্গে পৌঁছায় এবং অঙ্গগুলো স্থানভেদে সংবর্ধিত, সংকুচিত হয়ে উদ্দীষ্ট কাজ করে থাকে এবং যখন নামাজ আদায়ের শুরুতে বারবার নামাজের রুকনগুলোর পুনরাবৃত্তি ঘটে তখন এ আকার একটি ব্যায়ামের প্রকৃতি গ্রহণ করে যার দ্বারা অঙ্গ ও জোড়াগুলোর বর্ধন ও উন্নতি এবং শক্তি বৃদ্ধি পায়। এভাবে নামাজের সব রুকন আদায়ের মাধ্যমে মানবের সব অঙ্গের ব্যায়াম হয়ে যায়। যার দ্বারা মানব দেহের সতেজতা ও শক্তি বহাল থাকে এবং দৈহিক কার্যাবলি প্রাকৃতিক মাপকাঠির ওপর চলতে থাকে।
সামগ্রিক ইবাদত নামাজ একটি উত্তম ইসলামি ব্যায়াম, যা মানুষকে সর্বদা সতেজ রাখে। অলসতা ও অবসাদকে দেহের মধ্যে বাড়তে দেয় না কিন্তু অন্য কোনো ধর্মে এমন কোনো সামগ্রিক ইবাদত নেই যা আদায়ের মাধ্যমে মানুষের সব অঙ্গের নড়াচড়া ও শক্তি বৃদ্ধি পায়। এ বৈশিষ্ট্য শুধু নামাজের মধ্যেই রয়েছে যে এটা সমগ্র ইসলামের সামগ্রিক ব্যায়াম যার প্রভাব সমগ্র মানব অঙ্গের ওপর সমভাবে পড়ে এবং দেহের সব অঙ্গের নড়াচড়া ও শক্তি সৃষ্টি হয় এবং স্বাস্থ্য রক্ষিত থাকে। (ইসলামি স্বাস্থ্য বিধি, পৃ-৩৬)
কঠিন বস্তু সচল করা
নামাজ আত্মা ও দেহ উভয়ের জন্য ব্যায়াম-এ জন্য এর মধ্যে দাঁড়ানো, বসা, রুকু, সিজদা এগুলোর বিভিন্ন ধরনের নড়াচড়া হয়ে থাকে এবং নামাজী এক অবস্থা থেকে অন্য অবস্থার দিকে পরিবর্তিত হতে থাকে। এর অবস্থান, পরবর্তিত হতে থাকে ও নামাজে দেহের অধিকাংশ জোড়া নড়াচড়া করতে থাকে এবং এর সাথে বেশির ভাগ অদৃশ্য অঙ্গগুলো পাকস্থলী, অন্ত্র, শ্বাসযন্ত্র, এবং খাদ্যের অঙ্গগুলো এসবের গঠনে নড়াচড়া এবং পরিবর্তন আসে। অত:পর এ অবস্থায় কোনো কথা নিষেধকারী যে এ সব নড়াচড়ার দ্বারা কিছু অঙ্গ শক্তি অর্জন করবে এবং অপ্রয়োজনীয় আবশ্যিক জিনিসগুলো সচল না হবে? (তিব্বে নববী, পৃ.-৩৯৯)
নামাজের চিকিৎসাগত ও বৈজ্ঞানিক উপকারিতা এখন ধারাবাহিকভাবে নামাজের কিছু আরকানের চিকিৎসাগত ও বৈজ্ঞানিক উপকারিতা বর্ণনা করা হলো:
১. তাকবীরে তাহরীমা
যখন আমরা হাতগুলোকে কান পর্যন্ত উঠাই তখন বাহু, ঘাড়ের পিঠ এবং কানের পিঠের ব্যায়াম হয়ে যায়। হার্টের রোগীদের জন্য এরূপ ব্যায়াম বহু উপকারী। যখন এই ব্যায়াম নামাজীর দ্বারা নামাজ পড়ার মাধ্যমে একাকী হয়ে যায় এবং এই ব্যায়াম প্যারালাইসিসের মারাত্মক সমস্যা থেকে রক্ষা করে। নিয়ত বাঁধার সময় কনুইয়ের সামনের অঙ্গগুলো এবং কাঁধের জোড়ার অঙ্গগুলো ব্যবহূত হয় এবং এগুলোর ব্যায়াম হয়ে যায়।
মস্তিষ্কে কোটি কোটি সেল/ কোষ কাজ করে এবং কোষগুলোর মধ্যে বৈদু্যতিক প্রবাহ বেড়ে যায়। এ সব বৈদু্যতিক প্রবাহের মাধ্যমে ধারণা, অনুভূতি এবং অনুভূতির অধীনে যা কিছু আছে তা সচল থাকে। মস্তিষ্কের মধ্যে কোটি কোটি কোষের মতো গর্তও হয়, মস্তিষ্কের একটি গর্ত এরূপ আছে যার মধ্যে বৈদু্যতিক প্রবাহ ছবি নিতে থাকে এবং বিভক্ত করতে থাকে। এই ছবি খুবই কালো হয় এবং খুবই চমকদার হয়।
একটি গর্ত আছে যার মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা হয় এবং এসব গুরুত্বপূর্ণ কথার মধ্যে ঐসব কথাও হয়ে থাকে যেগুলোকে অনুভূতি দৃষ্টি ও অনুমান করতে পারে এবং যাকে আমরা আধ্যাত্মিক সংশোধন নাম দিয়ে থাকি। নামাজী যখন হাত উঠিয়ে উভয় কানের নিকট নেয় তখন এক বিশেষ বৈদু্যতিক প্রবাহ খুবই সূক্ষ্ম তাপ নিজ কনডেন্সর (ঈড়হফবহংড়ৎ) বানিয়ে মস্তিষ্কে প্রবেশ করে এবং মস্তিষ্কের মধ্যে এই গর্তের সেল/ কোষগুলোকে চার্জ করে দেয়। যাকে অনুভূতি দেখতে ও আন্দাজ করতে পারে। এই কোষগুলো চার্জ হয়ে মস্তিষ্কে আলোর ঝলকানি হয় এবং এ ঝলকানি দ্বারা সব স্নায়ু প্রভাবিত হয়ে এই গর্তের দিকে মনোযোগ দেয়, যার মধ্যে আধ্যাত্মিক সংশোধন নিহিত রয়েছে। সাথে-সাথে হাতের মধ্যে এক তেজী প্রবাহ মস্তিষ্ক থেকে স্থানান্তর হয়।
গ্রন্থনা:
মাওলানা জাকির হোসাইন আজাদী
Post a Comment