রমজানের সিয়ামকে বিভিন্ন প্রকার দোষ থেকে পবিত্র করার জন্য প্রত্যেক সিয়াম পালনকারীকে রমজানের শেষে নির্দিষ্ট হারে কিছু দান করতে হয়। ইসলামী তত্ত্ববিদদের (ফকীহদের) পরিভাষায় ঐ দানের নাম ফেতরা। ফেতরা বলতে আমরা যা বুঝি কুরআন ও হাদীসে ঐ অর্থে ফেতরা শব্দটি কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না।ফেতরার বিভিন্ন নাম বিভিন্ন হাদীসে ফেতরাকে সদাকাতুল ফেতর, যাকাতুল ফেতর, যাকাতে রমজান, যাকাতে আবদান (দেহের যাকাত) যাকাতুস সওম ও সদাকাতুর রুউস নামে অভিহিত করা হয়েছে। (আওনুল বারী ৪র্থ খণ্ড-৯৭ পৃঃ) ফেতরার নির্দেশ একটি হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, সূরায়ে ‘আলা’র আয়াত (কাদ আফলাহা মান তাযাককা) ফেতরার ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছিল। (সহীহ ইবনে খুযায়মাহ ৪র্থ খণ্ড ৯০ পৃঃ) এ হাদীস ও অন্যান্য হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, ফেতরা ফরজ। ইমাম নবিবী (রহ.), ইমাম মালেক, ইমাম শাফেঈ ও ইমাম আহমদ (রহ.) এবং সালাফ প্রমুখ (জমহুর) অধিকাংশ ওলামার মতে ফেতরা ফরজ। ইমাম আবু হানীফার (রহ.) মতে ফেতরা ফরজ নয়, ওয়াজিব। (শারহে মুসলিম পৃঃ ঐ মিরআত ৩য় খণ্ড, ৯১ পৃঃ) ফেতরা কাদের উপরে ওয়াজিব? ইবনে ওমর (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) মুসলিম ক্রীতদাস ও স্বাধীন পুরুষ ও নারী, ছোট ও বড় সবার ওপরে রমজানের যাকাতুল ফেতর এক সা’ খেজুর অথবা যব নির্ধারণ করেছেন। (বুখারী, মুসলিম, মেশকাত ১৬০ পৃঃ)
আব্দুল্লাহ ইবনে সা’লাবাহ (রা.) থেকে মরফূ’ভাবে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, তোমরা এক সা’গম আদায় কর প্রত্যেক ব্যক্তির তরফ থেকে সে পুরুষ হোক বা নারী, কিংবা ছোট হোক বা বড় অথবা স্বাধীন হোক বা ক্রীতদাস। ধনী হলে আল্লাহ তাদেরকে পবিত্র করবেন এবং গরীব হলে আল্লাহ তাদেরকে তার চেয়ে বেশি ফেতরা দেবেন যতটা তারা দেবে। (বায়হাকী ৪র্থ খণ্ড ১৬৪-১৬৫ পৃঃ) উক্ত দু’টি রেওয়ায়াত প্রমাণ করে যে, ফেতরা প্রত্যেকের ওপরে ওয়াজিব। ক্রীতদাসের ফেতরা তাকেই দিতে হবে। কারণ রাসুলুল্লাহ (স.) বলেনঃ ক্রীতদাসের ওপর সাদাকাতুল ফেতর ছাড়া আর কোন সাদকা ওয়াজিব নয়। (মুসলিম ১ম খণ্ড ৩১৬ পৃঃ) সে জন্য তার মালিকের কর্তব্য হল ঐ ক্রীতদাসকে তার ফেতরা যোগাড় করার জন্য সুযোগ দেয়া। যদি সে তাকে সুযোগ না দেয় তাহলে মালিককেই তার ফেতরা দিতে হবে। তেমনি দাসীর ফেতরাও তার মালিকের ওপর ওয়াজিব। উক্ত হাদীস দ্বারা বোঝা যায় যে, নারীদের ওপরেও ফেতরা ওয়াজিব। তার স্বামী থাক বা না থাক। ইমাম মালিক, শাফিঈ ও আহমাদ (রহ.) প্রমুখের মতে তার স্বামীর ওপর ফেতরা ওয়াজিব।
ইমাম আবু হানীফার (রহ.) মতে তার স্বামীর উপরে ফেতরা ওয়াজিব নয়। (আওনুল বারী ৪র্থ খণ্ড-১০০ পৃঃ) অবিবাহিতা মেয়ের ফেতরা তার পিতা বা অভিভাবক দেবেন এবং অভিভাবক না থাকলে সে নিজে দেবে। উক্ত হাদীস প্রমাণ করে যে, ছোটদের ওপরেও ফেতরা ওয়াজিব, যদিও সে ইয়াতীম হয়। তার মাল থাকলে তাথেকে তার ওয়ালী (অভিভাবক) ফেতরা দেবে। যদি তার মাল না থাকে তাহলে ওয়ালীকে তার ফেতরা দিতে হবে। নাবালেকের ফেতরা তার পিতার ওপর ওয়াজিব। (মিরআত ৩য় খণ্ড ৯৪ পৃঃ) কারো ফেতরা মাফ আছে কি? সিহাহ সিত্তা এবং বায়হাকী ও তাহাভীর হাদীসে আছে যে, প্রত্যেক ব্যক্তির ওপর ফেতরা ওয়াজিব। ঐসব হাদীসে বা দুনিয়ার কোন হাদীসে একথার উল্লেখ স্পষ্টভাবে নেই যে, অমুক লোকের ফেতরা মাফ। তাছাড়া ফেতরার কারণ সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, ওটা হলো সিয়াম পালনকারীদের সিয়াম পবিত্র করার হাতিয়ার ও মিসকিনের খাবার।
হাসান ইলিয়াস
Post a Comment