السلام عليكم

যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার (তওবা) করবে আল্লাহ তাকে সব বিপদ থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন। [আবূ দাঊদ: ১৫২০; ইবন মাজা: ৩৮১৯]

হজরত সালেহ (আ.)-এর অলৌকিক উট

| comments

হজরত সালেহ (আ.) ছিলেন হজরত নুহ (আ.)-এর ছেলে সামের বংশধর। তার সম্প্রদায়ের নাম ছিল সামুদ। সামের অধস্তন বংশধরে একজন প্রতাপশালী লোক ছিল সামুদ। সেই বীরপুরুষের নামেই এই গোত্রের নামকরণ হয়। এই গোত্রের বসবাস ছিল সৌদি আরবের উত্তর-পশ্চিম প্রান্তে হিজর নামক স্থানে; সেই স্থানটি এখন ‘মাদায়েনে সালেহ’ নামে পরিচিত। সামুদ ছিল শক্তিশালী ও বীরের জাতি। প্রস্তর খোদাই ও স্থাপত্যবিদ্যায় তাদের বিশেষ পারদর্শিতা ছিল। পর্বত খোদাই করে তারা বাসস্থান নির্মাণ করত। মাদায়েনে সালেহ অঞ্চলে এখনও সেই আমলের স্থাপত্যের নিদর্শনাবলি ও সামুদি শিলালিপি বিদ্যমান রয়েছে।


সামুদ জাতিও প্রথমে আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী ছিল। কিন্তু কালের বিবর্তনে এক সময় আল্লাহ ও পরকালকে ভুলে যায় এবং মূর্তিপূজা শুরু করে এবং শিরকে লিপ্ত হয়। আল্লাহ তায়ালা স্বীয় চিরন্তন বিধান অনুযায়ী তাদের হেদায়েতের জন্য হজরত সালেহ (আ.)-কে নবী হিসেবে প্রেরণ করেন। হজরত সালেহ (আ.) ছিলেন সম্ভ্রান্ত, বিচক্ষণ, প্রজ্ঞাময়, জ্ঞানী ও পণ্ডিত ব্যক্তি। যতদিন তিনি অহিপ্রাপ্ত হননি এবং মূর্তিপূজা পরিত্যাগ করে আল্লাহর একত্ববাদের দিকে আহ্বান করেননি গোত্রের লোকজন ততদিন তাকে সমীহ ও মান্য করত। নবুয়ত লাভের পর তিনি তাদেরকে মূর্তিপূজা পরিত্যাগ করে এক আল্লাহর ইবাদত করতে আহ্বান করেন। তিনি বললেন, ‘হে আমার জাতি! আল্লাহর ইবাদত করো, তিনি ছাড়া তোমাদের কোনো উপাস্য নেই। তিনিই জমিন হতে তোমাদের সৃষ্টি করেছেন, তার মধ্যে তোমাদের বসতি দান করেছেন। অতএব তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো, অতঃপর তাঁরই দিকে ফিরে চলো। আমার পালনকর্তা নিকটেই আছেন। কবুল করে থাকেন, সন্দেহ নেই।’ (সুরা হুদ : ৬১)


সালেহ (আ.) ছিলেন বিশুদ্ধভাষী এবং উচ্চকণ্ঠের বাগ্মী। বড় বড় সমাবেশে তিনি দাওয়াতের কাজ করতেন। যুক্তির নিরিখে দরদি কণ্ঠে আল্লাহর বাণীসমূহ শোনাতেন। মূর্তিপূজার কঠিন পরিণতির কথা বলতেন। আখেরাতের কথা শোনাতেন। জান্নাতের নেয়ামতরাজির কথা বলে তাদের উদ্বুদ্ধ করতেন। জাহান্নামের ভীতি প্রদর্শন করতেন। কিন্তু গোত্রের লোকজন যেই মাত্র তার মুখে মূর্তিপূজার অসারতার বাণী শুনল, সঙ্গে সঙ্গে হজরত সালেহের প্রজ্ঞা ও পাণ্ডিত্য অস্বীকার করে বলল, ‘হে সালেহ! ইতঃপূর্বে তোমার কাছে আমাদের বড় আশা ছিল। আমাদের বাপ-দাদা যা পূজা করত তুমি কি আমাদেরকে তার পূজা করতে নিষেধ করো? কিন্তু যার প্রতি তুমি আমাদের আহ্বান করছ আমাদের তাতে এমন সন্দেহ রয়েছে যে, মন মোটেই সায় দিচ্ছে না।’ (সুরা হুদ : ৬২)। হজরত সালেহ (আ.) তাদেরকে বিভিন্নভাবে উপমা ও দৃষ্টান্ত বলে বলে বোঝাতে থাকলেন। বললেন, দুনিয়া চিরস্থায়ী বাসস্থান নয়। এখানকার ভোগবিলাস ক্ষণিকের মাত্র। সুতরাং তোমরা পরকালের চিন্তা করো।


