السلام عليكم

যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার (তওবা) করবে আল্লাহ তাকে সব বিপদ থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন। [আবূ দাঊদ: ১৫২০; ইবন মাজা: ৩৮১৯]

কুরবানীর গুরুত্ব তাৎপর্য ও মাহাত্ম্য

| comments

প্রতি বছরের ন্যায় এবারও আমাদের মাঝে পবিত্র ঈদুল আযহা পশুত্ব প্রবৃত্তির কুরবানী করে মনুষ্যত্বকে জাগ্রত করার সুমহান পশরা নিয়ে হাজির । প্রত্যেক সামর্থ্যবান ব্যক্তি এই কুরবানীতে অংশগ্রহণ করবেন। কেবলমাত্র পশু যবেহতেই কুরবানীর পূর্ণাঙ্গ দাবী আদায় হয় না । কেননা যারা কুরবানী করবেন তাদের জন্য অবশ্যই কিছু বিধিবিধানও মানতে হবে। নিম্নে সে সমস্ত বিষয় ও কুরবানীর গুরুত্ব, তাৎপর্য এবং মাহাত্ম্য সম্পর্কে একটি বিশেস্নষণধর্মী তাত্তি্বক আলোচনা পেশ করা হলো।

হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবী হবার পর মক্কায় তেরটি বছর কাটান। তারপর তিনি আল্লাহর নির্দেশে মদীনায় চলে যান। অতঃপর কিছুদিনের মধ্যে তিনি আল্লাহর তরফ থেকে কুরবানী দেবার আদেশ পান। এই হুকুম পাবার পর তিনি দশ বছর বেঁচেছিলেন। তাই ঐ দশ বছরই তিনি কুরবানী করতে থাকেন। যেমন হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, রসূলুল্লাহ (স.) দশ বছর মদীনায় অবস্থান করেন এবং কুরবানীও করতে থাকেন (তিরমিযী, ১ম খন্ড, ১৮২ পৃষ্ঠা, মিশকাত, ১২৯ পৃষ্ঠা।) হাফেজ ইবনুল কাইয়িম বলেন, তিনি (স.) কখনো কুরবানী ফাঁকি দেননি। (যা-দুল মাআ-দ, ১ম খন্ড, ২৪৬ পৃষ্ঠা।) উক্ত বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, কুরবানী সুন্নতে মোআক্কাদা। এটা ফরয ও ওয়াজিব নয়।

তবে কোন কোন হাদীস দ্বারা বাহ্যতঃ মনে হয় যে, কুরবানী ওয়াজিব বা অবশ্য পালনীয় কাজ। যেমন ইবনে মাজার একটি হাদীসে আছে:- রসূলুল্লাহ (স.) বলেন, যে-ব্যক্তি কুরবানীর সামর্থ্য রাখে অথচ কুরবানী করে না সে যেন আমাদের ঈদগাহের নিকটেও না আসে। (ইবনে মাজা, ২৩২ পৃষ্ঠা।) আল্লাহমা জামালুদ্দীন আবদুলস্নাহ যায়লায়ী বলেন, এই হাদীসটি মুসনাদে আহমাদ, মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা, মুসনাদে আবু ইয়ালা, সুনানে দারাকুতনী ও মুস্তাদরকে হাকিম প্রভৃতিতেও বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু এর কয়েকটি বর্ণনার সনদ রসূলুল্লাহ (স.)পর্যন্ত পৌছায় না, বরং তা সাহাবী আবু হুরাইরা পর্যন্ত শেষ হয়ে যায়। সুতরাং হাদীসটি মরফু নয়, বরং মাউকুফ ( নাসবুর রা-য়াহ ৪র্থ খন্ড ২০৭ পৃষ্ঠা)। ইমাম তাহাভীও বলেন, মাউকুফ হওয়াটা সঠিক। তথাপি এ হাদীসে কুরবানী ওয়াজিব হওয়ার স্পষ্ট নির্দেশ নেই (ফাতহুল বারী ১০ম খন্ড, ১ম পৃষ্ঠা)। এই হাদীসটির একজন রাবী আবদুলস্নাহ ইবনে আইয়্যাশকে ইমাম আবু দাউদ এবং ইমাম নাসায়ী যয়ীফ ও দুর্বল বলেছেন (ইবনে মাজার উক্ত পৃষ্ঠায় বায়নাস সূতর দেখুন)। সুতরাং হাদীসটি দলীলযোগ্য নয়। আলস্নামা ইবনুল জাওযী 'তাহ্কীক' গ্রন্থে বলেন, এই হাদীসটি ওয়াজিব প্রমাণ করে না। যেমন ঐ হাদীসে যে ব্যক্তি রসুন খায় সে যেন আমাদের নামায পড়ার জায়গার নিকটেই না আসে উক্ত হুকুমটিকে ওয়াজিব প্রমাণ করে না (নাসবুর রায়াহ ৪র্থ খন্ড, ২০৭ পৃষ্ঠা)।

