السلام عليكم

যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার (তওবা) করবে আল্লাহ তাকে সব বিপদ থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন। [আবূ দাঊদ: ১৫২০; ইবন মাজা: ৩৮১৯]

শাওয়ালের ছয়টি সুন্নত রোজার মাহাত্ম্য

| comments

মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছেন একমাত্র তারই ইবাদতের জন্য। এ মহান সৃষ্টি দ্বারা তার আর কোন উদ্দেশ্য নেই। তিনি চান বান্দা যেন সর্বদা আমার-ই ইবাদত করে। আমাকেই তার আপনভাবে। এ মর্মে পবিত্র কোরআনে মহান প্রভু ইরশাদ করেছেন এবং আমি জ্বিন ও মানব জাতিকে একমাত্র আমারই ইবাদতের জন্য তৈরি করেছি। আল-কোরআন

এই মানব জাতি যেন তাদের বাস্তব জীবনে একে অন্যকে আপন ভেবে একে অন্যের দ্বারা উপকৃত হতে পারে এজন্য দিয়ে দিয়েছেন জীবন বিধান। সামাজিক জীবনে তারা পরস্পরে যেন ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে সেজন্য কোরআন হাদিসে মানব সেবার অনেক ফযীলত বর্ণনা করা হয়েছে।

রাসূলে কারীম (সা.) ইরশাদ করেছেন!

যে ব্যক্তি দুনিয়ার বুকে কোন মুমিন ব্যক্তির পেরেশানী/বিপদাপদ দূর করবে আখেরাতের বুকে আল্লাহ পাক তার পেরেশানী/বিপদাপদ দূর করে দিবেন। আর যে কোন মুসলমানের দোষত্রুটিকে গোপন রাখবে আল্লাহপাক ইহকাল ও পরকালে তার দোষ-ত্রুটিকে গোপন রাখবেন। আর যতক্ষণ পর্যন্ত কোন ব্যক্তি তার অপর ভাইয়ের সহযোগিতায় লিপ্ত থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহপাক তাকে তার সহযোগিতা দ্বারা বেস্টন করে রাখবেন। আল-হাদিস

উক্ত হাদিসে রাসূল (সা.) মানব সেবার ফযীলতকে বর্ণনা করেছেন। আর এ দ্বারা স্পষ্ট হয়ে গেল মানব সেবা অনেক ফযীলতের কাজ।

অন্য এক হাদিসের মধ্যে রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন-‘যারা অন্যের উপর দয়া করে মহান আল্লাহপাক রাব্বুল আলামীন তাদের ওপর দয়া করেন। তোমরা পৃথিবীর বুকে যারা রয়েছে তাদের প্রতি দয়া কর। আকাশের অধিবাসী (মহান প্রভু) তোমাদের উপর দয়া করবেন। আল-হাদিস

উক্ত হাদিসের মধ্যে ঐদিকে ইশারা করা হয়েছে যে, যতক্ষণ পর্যন্ত কারো হƒদয়ে সৃষ্টি জীবের প্রতি দয়া হবে না। ততক্ষণ পর্যন্ত সে ব্যক্তি তাকে মুসলমান বলে দাবী করার অধিকার রাখে না। একজন মুমিনের জীবন এই সমস্ত গুণে গুণান্বিত হওয়া উচিত। কেননা পবিত্র কোরআনে আল্লাহ পাক এই জাতিকে লক্ষ্য করে বলেছেন, এবং আমি বনী আদমকে সম্মানিত করেছি। (আল কোরআন)

অন্য হাদিসে এসেছে-‘হযরত সাহল ইবনে সা’দ (রা.) সূত্রে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন জান্নাতের মধ্যে একটি দরজা রয়েছে যার নাম হল ‘রাইয়্যান’ একমাত্র রোযাদারদেরকেই সেই দরজা দিয়ে আহ্বান করা হবে। সুতরাং রোযাদার-ই সেই দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে। অতএব সেথায় যে প্রবেশ করে ফেলবে সে কখনো তৃষ্ণার্ত হবে না।’-আল হাদিস অন্য হাদিসে ইরশাদ হচ্ছেø হযরত আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন! রোযাদারের জন্য দু’টি আনন্দ রয়েছে একটি হল যখন সে ইফতার করে। আর অপরটি হল যখন সে তার মহান প্রভুর সাথে সাক্ষাৎ করবে।-আল হাদিস

মুসলমান ব্যক্তি যাতে শুধু রমযানের রোযা রেখে থেমে না যায় বরং সে কি করে সহজেই পূর্ণ বছরটা মহান প্রভুর ভালবাসার পাত্র হয়ে থাকতে পারে এবং কি করে জান্নাতের স্থায়ী বাসিন্দা হতে পারে। কিয়ামতের ভয়াবহ দিবসেও সে কি করে হাসতে পারে। থাকতে পারে আনন্দের সাথে। রাসুল (রা.) উম্মতের সামনে এই পথটি স্পষ্ট করে দিয়ে গেছেন। হাদিস শরীফে এসেছে-‘হযরত আবু আইয়ূব (রা.) সূত্রে বর্ণিত রাসুল (সা.) বলেছেন! যে ব্যক্তি রমযানের রোযা রাখল অতঃপর তার সাথে সাথে শওয়াল মাসের ছয়টি রোযা রাখল সে যেন পূর্ণবছরই রোযা রাখল।’-আল হাদিস