কিন্তু সামুদ জাতির অধিকাংশ লোক হজরত সালেহ (আ.)-কে অস্বীকার করল। তবে যুক্তিতর্কে কোনোভাবেই যখন তারা হজরত সালেহ (আ.)-কে সত্যের দাওয়াত থেকে নিবৃত করতে পারল না তখন সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিল- তার কাছে অলৌকিক কোনো দাবি পেশ কববে। এক দিন তারা সবাই একত্রিত হয়ে হজরত সালেহকে বলল, আপনি যদি সত্যি আল্লাহর নবী হন তবে আমাদেরকে কাতেবা পাহাড়ের ভেতর থেকে দশ মাসের গর্ভবতী সবল ও স্বাস্থ্যবতী উষ্ট্রী বের করে দেখান। হজরত সালেহ (আ.) তাদের থেকে প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকার নিলেন, যদি আমি তোমাদের দাবি পূরণ করতে পারি তা হলে তোমরা আমার প্রতি ও আমার দাওয়াতের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে কি না? সবাই এই প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পর তিনি আল্লাহর কাছে দোয়া করলেন। আল্লাহ তায়ালা তার দোয়া কবুল করলেন। সেই পাহাড় ফেটে ভেতর থেকে তাদের দাবির অনুরূপ একটি গর্ভবতী উষ্ট্রী বের হয়ে এলো।


এই অলৌকিক উষ্ট্রী দেখে উপস্থিত অনেকেই হজরত সালেহ (আ.)-এর ওপর ঈমান নিয়ে আসে। কিন্তু এমন প্রকাশ্য মুজেজা প্রত্যক্ষ করেও কিছু হতভাগা ঈমান আনল না। হজরত সালেহ (আ.) তাদের সতর্ক করে বললেন, ‘আল্লাহর এই উষ্ট্রীটি তোমাদের জন্য আল্লাহর নিদর্শন। অতএব তাকে আল্লাহর জমিনে বিচরণ করতে দাও এবং তাকে মন্দভাবে স্পর্শও করো না। নতুবা অতিসত্বর তোমাদেরকে আজাব পাকড়াও করবে।’ (সুরা হুদ : ৬৪)। কিন্তু গোত্রের কিছু দুষ্কৃতকারী লোক এই অলৌকিক প্রাণীটি হত্যা করে ফেলে। হত্যা করেই তারা ক্ষান্ত হলো না, হজরত সালেহ (আ.)-এর কাছে এসে ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করে বলল, তুমি সত্যিকারের রাসুল হলে তোমার প্রতিশ্রুত আজাব আনো দেখি! আমরা তো উষ্ট্রীটি হত্যা করেছি। তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের ওপর শাস্তি নেমে আসে।


আল্লাহ তায়ালা সেই অবস্থার বিবরণ দিয়ে বলেন, ‘অতঃপর তারা উষ্ট্রীকে হত্যা করল এবং স্বীয় প্রতিপালকের আদেশ অমান্য করল। তারা বলল, হে সালেহ! নিয়ে এসো যা দ্বারা আমাদের ভয় দেখাতে, তুমি যদি রাসুল হয়ে থাকো। অতঃপর পাকড়াও করল তাদেরকে ভূমিকম্প। ফলে সকালবেলায় নিজ নিজ গৃহে উপুড় হয়ে পড়ে রইল।’ (সুরা আরাফ : ৭৭-৭৮)। অন্য আয়াতে আছে, তাদের ওপর প্রচণ্ড ও বিকট শব্দবোমা নিক্ষিপ্ত হয়েছিল। সামুদ সম্প্রদায়ের ওপর একই সঙ্গে ভূমিকম্প ও বিকট গর্জন এসেছিল এবং তারা এই দুটি শাস্তিতে মৃত্যুমুখে পতিত হয়।


যুগে যুগে আল্লাহ তায়ালা বহু নবী-রাসুল প্রেরণ করেছেন। তাদের মাধ্যমে পৃথিবীর মানুষদের হেদায়েত ও পথপ্রদর্শন করেছেন। যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলগণকে অস্বীকার করেছিল তাদের ভয়াবহ ও রোমহর্ষক পরিণতি হয়েছে। সেসব পরিণতির কিয়দংশ পরবর্তীদের শিক্ষার জন্য দৃষ্টান্তস্বরূপ রেখে দিয়েছেন। যেমন- ডেড সি, ফেরাউনের লাশ এবং হজরত সালেহ (আ.)-এর সম্প্রদায়ের বিধ্বস্ত বাড়িঘর। মানুষ যেন এসব নিদর্শন দেখে দাম্ভিকতা পরিত্যাগ করে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাঁর প্রতি সেজদাবনত হয়। আল্লাহ তায়ালা আমাদের শিক্ষা অর্জনের তৌফিক দান করুন। আমিন।

হযরত ইয়াহিয়া (আঃ)

| comments

একদা হযরত ইয়াহিয়া (আঃ) এর সাথে ইবলিশের দেখা হয় । ইবলিশের হস্তস্হিত একটি বস্তুর প্রতি ইঙ্গিত করে আল্লাহর নবী জিজ্ঞাসা করলেন, এটা কি তোমার হাতে ? ইবলিশ বললো, - এটা শাহওয়াত বা প্রবৃত্তির তাড়না । এটা দিয়ে আমি বনী আদমকে শিকার করে থাকি । হযরত ইয়াহিয়া (আঃ) জিজ্ঞেস করলেন, আমাকে শিকার করার জন্য কি তোমার কাছে কিছু আছে ? ইবলিশ বললো , - না; তবে এক রাত্রিতে আপনি পরিতৃপ্ত হয়ে ভোজন করেছিলেন, সেই সুযোগে আমি আপনাকে অবসাদ গ্রস্ত করে নামায হতে উদাসীন করে দিয়েছিলাম । হযরত ইয়াহিয়া (আঃ) বললেন, 'আজ থেকে আমি আর কোনদিন তৃপ্ত হয়ে আহার করবো না ।' ইবলিশ বললো,- তাহলে আমিও আজ থেকে আর কোনদিন বনী আদমকে নসীহত করবো না ।