সুনানে আরবাআ ও মুসনাদে আহমাদের একটি হাদীসে আছে- হে মানবমন্ডলী! প্রত্যেক পরিবারের উপর প্রতি বছরে একটি করে কুরবানী ও আতীরাহ নিশ্চয়ই আছে। এই হাদীস সম্পর্কে হাফিয ইবনে হাজার আস্কালানী (রহ:) বলেন, এ হাদীসটিতেও কুরবানী ওয়াজিব হওয়ার স্পষ্ট শব্দ নেই। তাছাড়া এই রিওয়ায়াতে কুরবানীর সাথে ''আতীরারও" উলেস্নখ আছে, যা সর্বসম্মত মতে ওয়াজিব তো নয়ই, বরং অন্য হাদীস দ্বারা বাতিল বলে প্রমাণিত (ফতহুল বারী ১০ম খন্ড, ২য় পৃষ্ঠা)। কোন সহী ও বিশুদ্ধ হাদীস দ্বারা কুরবানী ওয়াজিব প্রমাণিত না হলেও রসূলুলস্নাহ্র (স.) সর্বদা আমল দ্বারা কারো কারো মনে ওয়াজিব হওয়ার সন্দেহ হয়। তাই একজন লোক নবীজীর সুন্নতের আশেক আবদুলস্নাহ ইবনে ওমরকে জিজ্ঞেস করেন, কুরবানী কি ওয়াজিব অর্থাৎ অবশ্য পালনীয় কাজ কি? উত্তরে তিনি বলেন, রসূলুলস্নাহ (স.) কুরবানী দিতেন এবং মুসলমানেরাও করতেন। এই উত্তরে প্রশ্নকারী দ্বিধামুক্ত না হওয়ায় তিনি আবার প্রশ্ন করেন, এটা ওয়াজিব কি না? উত্তরে তিনিও আবার বললেন, তুমি বুঝতে পারছো না আমি তো বলছি, রসূলুলস্নাহ (স.) কুরবানী করতেন এবং তাঁরপর সাধারণ মুসলমানেরাও কুরবানী দিত। তারপর থেকে এই সুন্নত জারি আছে (তিরমিযী ১ম খন্ড, ১৮২ পৃষ্ঠা ও ইবনে মাজা ২৩২ পৃষ্ঠা)।

ইমাম তিরমিযী (রহ.) বলেন, আহলে ইল্ম বা কুরআন হাদীস জ্ঞানীদের আমল এই ছিল যে, কুরবানী ওয়াজিব নয়, বরং নবী (স.) এর সুন্নতের মধ্যে এটি একটি সুন্নত (তিরমিযী ১ম খন্ড ১৮২ পৃষ্ঠা)। মুসনাদে আহমাদ, আবু ইয়ালা, তাবারানী, দারাকুতনী ও হাকিম প্রভৃতিতে একটি হাদীসে ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত আছে, রসূলুলস্নাহ (স.) বলেন, আমার উপর কুরবানী ফরয, কিন্তুু তোমাদের উপর নয় (ফতহুল বারী ১০ম খন্ড, ৪র্থ পৃষ্ঠা)। অন্য বর্ণনায় আছে, তিনি ( স.) বলেন, কুরবানী আমার উপরে ফরয এবং তোমাদের উপরে সুন্নত (তাবারানী কানযুল, উমমা-ল ৫ম খন্ড, ৪৩ পৃষ্ঠা)।

