السلام عليكم

যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার (তওবা) করবে আল্লাহ তাকে সব বিপদ থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন। [আবূ দাঊদ: ১৫২০; ইবন মাজা: ৩৮১৯]

হজরত ইউনুস (আ.)

| comments

 হজরত ইউনুস (আ.) একজন সম্মানিত নবী। পবিত্র কোরআনে স্বতন্ত্র একটি সুরা অবতীর্ণ হয়েছে তার নামে- ‘সুরা ইউনুস’। এ ছাড়াও পবিত্র কোরআনে আরও ছয়টি সুরায় তার সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। পৃথিবীতে দুজন নবী মায়ের নামে পরিচিত হয়েছেন। একজন হজরত ঈসা ইবনে মরিয়ম, অন্যজন হজরত ইউনুস ইবনে মাত্তা। মাত্তা হজরত ইউনুস (আ.)-এর মায়ের নাম। মায়ের নামেই তাকে ইউনুস ইবনে মাত্তা বলা হয়। কোরআন মাজিদে তাকে তিনটি নামে উল্লেখ করা হয়েছে- মূল নাম ইউনুস, জুননূন ও সাহিবুল হুত। ‘জুননূন’ ও ‘সাহিবুল হুত’-এর অর্থ মাছওয়ালা। মাছ সংশ্লিষ্ট ঘটনার দিকে ইঙ্গিত করে তাকে এ নামে উল্লেখ করা হয়েছে।



হজরত ইউনুস (আ.)-কে বর্তমান ইরাকের মসুল নগরীর নিকটবর্তী নিনাওয়া জনপদে নবী হিসেবে পাঠানো হয়েছিল। সুরা সাফফাতের ১৪৭নং আয়াতে এ সংক্রান্ত আলোচনা করা হয়েছে। তিনি মসুলবাসীকে আল্লাহর পথে ডাকলেন। হেদায়েতের পথপ্রদর্শন করলেন। ঈমান ও সৎকর্মের প্রতি আহ্বান করলেন। আখেরাতের বিষয়ে সতর্ক করলেন। জাহান্নামের ভীতি প্রদর্শন করলেন। জান্নাতের নাজ-নেয়ামতের কথা শোনালেন; কিন্তু তার সম্প্রদায়ের লোকজন অবাধ্যতা প্রদর্শন করল।


এক দিন-দুদিন করে দীর্ঘদিন অতিবাহিত হয়ে গেল। ইউনুস (আ.) তাদের ঈমান সম্পর্কে কিছুটা হতাশ হয়ে পড়লেন এবং তিন দিনের মধ্যে আল্লাহর আজাব তাদের ওপর নিপতিত হচ্ছে ঘোষণা দিয়ে নিজ এলাকা পরিত্যাগ করলেন। কিন্তু এলাকা পরিত্যাগ করার ক্ষেত্রে তিনি আল্লাহর নির্দেশের অপেক্ষা করেননি। এভাবে আল্লাহর নির্দেশের অপেক্ষা না করে নিজ উদ্যোগে বের হওয়াটা গুনাহ ছিল না, কিন্তু নবুয়তের শানের পরিপন্থি ছিল, যা আল্লাহর পছন্দ হয়নি। আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দাদের এমন ছোটখাটো বিচ্যুতিতেও বড় ধরপাকড় করেন।


হজরত ইউনুস (আ.) এলাকা পরিত্যাগ করার পর লোকজন উপলব্ধি করল যে, এবার নিশ্চিত আল্লাহর আজাব চলে আসবে। তাই তারা সবাই মিলে আল্লাহর কাছে তওবা করল। লোকালয় ছেড়ে বন-বাদাড়ের দিকে চলে গেল। গবাদিপশু ও শিশুদেরও সঙ্গে নিল। সেখানে সবাই কায়মনোবাক্যে আল্লাহর কাছে আশ্রয় ও ক্ষমা প্রার্থনা করল। তাদের খাঁটি তওবা ও কাকুতি-মিনতির কারণে আল্লাহ তাদের ওপর থেকে আজাব সরিয়ে নেন।