হযরত সুলাইমান (আঃ) বলেছেন, 'যে ব্যাক্তি স্বীয় প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছে, সে দ্বিগ্বিজয়ী সেনাপতির চাইতেও বড় বাহাদুর ।'


মহানবী (সাঃ) বলেছেন, ' জঠর জ্বালার মাধ্যমে তুমি তোমার অন্তকরণকে জোর্তিময় করে তোল, ক্ষুধা ও তৃষ্ঞার অস্ত্রের মাধ্যমে তুমি তোমার রিপুর বিরুদ্ধে জিহাদে প্রবৃত্ত হও । ক্ষুধার সাহায্যে তুমি সদা বেহেশ্তের দরজায় কষাগাত করতে থাক । কেননা, এতে তোমার আমলনামায় জিহাদের সওয়াব লিপিবদ্ধ হবে । '


হযরত লোকমান হাকীম (রহঃ) স্বীয় পুত্রকে উপদেশ দিতে গিয়ে বলেছিলেন, -'অধিক মাত্রায় নিদ্রা ও ভোজন থেকে নিজকে বিরত রাখ । কেননা, অধিক নিদ্রাযাপনকারী ও অধিক ভোজনকারী কিয়ামতের দিন আমল ও ইবাদত শূন্য হবে ।'

সুত্রঃ মুকাশাফাতুল ক্বুলুব । হযরত ইমাম গাজ্জ্বালী (রহঃ)

হযরত ইসহাক (আঃ)

| comments

হযরত ইসহাক ছিলেন ইবরাহীম (আঃ)-এর প্রথমা স্ত্রী সারাহ-এর গর্ভজাত একমাত্র পুত্র। তিনি ছিলেন হযরত ইসমাঈল (আঃ)-এর চৌদ্দ বছরের ছোট। এই সময় সারাহর বয়স ছিল ৯০ এবং ইবরাহীমের বয়স ছিল ১০০। অতি বার্ধ্যক্যের হতাশ বয়সে বন্ধ্যা নারী সারাহ্-কে ইসহাক জন্মের সুসংবাদ নিয়ে ফেরেশতারা আগমন করেছিলেন ইব্রাহীম (আঃ)-এর কাছে । পবিত্র কুরআনে আকর্ষণীয় ভঙ্গীতে এ বিষয়ে আলোচিত হয়েছে সূরা হূদ ৭১-৭৩ আয়াতে, হিজর ৫১-৫৬ আয়াতে এবং যারিয়াত ২৪-৩০ আয়াতে- যা আমরা ইবরাহীমের জীবনীতে বর্ণনা করেছি। আল্লাহ ইসমাঈলকে দিয়ে যেমন মক্কার জনপদকে তাওহীদের আলোকে উদ্ভাসিত করেছিলেন, তেমনি ইসহাক্বকে নবুঅত দান করে তার মাধ্যমে শাম-এর বিস্থির্ণ এলাকা আবাদ করেছিলেন।


হযরত ইবরাহীম (আঃ) স্বীয় জীবদ্দশায় পুত্র ইসহাক্বকে বিয়ে দিয়েছিলেন রাফক্বা বিনতে বাতওয়াঈল (رفقا بنت بتوائيل )-এর সাথে। কিন্তু তিনিও বন্ধ্যা ছিলেন। পরে ইবরাহীমের খাছ দো‘আর বরকতে তিনি সন্তান লাভ করেন এবং তাঁর গর্ভে ঈছ ও ইয়াকূব নামে পরপর দু’টি পুত্র সন্তান জন্ম লাভ করে। তার মধ্যে ইয়াকূব নবী হন। পরে ইয়াকূবের বংশধর হিসাবে বনু ইস্রাঈলের হাযার হাযার নবী পৃথিবীকে তাওহীদের আলোকে আলোকিত করেন। কিন্তু ইহুদী নেতাদের হঠকারিতার কারণে তারা আল্লাহর গযবে পতিত হয় এবং অভিশপ্ত জাতি হিসাবে নিন্দিত হয়। যা ক্বিয়ামত পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।


ইসহাক্ব (আঃ) ১৮০ বছর বয়স পান। তিনি কেন‘আনে মৃত্যুবরণ করেন এবং পুত্র ঈছ ও ইয়াকূবের মাধ্যমে হেবরনে পিতা ইবরাহীমের কবরের পাশে সমাহিত হন। স্থানটি এখন ‘আল-খালীল’ নামে পরিচিত’।


উল্লেখ্য যে, হযরত ইসহাক্ব (আঃ) সম্পর্কে পবিত্র কুরআনের ১৪টি সূরায় ৩৪টি আয়াতে বর্ণিত হয়েছে।