কুরবানী ''সুন্নত" হওয়া সম্পর্কে সহী ও যয়ীফ হাদীসে স্পষ্ট উলেস্নখ থাকা সত্ত্বেও কোন কোন যয়ীফ হাদীস দ্বারা পরোক্ষভাবে তা ওয়াজিব হওয়ার ইঙ্গিত পাওয়ার কারণে উলামায়ে কিরামের মধ্যে মতভেদ সৃষ্টি হয়েছে যে, কুরবানী সুন্নত, না ওয়াজিব অর্থাৎ শুধু করণীয়, না অবশ্য পালনীয়? ইমাম আবু হানীফার (রহ.) মতে প্রত্যেক স্বাধীন, ধনী ও ঘরে অবস্থানকারী মুসলমানের উপরে কুবরানী ওয়াজিব (হিদায়া ৪র্থ খন্ড, ৪৪৩ পৃষ্ঠা)। ইমাম শাফিয়ী (রহ.) বলেন, কুরবানী সুন্নত। একে আমি ত্যাগ করা পছন্দ করি না । কিতাবুল উম্ম ২য় খন্ড, ১৮৭ পৃষ্ঠা)। ইমাম মালিক বলেন, কুরবানী সুন্নত; ওয়াজিব নয় এবং কোন ব্যক্তি সামথর্্য থাকা সত্ত্বেও একে বর্জন করে আমি তা পছন্দ করি না (মুআত্তা ইমাম মালিক ১৮৯ পৃষ্ঠা)। ইনি ইমাম আবু হানীফার মত ''ঘরে অবস্থানকারীর" শর্ত লাগাননি। ইমাম আহমাদ বলেন, সামথর্্য থাকা সত্ত্বেও তা বর্জন করা আপত্তিকর। ইমাম আবু ইউসুফ, ইমাম আশহাব এবং জমহুর ও অধিকাংশ আলিমের মতে তা সুন্নতে মুআক্কাদা (ফতহুল বারী ১০ম খন্ড, ১ম পৃষ্ঠা)। ইমাম ইবনে হায্ম বলেন, কুরবানী সুন্নত, ফরয নয়। কোন সাহাবী থেকেও সহী সনদ প্রমাণিত নেই যে, কুরবানী ওয়াজিব (মুহালস্না ৭ম খন্ড, ৩৫৫-৩৫৮ পৃষ্ঠা )।

ইমাম তিরমিযী (রহ.) বলেন, আহলে ইল্ম বা কুরআন হাদীস জ্ঞানীদের আমল এই ছিল যে, কুরবানী ওয়াজিব নয়, বরং নবী (স.)- এর সুন্নত (তিরমিযী ১ম খন্ড, ১৮২ পৃষ্ঠা)

মুসনাদে আহমাদ, আবু ইয়ালা, তাবারানী, দারাকুতনী ও হাকিম প্রভৃতিতে একটি হাদীসে ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত আছে, তিনি (স.) বলেন, কুরবানী আমার উপর ফরয, কিন্তু তোমাদের উপর নয় (ফতহুল বারী ১০ম খন্ড, ৪র্থ পৃষ্ঠা)। অন্য বর্ণনায় আছে, তিনি (স.) বলেন, কুরবানী ফরয, কিন্তু তোমাদের উপরে সুন্নাত (তাবারানী কানযুল, উমমা-ল ৫ম খন্ড, ৪৩ পৃষ্ঠা) ।

কুরবানী ''সুন্নত" হওয়া সম্পর্কে সহী ও যয়ীফ হাদীসে স্পষ্ট উলেস্নখ থাকা সত্ত্বেও কোন কোন যয়ীফ হাদীস দ্বারা পরোক্ষভাবে তা ওয়াজিব হওয়ার ইঙ্গিত পাওয়ার কারণে উলামায়ে কিরামের মধ্যে মতভেদ সৃষ্টি হয়েছে যে, কুরবানী সুন্নত, না ওয়াজিব অর্থাৎ শুধু করণীয়, না অবশ্য পালনীয়? ইমাম আবু হানীফার (রহ.) মতে প্রত্যেক স্বাধীন, ধনী ও ঘরে অবস্থানকারী মুসলমানের উপরে কুরবানী ওয়াজিব (হিদায়া ৪র্থ খন্ড, ৪৪৩ পৃষ্ঠা)। ইমাম শাফিয়ী (রহ.) বলেন, কুরবানী সুন্নত। একে আামি ত্যাগ করা পছন্দ করি না (কিতাবুল উম্ম ২য় খন্ড, ১৮৭ পৃষ্ঠা)। ইমাম মালিক বলেন, কুরবানী সুন্নত; ওয়াজিব নয় এবং কোন ব্যক্তির সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও একে বর্জন করে আমি তা পছন্দ করি না (মুআত্তা ইমাম মালিক ১৮৯ পৃষ্ঠা)। ইনি ইমাম আবু হানীফার মতে ''ঘরে অবস্থানকারীর" শর্ত লাগাননি। ইমাম আহমাদ বলেন, সামর্থ থাকা সত্ত্বেও তা বর্জন করা আপত্তিকর। সুতরাং প্রতীয়মান হয় যে, কুরবানী বিশ্বনবী (স.) এর আজীবন সুন্নত এবং তাঁর ইন্তেকালের পর থেকে মুসলিম জাহানের সার্বজনীন আমল এবং ইসলামের এক মহান বৈশিষ্ট্য। তাই কোন সামথর্্যবান মুসলমানের পক্ষে কুরবানী ত্যাগ করা মোটেই উচিত নয়। এমনকি ধার করেও যদি কুরবানী দেওয়া সম্ভব হয় তাও দেওয়া উচিত । যেমন হযরত আয়শা (রা.) একদা রসূলুলস্নাহ (স.) কে জিজ্ঞেস করলেন যে, আমি দেনা করেও কুরবানী দেব কি? তিনি (স.) বললেন , হ্যাঁ। কারণ, এই দেনা শোধ হবেই (দারাকুতনী, ২য় খন্ড, ৫৪৪ পৃষ্ঠা)।

