السلام عليكم

যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার (তওবা) করবে আল্লাহ তাকে সব বিপদ থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন। [আবূ দাঊদ: ১৫২০; ইবন মাজা: ৩৮১৯]

‘মৃত সাগর’ আল্লাহর ক্রোধের নিদর্শন

| comments

ইতিহাসখ্যাত ‘মৃত সাগর’। ইংরেজিতে বলা হয় ‘ডেড সি’ (Dead Sea) এবং আরবদের কাছে তা ‘বাহরুল মায়্যিত’ নামে পরিচিত। বিজ্ঞানীদের মতে, প্রায় ২০ লাখ বছর আগে এ সাগরের উৎপত্তি। জর্দান নদীর সঙ্গে সংযুক্ত হলেও এটি মূলত একটি হ্রদ। ডেড সি বা মৃত সাগরের দৈর্ঘ্য ৬৭ কিলোমিটার, প্রস্থ ১৮ কিলোমিটার আর গভীরতা ১.২৪০ ফুট। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪২২ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত এ সাগরের পশ্চিমে রয়েছে ইসরায়েল ও পূর্বে জর্দান। এখান থেকে পবিত্র জেরুজালেম নগরীর দূরত্ব মাত্র ১৫ মাইল।

মৃত সাগর নানা বিচিত্র খনিজ পদার্থে ভরপুর। এতে প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়াম, সালফার, ব্রোমাইন ও কলগেন রয়েছে। মৃত সাগরের পানিতে ম্যাগনেশিয়াম ক্লোরাইড (MgCl2) ও সোডিয়াম ক্লোরাইডের (NaCl) পরিমাণ যথাক্রমে ৫০.৮ ও ৩০.৪ শতাংশ। এ সাগরের পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ ৩৩.৭ শতাংশ। পৃথিবীর অন্যান্য সাগর ও মহাসাগরের তুলনায় লবণাক্ততা বেশি হওয়ায় মৃত সাগরে কোনো মাছ জন্মায় না। জর্দান নদী থেকে মাছ এই নদীতে আসার সঙ্গে সঙ্গে মারা যায়। তবে আশ্চর্যজনকভাবে রয়েছে বিপুল ব্যাকটেরিয়া (Microbe) এবং ক্ষুদ্রকায় ছত্রাক (Encyclopadia Encarta, Chapter-Dead Sea)।

পবিত্র কোরআন ও হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী সমকামিতার মতো জঘন্য পাপ ও অপরাধে লিপ্ত হওয়ার কারণে সডম ও গোমাররাহ নামের লোকালয় মহান আল্লাহর হুকুমে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ধ্বংস হয়ে যায়। ঘটনাটি আজ থেকে প্রায় ছয় হাজার বছর আগের। ধ্বংসপ্রাপ্ত স্থানটি বর্তমানে মৃত সাগর নামে পরিচিত। আল্লাহর নবী হজরত লুত (আ.)-এর বারবার সাবধান বাণী সত্ত্বেও সে দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী অবৈধ যৌন সম্পর্ক ও সমকামিতার অভ্যাস পরিত্যাগ করেনি। পৃথিবীর বুকে একমাত্র তারাই যৌন ক্ষুধা চরিতার্থের উদ্দেশ্যে মহিলাদের বাদ দিয়ে পুরুষদের ওপর উপগত হতো। কোরআনুল কারিমে অত্যন্ত চমৎকারভাবে এই ঘটনা বিধৃত হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর আমি লুতকে পাঠিয়েছিলাম। তিনি তাঁর সম্প্রদায়কে বলেছিলেন, তোমরা এমন কুকর্ম করছ, যা তোমাদের আগে বিশ্বে কেউ করেনি। তোমরা তো কামতৃপ্তির জন্য নারী ছেড়ে পুরুষের কাছে গমন করো, তোমরা সীমা লঙ্ঘনকারী সম্প্রদায়।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৮০-৮১)

ফলে শাস্তি হিসেবে আল্লাহ তাআলা এ জনপদের চার লাখ মানুষকে বাস্তুভিটাসহ বিধ্বস্ত করে দেন। বর্তমান বিশ্বের খ্যাতনামা ইসলামী স্কলার মুফতি তাকি উসমানি মৃত সাগর পরিদর্শনের পর লেখেন, ‘আমেরিকার বিজ্ঞানীরা সমুদ্রের তলদেশে খননকার্য চালিয়ে মানুষের ব্যবহার্য পাথরের ঘটি, বাটি, চামচ উদ্ধার করেন। বিভিন্ন দেশ থেকে শত শত পর্যটক প্রতিদিন মৃত সাগর দেখার জন্য আসে এবং শিক্ষা গ্রহণ না করে বিনোদন ও ফুর্তিতে মেতে ওঠে।’ (মুফতি তাকি উসমানি, জাহানে দিদাহ, মৃত সাগর অধ্যায়)