হযরত ইলিয়াস (আ.)-এর জীবনী

| comments

পবিত্র কুরআনে মাত্র দু’জায়গায় হযরত ইলিয়াস (আঃ)-এর আলোচনা দেখা যায়।


 সূরা আন‘আম ৮৫ আয়াতে ও সূরা ছাফফাত ১২৩-১৩২ আয়াতে। সূরা আন‘আমে ৮৩-৮৫ আয়াতে ১৮ জন নবীর তালিকায় তাঁর নাম রয়েছে। সেখানে কোন আলোচনা স্থান পায়নি। তবে সূরা ছাফফাতে সংক্ষেপে হ’লেও তাঁর দাওয়াতের বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। ঐতিহাসিক বর্ণনায় এ বিষয়ে প্রায় সবাই একমত যে, তিনি হযরত হিয্ক্বীল (আঃ)-এর পর এবং হযরত আল-ইয়াসা‘ (আঃ)-এর পূর্বে দামেষ্কের পশ্চিমে বা‘লা বাক্কা (بعلبك) অঞ্চলের বনু ইস্রাঈলগণের প্রতি প্রেরিত হয়েছিলেন। এই সময় হযরত সুলায়মান (আঃ)-এর উত্তরসুরীদের অপকর্মের দরুণ বনু ইস্রাঈলের সাম্রাজ্য দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছিল। এক ভাগকে ‘ইয়াহূদিয়াহ’ বলা হ’ত এবং তাদের রাজধানী ছিল বায়তুল মুক্বাদ্দাসে। অপর ভাগের নাম ছিল ‘ইস্রাঈল’ এবং তাদের রাজধানী ছিল তৎকালীন সামেরাহ এবং বর্তমান নাবলুসে। ইলিয়াসের জন্মস্থান : হযরত ইলিয়াস (আঃ) ফিলিস্তীনের পার্শ্ববর্তী জর্ডানের আল‘আদ নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন। আল্লাহ পাক তাঁকে নবী হিসাবে মনোনীত করেন এবং ফিলিস্তীন অঞ্চলে তাওহীদের প্রচার ও প্রসারের নির্দেশ দান করেন। ফিলিস্তীনের ধর্মীয় ও সামাজিক অবস্থা : এই সময় ফিলিস্তীনের বায়তুল মুক্বাদ্দাস ও নাবলুস অঞ্চলে বনু ইস্রাঈলদের দুই গ্রুপের দু’টি রাজধানী ছিল। তারা আপোষে পরস্পরে মারমুখী ছিল। ফেলে আসা নবুঅতী সমাজ ব্যবস্থা থেকে তারা অনেক দূরে একটি পতিত সমাজে পরিণত হয়েছিল। কিতাবধারী ও কিতাবহীন জাহেলী সমাজের মধ্যে পার্থক্য করার কোন উপায় ছিল না। তখনকার ‘ইস্রাঈল’-এর শাসনকর্তার নাম ছিল ‘আখিয়াব’ বা ‘আখীব’। তার স্ত্রী ছিল ‘ইযবীল’। যে বা‘ল (بعل) নামক এক দেবমূর্তির পূজা করত। সে বা‘ল মূর্তির নামে এক বিশাল উপাসনালয় তৈরী করে এবং সেখানে সকল বনু ইস্রাঈলকে মূর্তিপূজায় আহবান করে। দলে দলে লোক সেদিকে আকৃষ্ট হচ্ছিল। মূসা-হারূণ, দাঊদ ও সুলায়মান নবীর উম্মতেরা বিনা দ্বিধায় শিরকের মহাপাতকে আত্মাহুতি দিচ্ছিল। এমন এক মর্মান্তিক অবস্থায় আল্লাহ পাক তাদের নিকটে তাওহীদের বাণী প্রচারের জন্য ইলিয়াসকে নবী হিসাবে প্রেরণ করেন। ইলিয়াসের দাওয়াত : শিরকে আচ্ছন্ন ফিলিস্তীনবাসীকে হযরত ইলিয়াস (আঃ) তাওহীদের দাওয়াত দেন এবং শিরক পরিত্যাগ করার আহবান জানান। কেননা শিরক ও তাওহীদের একত্র সহাবস্থান কখনোই সম্ভব নয়। ইলিয়াস ও তাঁর দাওয়াত সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, وَإِنَّ إِلْيَاسَ لَمِنَ الْمُرْسَلِيْنَ- إِذْ قَالَ لِقَوْمِهِ أَلاَ تَتَّقُوْنَ- أَتَدْعُوْنَ بَعْلاً وَتَذَرُوْنَ أَحْسَنَ الْخَالِقِيْنَ- اللهَ رَبَّكُمْ وَرَبَّ آبَائِكُمُ الْأَوَّلِيْنَ- فَكَذَّبُوْهُ فَإِنَّهُمْ لَمُحْضَرُوْنَ- إِلاَّ عِبَادَ اللهِ الْمُخْلَصِيْنَ- وَتَرَكْنَا عَلَيْهِ فِي الْآخِرِيْنَ- سَلاَمٌ عَلَى إِلْ يَاسِيْنَ- إِنَّا كَذَلِكَ نَجْزِي الْمُحْسِنِيْنَ- إِنَّهُ مِنْ عِبَادِنَا الْمُؤْمِنِيْنَ- (الصافات ১২৩-১৩২)- ‘নিশ্চয়ই ইলিয়াস ছিল প্রেরিত রাসূলগণের অন্যতম’ (ছাফফাত ১২৩)। ‘যখন সে তার সম্প্রদায়কে বলল, তোমরা কি ভয় কর না’? (১২৪) ‘তোমরা কি বা‘ল দেবতার পূজা করবে আর সর্বোত্তম স্রষ্টাকে পরিত্যাগ করবে’? (১২৫) ‘যিনি আল্লাহ, তোমাদের পালনকর্তা ও তোমাদের পূর্বপুরুষদের পালনকর্তা’ (১২৬)। ‘অতঃপর তারা তাঁকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করল। অতএব তারা অবশ্যই গ্রেফতার হয়ে আসবে’ (১২৭)। ‘কিন্তু আল্লাহর খাঁটি বান্দাগণ ব্যতীত’ (১২৮)। আমরা এই নিয়মের উপরে পরবর্তীদেরকেও রেখে দিয়েছি’ (১২৯)। ‘ইলিয়াস-এর উপরে শান্তি বর্ষিত হৌক’ (১৩০)। ‘এভাবেই আমরা সৎকর্মীদের প্রতিদান দিয়ে থাকি’ (১৩১)। ‘নিশ্চয়ই ইলিয়াস ছিল আমাদের বিশ্বাসী বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত’ (ছাফফাত ৩৭/১২৩-১৩২)। দাওয়াতের ফলশ্রুতি : বিগত নবীগণের যে দুরবস্থা হয়েছিল, ইলিয়াস (আঃ)-এর ভাগ্যে তার ব্যতিক্রম হয়নি। তিনি ইস্রাঈলের শাসক আখিয়াব ও তার প্রজাবৃন্দকে বা‘ল দেবমূর্তির পূজা করতে নিষেধ করলেন এবং এক আল্লাহর প্রতি ইবাদতের আহবান জানালেন। কিন্তু দু’একজন হকপন্থী ব্যক্তি ছাড়া কেউ তাঁর