السلام عليكم

যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার (তওবা) করবে আল্লাহ তাকে সব বিপদ থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন। [আবূ দাঊদ: ১৫২০; ইবন মাজা: ৩৮১৯]

মুসলিম নারী

| comments

মহানবী হযরত মোহাম্মদ(সঃ) ছিলেন নারীবাদী। সপ্তম শতকের আরবে আল্লাহর নামে তিনি যে ধর্ম প্রচারণা শুরু করেন তাতে নারীদের সমৃদ্ধিই ঘটেছিল। স্থানীয় পৌত্তলিক সমাজে নারী শিশুকে জ্যান্ত কবর দেয়া হত। মহিলারা পুরুষদের কাছে স্রেফ সম্পত্তি হিসেবে ব্যবহার হত; তবে ইসলামী আইন নারী শিক্ষাকে একটি পবিত্র দায়িত্বে পরিণত করে। মহিলাদের নিজস্ব এবং সম্পত্তির অধিকার দেয়া হয়। মোহাম্মদ (সঃ) এমনও ঘোষণা করেছিলেন, যৌন তৃপ্তিতে মেয়েদেরও হক বা অধিকার রয়েছে। ঘরে এবং বাইরে সব জায়গাতেই তিনি ছিলেন সমান উদার। পরনের কাপড় তিনি নিজেই সেলাই করতেন। তাঁর স্ত্রীদের মধ্যে ছিলেন ব্যবসায়ী, যোদ্ধা, মুচি এবং ইমামও।


আজ থেকে চোদ্দশো বছর আগে মুসলমান মেয়েরা হযরতের দয়ায় যে স্বাধীনতা ভোগ করেছে, একবিংশ শতাব্দীর সূচনালগ্নে সেই স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত অনেক মুসলিম দেশের নারীই। বেশিরভাগ মুসলিম দেশের নারী শুধু পরাধীন জীবন-যাপনই করছে না, মৌলিক অধিকার থেকেও তারা অনেকখানি বঞ্চিত। কিছুদিন আগেও তালেবান অধ্যুষিত আফগানিস্তানে মুসলমান মেয়েরা কি রকম মানবেতর জীবন-যাপন করেছে তা কারও অজানা নয়। ইসলামের নামে তাদের শুধু গৃহবন্দী করে রাখাই হয়নি, মৌলবাদী পুলিশের হাতে নানা ছুতো নাতায় অমানুষিক নির্যাতনও সহ্য করতে হয়েছে অনেককে। লুইসভিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্ম শিক্ষার অধ্যাপিকা রিফাত হাসান যথার্থই মন্তব্য করেছেন, ‘শত শত বছর ধরে বেশির ভাগ মুসলিম সমাজে ইসলামের নামে যা চলছে তাতে মুসলিম নারীদের কেবলই নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। শারীরিক এবং মানসিক, দুই দিক থেকেই।’


হযরত মোহাম্মদ (সঃ) মেয়েদের জন্যে নতুন অধিকারের কথা বলে গেলেও তাদের মাঝে অসমতাও সৃষ্টি করেছেন কোরানের নামে। ইসলামে একজন পুরুষের চারটে বিয়ে করার অধিকার রয়েছে। কিন্তু কোন মুসলিম নারী একটির বেশি বিয়ে করতে পারবে না। আর অনেক মুসলিম পরিবারে খুব কম বয়সে মেয়ের বিয়ে দেয়ার প্রবণতা লক্ষ করা যায়। হযরত মোহাম্মদ (সঃ)-এর সবচে’ প্রিয় স্ত্রী আয়েশার বিয়ে হয়েছিল মাত্র ছ’বছর বয়সে। ইরানে মেয়েদের বিয়ের বৈধ বয়স নয়, ছেলেদের চোদ্দ। ২০০০ সালে ইরানী সংসদ মেয়েদের বিয়ের বয়স চোদ্দ হবে বলে প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু প্রভাবশালী মওলানাদের আপত্তির মুখে সে প্রস্তাব পাস হবার সুযোগ পায়নি।