এলাকা পরিত্যাগের পর হজরত ইউনুস (আ.) ভাবছিলেন, তার সম্প্রদায় হয়তো আল্লাহর আজাবে ধ্বংস হয়ে গেছে। তিনি কল্পনাও করতে পারেননি যে, তারা তওবা করে আল্লাহর প্রতি ঈমান নিয়ে আসবে। ফলে তিনি যখন জানতে পারলেন, তারা সবাই ঈমান নিয়ে এসেছে, একদিকে তিনি বিস্মিত হলেন, অন্যদিকে ভীতসন্ত্রস্তও হলেন। ভীত হওয়ার কারণ ছিল, তিনি তাদের বলেছিলেন, তিন দিনের মধ্যে আল্লাহর আজাব আসবে। কিন্তু তাদের দোয়ার কারণে সেই আজাব সরে গেছে। সুতরাং তারা তাকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করে হত্যা করতে পারে। তৎকালে মিথ্যা বলার শাস্তি ছিল হত্যা। এই শঙ্কায় তিনি স্বদেশে না ফিরে দূরদেশে হিজরতের ইচ্ছা করলেন। এ উদ্দেশ্যে মানুষবোঝাই একটি নৌকায় চড়ে বসলেন। নৌকা মাঝনদীতে পৌঁছামাত্র প্রচণ্ড বেগে ঝড়-তুফান শুরু হলো। বিশাল বিশাল ঢেউয়ের ধাক্কায় নৌকা ডুবে যাওয়ার উপক্রম হলো। অবস্থা বেগতিক দেখে মাঝিরা বলল, এখানে মালিকের অবাধ্যতা করে কেউ নৌকায় আরোহণ করেছে। মাঝিদের বিশ^াস ছিল, কোনো অন্যায় কাজ করে কেউ নৌকায় আরোহণ করলে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়। সুতরাং তারা বলল, এমন কেউ থাকলে তাকে নদীতে ফেলে দিতে হবে, তা হলে অন্য যাত্রীরা এই বিপদ থেকে রক্ষা পাবে। তখন যাত্রীদের মধ্যে লটারি দেওয়া হলো। লটারিতে হজরত ইউনুস (আ.)-এর নাম এলো। তিনবার লটারি হলো, প্রতিবার তার নামই বেরিয়ে এলো। হজরত ইউনুস (আ.) নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়লেন। ইতোমধ্যে একটি বিশালদেহী মাছ এসে হজরত ইউনুসকে গিলে ফেলে। সেই মাছের প্রতি আল্লাহর নির্দেশ ছিল, হজরত ইউনুস (আ.)-এর অস্থিমজ্জার যেন ক্ষতি না হয়। সে তার খাদ্য নয়, তার উদর কিছু দিনের জন্য তার বন্দিখানা মাত্র।


মাছের উদরে গিয়ে তিনি একটি দোয়া পড়লেন। আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইলেন। ক্ষমা প্রার্থনা করলেন। তিনি বললেন, ‘লা ইলাহা ইল্লা আন্তা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জোয়ালিমিন।’ অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ! আপনি ছাড়া আমার কোনো ইলাহ নেই। আপনি চিরপবিত্র, নিশ্চয়ই আমি নিজের ওপর জুলুম করে ফেলেছি।’ এই দোয়ার বরকতে মাছের পেট থেকে আল্লাহ তাকে মুক্তি দেন, নতুবা মাছের পেটই তার সমাধি হতো। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যদি ইউনুস আল্লাহর তাসবিহ পাঠ না করতেন, তবে তাকে কেয়ামত দিবস পর্যন্ত মাছের উদরেই থাকতে হতো।’ (সুরা সাফফাত : ১৪৩-১৪৪)


কিছুদিন পর মাছ হজরত ইউনুস (আ.)-কে নদীতীরে উদ্গিরণ করে দিল। আল্লাহ তায়ালা সেখানে তার শারীরিক সুস্থতার জন্য লতাবিশিষ্ট বৃক্ষ উদগত করে দেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘অতঃপর আমি তাকে এক বিস্তীর্ণ-বিজন প্রান্তরে নিক্ষেপ করলাম, তখন তিনি ছিলেন রুগ্ণ। আমি তার জন্য এক লতাবিশিষ্ট বৃক্ষ উদগত করলাম।’ (সুরা সাফফাত : ১৪৫-১৪৬)

হজরত ইউনুস (আ.)-এর ঘটনা থেকে আমাদের শিক্ষণীয় বিষয় হলো- যেকোনো বিপদাপদে আল্লাহর দিকে মনোনিবেশ করা এবং তাঁর আশ্রয় কামনা করা। হাদিস শরিফে আছে, যেকোনো উদ্দেশ্য হাসিলের নিয়তে যদি কেউ ‘লা ইলাহা ইল্লা আন্তা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জোয়ালিমিন’ দোয়াটি পড়ে তবে আল্লাহ তার উদ্দেশ্য পূরণ করে দেন এবং বিপদ থেকে রক্ষা করেন। (তিরমিজি : ৩৫০৫; রুহুল মায়ানি : ৮/১০৯)। আল্লাহ এসব শিক্ষা আমাদের জীবনেও বাস্তবায়ন করার তাওফিক দিন।

আমিন।

Share this article :

Post a Comment

 
Support : Creating Website | Johny Template | Mas Template
Copyright © 2011. ইসলামী কথা - All Rights Reserved
Template Created by Creating Website Published by Mas Template
Proudly powered by Premium Blogger Template