কথায় কর্ণপাত করল না। তারা ইলিয়াস (আঃ)-এর বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচারে লিপ্ত হ’ল। তাকে যত্রতত্র অপমান-অপদস্থ করা শুরু করল। এমনকি দৈহিক নির্যাতনও শুরু হয়ে গেল। কিন্তু ইলিয়াস (আঃ) তাঁর দাওয়াত চালিয়ে যেতে থাকেন। অবশেষে রাজা ও রাণী তাঁকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেন। ফলে তিনি রাজধানী ছেড়ে অনেক দূরে এক পাহাড়ের গুহায় আত্মগোপন করলেন এবং দুর্ভিক্ষ নাযিলের জন্য আল্লাহর নিকটে প্রার্থনা করলেন। ফলে সারা দেশে ব্যাপক দুর্ভিক্ষ দেখা দিল। ইলিয়াস (আঃ) মনে করলেন দুর্ভিক্ষ দূর করার জন্য তিনি যদি তাদেরকে মো‘জেযা প্রদর্শন করেন, তাহ’লে হয়ত তারা শিরক বর্জন করে তাওহীদ কবুল করবে এবং এক আল্লাহর ইবাদতে ফিরে আসবে। বাদশাহর দরবারে ইলিয়াসের উপস্থিতি : আল্লাহর হুকুমে হযরত ইলিয়াস (আঃ) তাওহীদের দাওয়াত নিয়ে সরাসরি ইস্রাঈলের বাদশাহ আখিয়াবের দরবারে হাযির হ’লেন। তিনি বললেন, দেশব্যাপী এই দুর্ভিক্ষের কারণ হ’ল আল্লাহর নাফরমানী। তোমরা নাফরমানী থেকে বিরত হ’লে এ আযাব দূর হ’তে পারে। তোমরা বলে থাক যে, তোমাদের বা‘ল দেবতার নাকি সাড়ে চারশ’ নবী (!) আছে। তাই যদি হয়, তাহ’লে তুমি তাদের সবাইকে একত্রিত কর। তারা এই দুর্ভিক্ষ দূর করার জন্য বা‘ল দেবতার নামে কুরবানী করুক। আর আমি একই উদ্দেশ্যে আল্লাহর নামে কুরবানী পেশ করি। যার কুরবানী আসমান থেকে আগুন এসে ভস্ম করে দেবে, তার ধর্মই সত্য বলে গণ্য হবে। ইলিয়াস (আঃ)-এর এ প্রস্তাব সবাই সানন্দে মেনে নিল। আল্লাহ ও বা‘ল দেবতার নামে কুরবানীর ঘটনা : পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ‘কোহে কারমাল’ নামক পাহাড়ী উপত্যকায় সকলে সমবেত হ’ল। বা‘ল দেবতার নামে তার মিথ্যা নবীরা কুরবানী পেশ করল। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বা‘ল দেবতার উদ্দেশ্যে আকুতি-মিনতি ও কান্নাকাটি করে প্রার্থনা করা হ’ল। কিন্তু দেবতার কোন সাড়া পাওয়া গেল না। আসমান থেকে কোন আগুন নাযিল হ’ল না। অতঃপর হযরত ইলিয়াস (আঃ) আল্লাহর নামে কুরবানী করলেন এবং যথাসময়ে আসমান থেকে আগুন এসে তা খেয়ে গেল। বস্ত্ততঃ এটাই ছিল কুরবানী কবুল হওয়ার নিদর্শন। এভাবেই কবুল হয়েছিল আদমপুত্র হাবীলের কুরবানী। তখনকার সময় মুশরিকদের মধ্যেও এ রীতি গ্রহণযোগ্য ছিল, যা ইলিয়াসের বর্তমান ঘটনায় প্রমাণিত হয়। আসমান থেকে আগুন এসে কুরবানী কবুলের এই অভাবনীয় দৃশ্য দেখে অনেকে সাথে সাথে সিজদায় পড়ে গেল এবং ইলিয়াসের দ্বীন কবুল করে নিল। সকলের নিকটে ইলিয়াস (আঃ)-এর সত্যতা স্পষ্ট হয়ে গেল। কিন্তু বা‘ল পূজারী কথিত ধর্মনেতারা তাদের যিদের উপরে অটল রইল। এইসব মিথ্যা নবীরা ও তাদের স্বার্থান্ধ অনুসারীরা ঈমান আনল না। ইলিয়াস (আঃ)-কে পুনরায় হত্যার ষড়যন্ত্র : ওদিকে আখিয়াবের স্ত্রী ইখবীল হযরত ইলিয়াস (আঃ)-কে পুনরায় হত্যার চক্রান্ত শুরু করে দিল। ফলে তিনি রাজধানী সামেরাহ (নাবলুস) ছেড়ে চলে গেলেন এবং কিছুদিন পর বনু ইস্রাঈলের অপর রাজ্য পার্শ্ববর্তী ইয়াহূদিয়াহতে উপস্থিত হ’লেন। ঐসময় বা‘ল পূজার ঢেউ এখানেও লেগেছিল। হযরত ইলিয়াস (আঃ) সেখানে পৌঁছে তাওহীদের দাওয়াত শুরু করলেন। সেখানকার সম্রাট ‘ইহুরাম’-এর কাছেও তিনি দাওয়াত দিলেন। কিন্তু নিরাশ হ’লেন। অবশেষে তাঁর ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী সে ধ্বংসপ্রাপ্ত হ’ল। কয়েক বছর পর ইলিয়াস (আঃ) পুনরায় ‘ইস্রাঈলে’ ফিরে এলেন এবং ‘আখিয়াব’ ও তার পুত্র ‘আখযিয়া’-কে সত্য পথে আনার চেষ্টা করলেন। কিন্তু তারা তাদের শিরকী ধ্যান-ধারণায় অটল রইল। অবশেষে তাদের উপরে বৈদেশিক আক্রমণ ও মারাত্মক রোগ-ব্যধির গযব নাযিল হ’ল। অতঃপর আল্লাহ পাক তাঁর নবীকে উঠিয়ে নিলেন। হযরত ইলিয়াস (আঃ) জীবিত আছেন কি? সুয়ূত্বী, ইবনে আসাকির, হাকেম প্রমুখের বিভিন্ন বর্ণনায় প্রতীয়মান হয় যে, চারজন নবী জীবিত আছেন। তন্মধ্যে খিযির ও ইলিয়াস দুনিয়াতে এবং ইদরীস ও ঈসা আসমানে রয়েছেন। কিন্তু হাকেম ও ইবনু কাছীর এসব বর্ণনাকে বিশুদ্ধ বলেননি। সারকথা, হযরত ইলিয়াস (আঃ)-এর জীবিত থাকার বিষয়টি কোন ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত নয়। অতএব এসব বর্ণনার প্রতি কর্ণপাত করার কোন প্রয়োজন নেই। ইলিয়াস (আঃ) স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় মৃত্যুবরণ করেছেন বলেই আমরা বিশ্বাস করব।