রসূলুলস্নাহ (স.) বলেন, ইয়াওমুন নাহরে (অর্থাৎ বকরাঈদের দিনে) আদম সন্তান যত কাজ করে তন্মধ্যে আলস্নাহ্র কাছে সবচেয়ে প্রিয় কাজ (কুরবানীর পশুর ) রক্তপাত। ঐ জানোয়ার কিয়ামতের দিনে তার শিং ও পশম এবং খুরসহ নিশ্চয়ই হাজির হবে আর ওর খুর যমীনে পড়ার আগেই আলস্নাহ্র কাছে তা কবুলিয়াতের (গৃহীত হবার) দরবারে পেঁৗছে যায়। অতএব তোমরা কুরবানী করে নিজেদের মনকে তৃপ্ত কর (তিরমিযী, ইবনে মাজা, মেশকাত, ১২৮ পৃষ্ঠা)। একদা সাহাবায়ে কেরাম রসূলুলস্নাহ (স.)-কে জিজ্ঞেস করেন, কুরবানী কি? হে আলস্নাহ্র রসূল! তিনি বললেন, এটা তোমাদের পিতা ইবরাহীম আলায়হিস সালামের সুন্নত ও আদর্শ । তাঁরা আবার প্রশ্ন করলেন, এতে আমাদের লাভ কি? তিনি বললেন, প্রত্যেক পশমের বদলে একটি করে নেকী আছে (মুসনাদে আহমাদ, ইবে মাজা, মেশকাত ১২৯ পৃষ্ঠা)। একদা তিনি হযরত ফাতিমা (রা.) কে বলেন, ঐ পশুর প্রত্যেক রক্তবিন্দুর বদলে তোমার একটি করে গোনাহ্ মাফ হবে এবং ঐ পশুটিকে তার রক্ত ও গোশ্তসহ তোমার দাঁড়িপালস্নাতে সত্তর গুণ ভারী করে দেওয়া হবে ( মিরআত, ২য় খন্ড, ২৬২ পৃষ্ঠা)। কথাটি শুনে হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা.) জিজ্ঞেস করেন, ইয়া রসূলুলস্নাহ! এ নেকী হযরত মুহাম্মদ (স.) এর বংশের জন্য খাস, না সর্বসাধারণ সবার জন্যেও? তিনি (স.) বললেন, এটা মোহাম্মদ (স.) এর বংশ ও সবার জন্য (বায়হাকী, কানযুল উম্মাল, ৫ম খন্ড, ১১৯ পৃষ্ঠা) ও ৫১ পৃষ্ঠা, মুস্তাদরেকে হাকেম, ৪র্থ খন্ড, ২২২ )।

কোন যয়ীফ হাদীসেও একথার প্রমাণ পাওয়া যায় না যে, রসূলুলস্নাহ (স.) অথবা খুলাফায়ে রাশিদীন কুরবানী না করে তার দামটা সদাকাহ করে দিয়েছেন। কারণ, কুরবানী না করে তার দাম সদাকাহ করলে ইসলামের একটি মহান নিদর্শন ত্যাগ করা হয়। তাই কুরবানীর পশু যবেহ করাটাই সামথর্্যবানদের জন্য অপরিহার্য (মিরআত, ২য় খন্ড, ৩৫০ পৃষ্ঠা)।

দেওবন্দের সাবেক মুফতী মওলানা শাফী (র.) বলেন, কুরবানীর তিনদিনে পশুর দাম সদকাহ করলে কুরবানী আদায় হবে না। বরং সে সর্বদা গোনাহ্গার হবে। কারণ, কুরবানী স্বতন্ত্র একটি ইবাদত। যেমন নামায পড়লে রোযা এবং রোযা রাখলে নামায আদায় হয় না, যাকাত দিলে হজ্ব আদায় হয় না। আলস্নাহ্ আমাদেরকে প্রকৃত বিষয় জানার এবং তা আমল করার তাওফিক দান করুন আমীন!

- মাওলানা জাকির হোসাইন আজাদী
Share this article :

Post a Comment

 
Support : Creating Website | Johny Template | Mas Template
Copyright © 2011. ইসলামী কথা - All Rights Reserved
Template Created by Creating Website Published by Mas Template
Proudly powered by Premium Blogger Template