অবৈধ যৌনমিলন, অনৈতিক যৌন সম্পর্ক ও সমকামিতার মতো অমানবিক কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকার জন্য আল্লাহ তাআলা মানবজাতিকে হুঁশিয়ার করেছেন। মানবগোষ্ঠীকে অশ্লীলতা, ব্যভিচার ও সমকামিতা থেকে বিরত থাকার জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কঠোর নির্দেশ প্রদান করেছেন। মহানবী (সা.) কিশোর-বালকদের চেহারার দিকে কুদৃষ্টিতে না দেখার নির্দেশ দিয়েছেন। কারণ তাদের চেহারায় বেহেশতের হুরের দীপ্তি আছে। তিনি বলেন, ‘আমার উম্মতের ব্যাপারে যেটা সবচেয়ে বেশি ভয় করি, তা হলো লুত সম্প্রদায়ের অনুরূপ পাপাচার। আমার উম্মতের কিছু লোক লুত জাতির অপকর্মে লিপ্ত হবে। যখন এরূপ হতে দেখবে তখন তাদের ওপরও অনুরূপ আজাব অবতরণের অপেক্ষা কোরো।’

লুত সম্প্রদায়ের মতো যারা সমকামিতায় লিপ্ত হবে, তাদের ওপর আল্লাহর অভিশাপ। নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা, জিনা, ব্যভিচার, সমকামিতা ও মাদক গ্রহণের মতো ঘৃণিত ও অশ্লীল কাজের ধারেকাছেও না যাওয়ার জন্য ইসলামের রয়েছে কঠোর হুঁশিয়ারি। পাপাচার শুধু নিষিদ্ধ করা হয়নি, বরং যেসব বিষয় ব্যভিচারের দিকে প্রলুব্ধ করে, তা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সার্বিক বিবেচনায় ইসলাম ধর্মে এগুলো গুরুতর অপরাধ হিসেবে বিবেচিত। অপরাধ যেমন ঘৃণ্য, শাস্তিও তদ্রূপ কঠিন ও কঠোর। (তাফসিরে মা’আরেফুল কোরআন, খণ্ড-৪, পৃষ্ঠা ৮০৬; মাওলানা হাকিম আখতার (রহ.), রুহ কি বিমারিয়াঁ, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা ১৯)

অনৈতিক যৌন সম্পর্ক ও সমকামিতার শাস্তিস্বরূপ সাম্প্রতিককালে দেখা দিয়েছে এইডস বা এইচআইভি। ‘এইডস’ মানে নিশ্চিত মৃত্যু। আজ পর্যন্ত এর কোনো কার্যকর ওষুধ আবিষ্কৃত হয়নি। ২০১৭ সাল পর্যন্ত এইডসে আক্রান্ত হয়ে তিন কোটি ৫০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে এবং এইচআইভিতে আক্রান্ত হয়েছে তিন কোটি ৭০ লাখ মানুষ। বাংলাদেশে এইডস রোগী শনাক্ত হয়েছে সর্বপ্রথম ১৯৮৯ সালে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে এইডসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ১১ হাজার ৭০০। এর মধ্যে মারা গেছে এক হাজার ২২ জন। প্রায় ছয় হাজার ৪৫৫ ব্যক্তি এইচআইভির জীবাণু বহন করছে। এইচআইভি সংক্রমণের প্রধান কারণ হচ্ছে অবৈধ যৌনমিলন ও সমকামিতা।

আল্লাহর এই শাস্তির হাত থেকে বাঁচার পথ হলো একনিষ্ঠ মনে তাওবা করা, তাকওয়া অর্জন, নফল রোজা পালন ও আল্লাহর ওলিদের সান্নিধ্য লাভ করা। ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ.) বলেন, কোনো জাতির মধ্যে যদি অবৈধ ও বিকৃত যৌনাচারের প্রকোপ বৃদ্ধি পায় তখন আল্লাহ তাআলা লুত সম্প্রদায়ের মতো বা এর চেয়ে আরো ভয়াবহ শাস্তি প্রদান করেন। ১৯৮৮ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক ড. হিরোশি নাকাজিমার মন্তব্য এই ক্ষেত্রে প্রণিধানযোগ্য : The spread of AIDS among the general population could mean the extermination of some community or even the disappearance of mankind.

‘সাধারণ জনগণের মধ্যে এইডসের বিস্তারের ফলে কিছু জাতিগোষ্ঠী ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। এমনকি সমগ্র মানবজাতিও বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে।’ (The New Straits Times, Kuala Lampur, Malaysia, June 23, 1988)

লেখক : ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন; অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, ওমর গণি এমইএস কলেজ, চট্টগ্রাম
Share this article :

Post a Comment

 
Support : Creating Website | Johny Template | Mas Template
Copyright © 2011. ইসলামী কথা - All Rights Reserved
Template Created by Creating Website Published by Mas Template
Proudly powered by Premium Blogger Template