হযরত আদম (আ:)

| comments

ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী আল্লাহর সৃষ্ট প্রথম মানব হলেন আদম (আ:)।পবিত্র কুরআনের বর্ণিত রয়েছে আল্লাহ বলেন,”নিশ্চয়ই আমি তাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছি, তারপর তার দেহে প্রাণ সঞ্চার করেছি”। আদম (আ:) এর পাঁজর থেকে সৃষ্টি করা হয় হাওয়া (আ:) কে। সৃষ্টির পর তাদের আবাস হয় বেহেশত বা জান্নাতে । মানুষ যেহেতু সকল সৃষ্টির সেরা তাই আদমকে সিজদা করার জন্য ফেরেশতাকুল কে আল্লাহ আদেশ দেন। আল্লাহর এই আদেশ সকল ফেরেশতাকুল প্রতিপালন করেন কিন্তু ইবলিশ তা অমান্য করেন। ফলে আল্লাহ ইবলিশকে জান্নাত থেকে বের করে শয়তান বানিয়ে দেন।

আবূ হূরায়রা থেকে বর্ণিত যে, হযরত মুহাম্মদ (সা:) বলেন, যখন আল্লাহ আদমকে সৃষ্টি করেছিলেন তখন তার উচ্চতা ছিল ৬০ কিউবিট বা হাত এবং বেহেশতে প্রবেশকালে আদম (আ:) এর আকার লাভ করবে মানুষ জাতি।


সৃষ্টির পর আদম (আ:) ও হাওয়ার (আ:) অবস্থান ছিল জান্নাতে। তাদের জন্য সেখানে এক ধরনের বিশেষ ফল(গন্দম) খাওয়া নিষিদ্ধ ছিল। আদম এবং হাওয়া উভয়ই শয়তানের প্রোচনায় এসে গন্দম ফল খেয়ে ফেলেন।


এটি মানুষের আদিপাপ বলে পরিগণিত হয়। মহান আল্লাহ এর শাস্তি স্বরূপ তাদেরকে বেহেশ্ত থেকে বিতাড়িত করেন এবং পৃথিবীতে পাঠিয়ে দেন। আদম (আ:)পৃথিবীতে শত শত বছর আল্লাহর কাছে তওবা করেন তাদের ভুলের জন্য। পবিত্র কুরআনে আছে, আদম আল্লাহর কাছে এই দোয়া করতেন


“রাব্বানা যালামনা আনফুসানা ওয়া ইল্লাম তাগফিরলানা ওয়া তারহামনা লানা কূনান্না মিনাল খাসেরীন”


অর্থাৎ”আল্লাহ ভুল করেছি,গুনা করেছি,অপরাধ করেছি তুমি যদি মাফ না করো মাফ করার কেহ নাই”


এই দোয়া করে তিনি চোখের পানি ফেলে ফেলে আল্লাহর কাছে তওবা করতেন। মহান আল্লাহ তাআলা আদম কে ক্ষমা করে দেন।


আদম (আ:) এবং হাওয়া (আ:) অবতরণ করেন পৃথিবীর ভিন্ন দুটি স্থানে। আদম অবতরণ করেন সিংহলে আর হাওয়া অবতরণ করেন হিজাযে। আরবের আরাফাত নামক প্রান্তরে