অর্থাৎ, একজন ব্যক্তি যখন রমযান মাসের রোযা রেখে তার সাথে সাথে শাওয়াল মাসেও ছয়টি রোযা রাখল সে এই রোযার কারণে আল্লাহ পাকের দরবারে পূর্ণ একটি বছর রোযা রাখার সমান সওয়াব পেয়ে গেল। একটু ভেবে দেখুন রমযানের পরবর্তী মাস শাওয়ালের মধ্যে ছয়টি রোযা রাখার এই আমলটা কতইনা সহজ কিন্তু তার ফযীলত কতই না মহান। কার পক্ষে সহজেই সম্ভব এক বছর লাগাতার রোযা রাখা। অথচ এই আমলটা এই ফযীলত সম্পন্ন হওয়া সত্ত্বেও তা সাধারণ মানুষের পক্ষেও সম্ভব। শুধু মনের সৎ নিয়মই যথেষ্ট। বান্দা যখন প্রকৃতভাবে আল্লাহকেই ভালবাসে তখন তার জন্য একদম কঠিন থেকে কঠিনতম আমল ও সহজ হয়ে দাঁড়ায়। বান্দা যখন আল্লাহ পাকের দিকে হাঁটি হাঁটি পা পা করে অগ্রসর হয় আল্লাহ পাকের রহমত তার দিকে দৌড়িয়ে অগ্রসর হয়। বান্দা যখন আল্লাহ পাকের প্রেমে বিভোর হয়ে তার সন্তুষ্টির লক্ষ্যে সামান্যতম আমল তার দরবারে পেশ করে আল্লাহ পাক বান্দার এই আমলকে দশ থেকে সাতশত গুণ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেন। আর আল্লাহ পাকের এই দয়া ও অনুগ্রহ বান্দা তখনই লাভ করবে যখন বান্দা আমল করবে। কেননা আল্লাহ পাকের রহমত লাভের জন্য একটি উছিলা আবশ্যক। আর তা হল আমল। তাই তো বান্দা যেন আল্লাহ পাকের রহমতকে হাত ছাড়া না করে। বরং অল্প আমলের বিনিময়েই যেন সে আল্লাহর কল্পনাহীন দয়া ও অনুগ্রহের অধিকারী হয়ে যায়। এমন অনেক রাস্তাই আল্লাহপাক বান্দার জন্য খোলা রেখেছেন এবং রাসুল (সা.) উম্মতের সামনে তা দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট করে তুলে ধরেছেন। আর অল্প আমলের বিনিময়ে আল্লাহপাকের অসীম দয়া ও অনুগ্রহের পাত্র হওয়ার জন্য রাসুল (সা.) কর্তৃক বর্ণিত সহজ পন্থাসমূহ থেকে একটি অতি সহজ পন্থা হল শাওয়াল মাসের ছয়টি রোযা। বান্দা যখন আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টির জন্যে এই ছয়টি রোযা রাখবে তখন আল্লাহ তাকে পূর্ণ একটি বছর রোযা রাখার সওয়াব দিয়ে দিবেন।

অন্য একটি হাদিসে ইরশাদ হচ্ছে রাসুল (সা.)কে সারা বছর রোযা রাখা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন, নিঃসন্দেহে তোমার উপর তোমার পরিবার-পরিজনের হক বা অধিকার রয়েছে। অতঃপর তিনি বললেন, রমযানের এবং তার পরবর্তী দিনগুলোরও প্রত্যেক বুধবার ও বৃহস্পতিবারে রোযা রাখ। সুতরাং যখন তুমি এই রোযাগুলো রাখবে তখন যেন তুমি সারাটা বছরই রোযা রাখলে।-আল হাদিস এই সমস্ত আরো অনেক হাদিস রয়েছে যার দ্বারা শাওয়ালের ছয়টি রোযা রাখার ফযীলত প্রমাণিত হয়। সুতরাং আসুন আমরা এই মহান ফযীলত ও বরকতময় আমলটি নিজ জীবনে বাস্তবায়িত করি। তাহলেই সফল হবে আমাদের ইহকাল ও পরকাল। আল্লাহপাক আমাদেরকে সেই তৌফিক দান করুন। আমীন।
**মুফীযুর রাহমান কাসেমী**
Share this article :

Post a Comment

 
Support : Creating Website | Johny Template | Mas Template
Copyright © 2011. ইসলামী কথা - All Rights Reserved
Template Created by Creating Website Published by Mas Template
Proudly powered by Premium Blogger Template