ইসলামী সমাজে নারীর পক্ষে স্বামীকে তালাক দেয়া খুবই কঠিন। তবে স্বামীদের জন্যে এটা খুবই সহজ কাজ। কোথাও কোথাও ‘তোমাকে তালাক দিলাম’ কথাটি তিনবার বললেই তালাক হয়ে যায়। তবে বেশির ভাগ মুসলিম দেশে তালাকের ব্যাপারটি খোরপোশের সঙ্গে জড়িত। স্বামী তালাক দিলে স্ত্রীকে খোরপোশ দিতে বাধ্য থাকবে। তবে পাকিস্তানে, তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রী যদি গর্ভবতী না হয় তাহলে তিন মাস খোরপোশ দিলেও চলে। সংখ্যালঘু মুসলমানদের দেশ ভারতেও একই আইন প্রযোজ্য।


দারিদ্র্যের ভয় এবং সন্তান হারানোর আশঙ্কায় বেশিরভাগ মুসলমান মেয়ে শত নির্যাতন সয়েও দাঁতে দাঁত চেপে পাষণ্ড স্বামীর সংসার করে। সাধারণত আইন অনুসারে, বাবা-মা’র ডিভোর্স হয়ে গেলে, সন্তানের বয়স ছয়ের বেশি হলে বাবা ছেলে-মেয়ের দায়িত্ব নেয়ার অনুমতি পায়। মরিয়ম নামে এক ইরানী মহিলা বিশ বছর ধরে ড্রাগ আসক্ত স্বামীর ঘর করছে। স্বামীকে সে ঘৃণা করে। কিন্তু সংসার ছেড়ে যেতে পারছে না একমাত্র কিশোরী মেয়েটির জন্যে, তাকে হারাবার ভয়ে। মরিয়ম বলেছে, ‘ইসলাম হয়তো আমাকে তালাকের অধিকার দেবে। কিন্তু এরপরের অধিকারগুলো কি রক্ষা করবে?’


কোরানে নারীর অধিকারকে এক অর্থে কমপ্রোমাইজ করা হয়েছে। সুরা ৪:৩৪-এ বলা হয়েছে, অবাধ্য স্ত্রীকে প্রথমে মৃদু ভর্ৎসনা করো, তারপর তার বিছানা আলাদা করে দাও এবং সবশেষে তাকে প্রহার করো। মুসলিম সমাজে স্ত্রীকে মারধোর করা অত্যন্ত স্বাভাবিক একটি ঘটনা। মিশরের সমাজকর্মীরা তাদের দেশের নির্যাতিত নারীদেরকে বোঝাতে চেষ্টা করেন, স্বামী চাইলেই স্ত্রীর গায়ে হাত তুলতে পারে না। এটা মেনে নেয়ার কোন বিষয়ও নয়।


মুসলিম নারীরা শুধু মারই খায় না, প্রতি বছর শত শত মেয়ে খুনও হয়ে যাচ্ছে তাদের স্বামী বা আত্মীয়ের হাতে। অবাধ্যতা, উচ্ছৃঙ্খলতা, ব্যভিচার বা পরিবারের মতের বিরুদ্ধে বিয়ের অভিযোগে এইসব মেয়ে নির্যাতনের শিকার হয়ে মারা যাচ্ছে। তবে এক্ষেত্রে খুনীর তেমন কঠিন কোন সাজা হচ্ছে না। জর্ডানে কোন পুরুষ তার স্ত্রী বা নিকট আত্মীয়কে ব্যভিচার করতে দেখলে খুন করে ফেললে সেই লোকটির কোন বিচার হয় না। শুধু অবৈধ যৌন সম্পর্কের ব্যাপার হলে তাকে অল্প ক’দিন জেল খাটতে হয়। জর্ডান সরকার চেষ্টা করেছে এসব অপরাধের শাস্তি দেয়ার জন্যে আগের আইন বাতিল করতে। কিন্তু পারেনি। ইসলামিক অ্যাকশন ফ্রন্ট নামে জর্ডানের শক্তিশালী রাজনৈতিক দলটি এর বিরুদ্ধে ভেটো দিয়েছে। বলেছে এই আইন রদ করা হলে ইসলাম, সমাজ এবং পারিবারিক মূল্যবোধ ধ্বংস হয়ে যাবে। জর্ডানে এ ধরনের হত্যাকাণ্ডকে বরং সম্মানের চোখে দেখা হয়। ইংরেজিতে একে বলা হয় ‘ঐড়হড়ৎ করষষরহমং.’