দীর্ঘদিন পর পুনর্মিলন হয় তাদের। আল্লাহর তরফ থেকে পৃথিবীতে আগমনের পর আদম (আ:) ও হাওয়া (আ:)কে কাবাগৃহ নির্মাণের আদেশ প্রদান করা হয়। ক্বাবা নির্মিত হয়ে গেলে তাদেরকে তা তাওয়াফ করার আদেশ দেয়া হয়। আদমের নিঃসঙ্গতা দূরীকরণের জন্য হাওয়াকে সৃষ্টি করা হয় তার বাম পাঁজরের হাড় থেকে। হাওয়া ছিলেন তার স্ত্রী। পৃথিবীতে আগমনের পর ১৪০ জোড়া সন্তান হয় তাদের। ইসলামের ইতিহাসে , ইসলামের শিক্ষায় , ইসলামী জীবনীতে আমার হযরত আদম (আ:) সম্পর্কে আরো অনেক কিছুই জানার আছে।

হজরত ইসমাইল (আ.)

| comments

আল্লাহপাক কোরআন মজিদে এই ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন এভাবে- আল্লাহর নবী হজরত ইবরাহিম (আ.) ছেলে ইসমাইলকে বললেন যে, ‘হে আমার প্রিয় বৎস! আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, আমি তোমাকে জবাই করছি। এ ব্যাপারে তোমার মতামত কী, ভেবে দেখ? ইসমাইল (আ.) সঙ্গে সঙ্গে বললেন, ইয়া আবাতিফ আল মা তু-মার, সাতাজিদুনি ইনশাআল্লাহু মিনাস সোয়াবেরিন।’ ‘আব্বাজান! যে আদেশ আপনার প্রতি এসেছে, তা আপনি কার্যকর করুন। আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের মধ্যে পাবেন, ইনশাআল্লাহ।’ যেমন বাবা তেমন ছেলে। কথায় বলে ‘বাপ কা বেটা’। ইনশাআল্লাহ-এর আক্ষরিক তরজমা ‘আল্লাহ যদি চান’। ইসমাইল (আ.) বরকত হাসিলের জন্যই আল্লাহর ইচ্ছার সঙ্গে নিজের মত ও সিদ্ধান্তকে যুক্ত করেছেন। অন্যথায় তার সিদ্ধান্তটি ছিল অবিচল। মনে কোনো সংশয় রেখে বলেননি যে, আল্লাহ যদি চান। এভাবে পিতাণ্ডপুত্র উভয়ে নিজেকে সমর্পণ করলেন।


‘ফালাম্মা আসলমা’- ‘অতঃপর তারা যখন আল্লাহর আদেশের সামনে মাথা নত করে দিলেন।’ ‘ওয়াতাল্লাহু লিল জাবিন’- ‘আর তাকে (ইসমাইলকে) শুইয়ে দিলেন (মাটির ওপরে) কপাল-পার্শ্ব রেখে।’ কপালের এক পার্শ্বকে বলা হয় জাবিন। অর্থাৎ কাত করে শোয়ালেন। এই দৃশ্য বড় হৃদয়বিদারক। তখন ইবরাহিম (আ.) বললেন, হে বৎস! তুমি আল্লাহর হুকুম পালনে আমার বড় সহায় হলে। অতঃপর ছেলে যা যা বললেন, ইবরাহিম আঞ্জাম দিলেন।


কোরআন মজিদ তার বর্ণনা দিয়েছে এভাবে- ‘ওয়া না-দাইনাহু আঁই ইয়া ইবরাহিম, ক্বাদ সাদ্দাকতার রু-য়া ইন্না কাজালিকা নাজজিল মুহসিনিন।’ ‘আমি তাকে ডাক দিয়ে বললাম, হে ইবরাহিম! তোমার স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করেছ। এভাবেই আমি আমার সত্যনিষ্ঠ বান্দাদের প্রতিদান দিয়ে থাকি।’ ইবরাহিম (আ.) মাথা তুলে চোখের বাঁধন খুলে দেখলেন, পাহাড়ের ওপর থেকে একটি দুম্বা নেমে আসছে, দেখতে হৃষ্টপুষ্ট। অন্তত চল্লিশ বসন্ত বেহেশতের চারণভূমিতে বিচরণ করেছে। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, এই দুম্বা ছিল হজরত আদম (আ.) এর ছেলে হাবিলের দেওয়া কোরবানি, যা আল্লাহর দরবারে কবুল হয়েছিল। জান্নাত কাননে তা পালিত হয়েছে। এজন্য আল্লাহপাক একে ‘জিবহিন আজিম’ মহা মর্যাদাবান কোরবানি বলে অভিহিত করেছেন।


জিবরাইল (আ.) বললেন, এই দুম্বা আপনার ছেলের পরিবর্তে উৎসর্গিত। ইসমাইলের পরিবর্তে এটি জবাই করেন। তখন জিবরাইল (আ.) তাকবির ধ্বনি দিলেন, ‘আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার’। ইবরাহিম (আ.) তাকে অনুসরণ করে বললেন, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার’। সঙ্গে সঙ্গে ইসমাইল (আ.) ও বললেন, ‘আল্লাহু আকবার ওয়ালিল্লা হিল হামদ’। এই তাকবির নিয়মে পরিণত হয় ঈদের দিনগুলোতে ও হজের সময়ের জন্য। (তাফসিরে কাশফুল আসরার অষ্টম খণ্ড : পৃ. ২৯৩)।