সতীত্ব রক্ষার প্রশ্নে মুসলিম নারীদের খতনাও করা হয় সাব-সাহারার আফ্রিকা এবং মিশরে। মেয়েদের ভগাংকুর এবং খধনরধ (যোনি ঠোঁট)-র অংশ বিশেষ, কখনও বা পুরোটাই কেটে ফেলা হয় এসব দেশে। মেয়েদের যৌন আকাক্সক্ষা নিবারণ এবং সতীত্ব রক্ষার জন্যে নিষ্ঠুর এ কাজটা করা হয়। এশিয়ার কিছু অঞ্চল এবং সৌদি আরবেও এ কাণ্ড চলে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে কমপক্ষে ১৪০ মিলিয়ন নারীর এভাবে খতনা করা হয়েছে। কোন কোন মুসলমানের বিশ্বাস এটা ইসলামের হুকুম।


শরীর দেখানো পোশাক পুরুষদের প্রলুব্ধ করে তুলতে পারে। তাই কোরান মেয়েদেরকে নির্দেশ দিয়েছে তাদের সম্ভ্রম রক্ষা করে চলতে এবং তাদের সৌন্দর্য গোপন রাখতে। এ কারণে মুসলমান মেয়েদেরকে বোরখা পরে চলতে হয়। সৌদি মেয়েরা আবায়া নামে কালো আলখেল্লায় নিজেদেরকে আপাদমস্তক ঢেকে রাখে। এ দেশে মেয়েদের গাড়ি চালানোর অনুমতি নেই, তারা অনুমতি ছাড়া কোথাও যেতেও পারে না। সৌদি মেয়েদের কাজ করার অনুমতি আছে সীমিত কিছু ক্ষেত্রে। তবে পুরুষদের সঙ্গে একত্রে অবশ্যই নয়। (ইঞ্জিনিয়ারিং এবং আইন তাদের জন্যে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ) আর ঘরে কিংবা বাইরে, বিপরীত লিঙ্গের সামনে তাকে অবশ্যই বোরখা বা আবায়া পরে থাকতে হবে। তবে ইরান এবং সুদানের মেয়েরা মুখ না ঢেকেও চলতে পারে। যদিও চুল এবং ঘাড় ঢেকে রাখতে হয় তাদেরকে।


বেশিরভাগ মুসলিম দেশে মেয়েদের বোরখা পরা এখন অনেকটা নিজেদের পছন্দের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেউ কেউ, এদের মধ্যে নারীবাদীও রয়েছে, বোরখা পরে; কারণ এটা পরতে তারা পছন্দ করে। বোরখা পরলে পুরুষের লোভী দৃষ্টি থেকে নিজেদেরকে আড়াল করে রাখা যায় বলে তারা মনে করে। তবে অনেক মেয়েই বলে পারিবারিক এবং সাংস্কৃতিক চাপে তারা বোরখা পরতে বাধ্য হচ্ছে। স¤প্রতি কাশ্মীরে একটি মৌলবাদী মুসলিম দল মেয়েদের বোরখা পরে ঘরের বার হতে হবে বলেছিল। কিন্তু তাদের কথা কেউ পাত্তা দিচ্ছে না দেখে তারা মেয়েদেরকে অ্যাসিড ছুঁড়ে মারতে শুরু করে। ফলে ভয়ে সবাই পা থেকে মাথা পর্যন্ত ঢেকে ঘরের বার হতে থাকে।