নবী ইবরাহীম (আ) এর অগ্নি পরীক্ষা

| comments

ইবরাহীম (আ) এর সাথে যখন যুক্তি ও বিতর্কে এঁটে উঠতে পারলো না, তাদের পক্ষে পেশ করার মত কোন দলীল-প্রমাণ থাকল না, তখন তারা বিতর্কের পথ এড়িয়ে শক্তি ও ক্ষমতা প্রয়োগের পথ অবলম্বন করে- যাতে করে নিজেদের নির্বুদ্ধিতা ও হঠকারিতা টিকিয়ে রাখতে পারে। অতঃপর আল্লাহ্ সুবাহানহুয়া তা'আলা তাদের চক্রান্তকে ব্যর্থ করে দেয়ার কৌশল গ্রহণ করেন।


'তারা বলল, একে পুড়িয়ে দাও এবং তোমাদের উপাস্যদের সাহায্য কর, যদি তোমরা কিছু করতে চাও। আমি বললাম, হে অগ্নি! তুমি ইব্রাহীমের উপর শীতল ও নিরাপদ হয়ে যাও। তারা ইব্রাহীমের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করল, অতঃপর আমি তাদেরকেই সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্থ করে দিলাম।' -[ক্বুরআন ২১ : ৬৮-৭০]


তারা বিভিন্ন স্থান থেকে সম্ভাব্য চেষ্টার মাধ্যমে জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করতে থাকে। দীর্ঘদিন পর্যন্ত তারা এ সংগ্রহের কাজে রত থাকে। তাদের মধ্যে কোন মহিলা পীড়িত হলে মানত করত যে, যদি সে আরোগ্য লাভ করে তবে ইবরাহীম (আ) কে পোড়াবার লাকড়ি সংগ্রহ করে দেবে। এরপর তারা বিরাট এক গর্ত তৈরী করে তার মধ্যে লাকড়ি নিক্ষেপ করে অগ্নি সংযোগ করে। ফলে তীব্র দাহনে প্রজ্বলিত অগ্নিশিখা এত উর্ধে উঠতে থাকে, যার কোন তুলনা হয় না। তারপর ইবরাহীম (আ) কে মিনজানীক নামক নিক্ষেপণ যন্ত্রে বসিয়ে দেয়।



এ যন্ত্রটি কুর্দী সম্প্রদায়ের হাযান নামক এক ব্যক্তি তৈরী করে। মিনজানীক যন্ত্র সে-ই প্রথম আবিষ্কার করে। আল্লাহ্ তাকে মাটির মধ্যে ধসিয়ে দেন। কিয়ামত পর্যন্ত সে মাটির মধ্যে তলিয়ে যেতে থাকবে। তারপর তারা ইবরাহীম (আ) কে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে টেনে হেঁচড়ে নিয়ে যেতে থাকে। তখন তিনি বলতে থাকেন-

'আপনি (আল্লাহ্) ব্যতীত আর কোন ইলাহ নেই, আপনি মহা পবিত্র, বাদশাহীর মালিক কেবল আপনিই, আপনার কোন শরীক নেই।'


অতঃপর তারা ইবরাহীম (আ) কে মিনজানীকের পাল্লায় হাত-পা বাঁধা অবস্থায় রেখে আগুনে নিক্ষেপ করে। তখন তিনি বলেন-

'আমার জন্য আল্লাহ্-ই যথেষ্ট, তিনি উত্তম অভিভাবক।'


আবু ইয়ালা (র)... আবু হুরায়রা (রা) সূত্রে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, ইবরাহীম (আ) কে যখন আগুনে নিক্ষেপ করা হয় তখন তিনি এ দু'আটি পড়েন-

'হে আল্লাহ্! আপনি আকাশ রাজ্যে একা আর এই যমীনে আমি একাই আপনার ইবাদাত করছি।'


পূর্ববর্তী যুগের কোন কোন আলিম বলেন, জিবরাঈল (আ) শূন্য থেকে ইবরাহীম (আ) কে বলেছিলেন- আপনার কোন সাহায্যের প্রয়োজন আছে কি? উত্তরে ইবরাহীম (আ) বলেছিলেন- সাহায্যের প্রয়োজন আছে, তবে আপনার কাছে নয় (আল্লাহর কাছে)।


আর আল্লাহর নির্দেশ বাণী অধিক দ্রুত গতিতেই পৌঁছে যায় -

'(আল্লাহ্ বলেন) আমি বললাম, হে আগুন! তুমি ইবরাহীমের উপর শান্তিদায়ক হয়ে যাও।'


ইবরাহীম (আ) যখন প্রাচীর বেষ্টনীর মধ্যকার উক্ত গহ্বরে অবস্থান করছিলেন, তখন তার চতুষ্পার্শ্বে আগুনের লেলিহান শিখা দাউ দাউ করছিল, অথচ তিনি ছিলেন শান্তি ও নিরাপদে।


আবু হুরায়রা (রা) বলেন, ইবরাহীম (আ) এর পিতা আপন পুত্রের এ অবস্থা দেখে একটি উত্তম কথা বলেছিল, তা হল-

'হে ইবরাহীম! তোমার প্রতিপালক কতই না উত্তম প্রতিপালক।'


তথ্যসূত্র: আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ১ম খণ্ড

 
Support : Creating Website | Johny Template | Mas Template
Copyright © 2011. ইসলামী কথা - All Rights Reserved
Template Created by Creating Website Published by Mas Template
Proudly powered by Premium Blogger Template