মুসলিম বিশ্বের মধ্যে ইরান এবং তুরস্কের মেয়েরা অপেক্ষাকৃত স্বাধীন জীবন-যাপনের সুযোগ পাচ্ছে। ইরানী মেয়েদের গাড়ি চালাতে মানা নেই, তারা নিজেরাই নিজেদের ব্যবসাপত্র দেখা শোনার সুযোগ পায়। তাদের রয়েছে ভোট দেয়ার অধিকার। বেশির ভাগ মুসলিম দেশে মেয়েরা যেখানে থাকে গৃহবন্দী, ইরানের রাস্তায় সেক্ষেত্রে দেখা যায় ভিন্ন দৃশ্য। ইরানের ২৫ ভাগ মেয়ে বাইরে কাজ করে, সরকারের তিন ভাগের এক ভাগ কর্মচারী মহিলা আর ৫৪ ভাগ কলেজ ছাত্রী। তবে আরব বিশ্বের অন্যান্য নারীদের মত ইরানী মেয়েরাও তাদের স্বামী বা বাবার অনুমতি ছাড়া দূর দেশে ভ্রমণে যেতে পারে না।


আরব বিশ্বে আস্তে আস্তে স্বাধীনতার স্বাদ পাচ্ছে মেয়েরা। ১৯৯৯ সালে কুয়েতের আমির শেখ জাবের আল আহমেদ আল সাবাহ প্রথম মেয়েদের ভোট দানের জন্যে আইন প্রণয়ন করেন এবং কুয়েতি পার্লামেন্টে নির্বাচনে দাঁড়ানোর সুযোগও করে দেন। মরক্কোর সরকার মেয়েদের একাধিক বিয়ে এবং সম্পত্তির অধিকার রক্ষার প্রশ্নে আইন প্রণয়নের চেষ্টা করেছিল। কিন্তু মৌলবাদীদের চাপের মুখে সফল হয়নি সে প্রচেষ্টা।


মুসলিম মেয়েরা এখন সংসদ সদস্য হবার সুযোগও পাচ্ছে। সিরিয়ার ২৫০ জন সংসদ সদস্যের ২৬ জনই নারী। ইরাকে এই সংখ্যা ২৫০-এ ১৯ জন। অন্তত চারটে মুসলিম দেশের প্রধান নির্বাহী ছিলেন নারী। এরমধ্যে পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং ইন্দোনেশিয়ার উদাহরণ দেয়া যেতে পারে।


তবে মুসলিম বিশ্বের মধ্যে সবচে’ বেশি স্বাধীনতা ভোগ করছে তুরস্কের মেয়েরা। তুরস্কের প্রতিষ্ঠাতা মোস্তফা কামাল আতাতুর্ক তাঁর দেশের মেয়েদেরকে যথেষ্ট স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। টার্কিশ পার্লামেন্ট নারী স্বাধীনতায় এক ধাপ এগিয়ে গেছে গত বছর পারিবারিক আইন পুনর্গঠন করে। আগে তুরস্কের পরিবার প্রধান ছিলেন পুরুষ। তাঁর আদেশ ছিল শিরোধার্য। এখন থেকে গৃহকর্ত্রীও সমান অধিকার ভোগ করছেন। আগে ১৫ বছর বয়স হলেই মেয়েদেরকে বিয়ে দেয়া হত। আইন করে বয়সটাকে ১৮তে আনা হয়েছে।


ইরানে স¤প্রতি আইন হয়েছে মেয়ে তার বাবার অনুমতি নিয়ে দেশের বাইরে পড়তে যেতে পারবে। আমাদের দেশের মেয়েরা অবশ্য যথেষ্টই স্বাধীন। তবে পুরুষশাসিত এ সমাজ ব্যবস্থায় তাদের স্বাধীনতা প্রায়ই ব্যাহত হচ্ছে।


মিশরে মেয়েদের খতনা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সহজে তালাকও নিতে পারছে তারা। কাতারে মেয়েরা মিউনিসিপ্যাল ইলেকশনে দাঁড়াবার যোগ্যতা অর্জন করেছে। বাহরাইনেও মেয়েদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করা হয়েছে। তবে পুরুষশাসিত সমাজে এসব অধিকার তারা কতটা প্রয়োগ করতে পারবে সেটা বলে দেবে সময়। 
ইসলামে নারী বনাম পুস্তক ও বাস্তবতায় ইহুদী ও খৃষ্টান ধর্মে নারী
Share this article :

Post a Comment

 
Support : Creating Website | Johny Template | Mas Template
Copyright © 2011. ইসলামী কথা - All Rights Reserved
Template Created by Creating Website Published by Mas Template
Proudly powered by Premium Blogger Template