السلام عليكم

যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার (তওবা) করবে আল্লাহ তাকে সব বিপদ থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন। [আবূ দাঊদ: ১৫২০; ইবন মাজা: ৩৮১৯]

হজরত নুহের (আ.) মহাপ্লাবনের ঘটনা

| comments

হজরত আদমের (আ.) ইন্তেকালের পর অনেকদিন পেরিয়ে গেছে। শয়তানের ধোঁকায় মানুষ ধীরে ধীরে ‎মূর্তিপূজা করতে শুরু করেছে। এমন সময় আল্লাহ তাআলা তাদের মাঝে একজন নবী পাঠান—যিনি এক ‎আল্লাহর দাওয়াত দেন, শিরক না করার নসিহত করেন। তার নাম হজরত নুহ (আ.)।


কুরআনে তার নামে ‎একটি সুরা আছে এবং ২৮টি সুরায় ৮১টি আয়াতে তার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।



হজরত নুহ (আ.) সাড়ে নয়শো বছর বেঁচে ছিলেন। ‎ এই দীর্ঘ সময়কালে অক্লান্তভাবে তিনি কেবল ‎দাওয়াতি কার্যক্রম চালিয়ে গেছেন। কী সকাল, কী বিকাল; কী দিন, কী রাত; প্রকাশ্যে কিংবা চুপিসারে—‎তিনি শুধু এ কথাই বলে গেছেন, ‘হে আমার জাতি, তোমরা আল্লাহর এবাদত করো, তিনি ছাড়া আর ‎কোনো ইলাহ নাই। তবু কি তোমরা সাবধান হবে না?’‎ (সুরা মুমিনুন, আয়াত ২৩)‎


কিন্তু কেউ তার দাওয়াতে সাড়া দেয়নি। বরং ‎তার সম্প্রদায়ের লোকেরা কানে আঙ্গুল দিয়ে কিংবা নিজেকে কাপড় দিয়ে আড়াল করে সটকে পড়েছে, ‎তার প্রতি উদ্ধত আচরণ করেছে। এটাই ছিল নিত্যদিনের গল্প। এরপরেও ধৈর্য ধরে তিনি শুধু দাওয়াত ‎দিয়ে গেছেন। সব অবহেলা সয়ে নিয়ে শুধু আল্লাহর কথা বলেছেন।


হজরত নুহ (আ.) প্রেরিত হয়েছিলেন বর্তমান সময়ের ইরাক ও সিরিয়া অঞ্চলে। এর আগে মানুষ কেবল ‎কৃষিকাজ করত, সমাজে মানুষে মানুষে কোনো ভেদাভেদ ছিল না। কিন্তু ওই সময় সমাজব্যবস্থা ধীরে ধীরে ‎নগরকেন্দ্রিক হয়ে উঠতে শুরু করে এবং সমাজ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়—এক ভাগে ছিল অভিজাত ‎শ্রেণি, অন্য ভাগে ছিল নিম্নশ্রেণি।


অভিজাত শ্রেণির মানুষ নিম্নশ্রেণির মানুষের প্রতি নানাভাবে জুলুম-নির্যাতন ‎করত, তাদের নিচু চোখে দেখত। অভিজাতরা দেখতেই কেবল মানুষ ছিল, তাদের মাঝে মানুষের কোনো ‎গুণ ছিল না। তাদের আচার-আচরণ ছিল জন্তু-জানোয়ারের মতো। ‎(তাবিলুল আহাদিস, শাহ ওলিউল্লাহ দেহলবি, পৃষ্ঠা ১৮)


তারা ওয়াদ, সুওয়া, ইয়াগুস, ‎ইয়াউক ও নাসর নামে পাঁচটি মূর্তির পূজা করত। হজরত নুহ (আ.) কাউকে ইসলামের দিকে দাওয়াত ‎দিলে তাদের নেতৃবৃন্দ বলত, তোমরা মূর্তিদের ত্যাগ করো না।


তবু নুহ (আ.) আল্লাহর নির্দেশিত কাজ করে যেতেন—মানুষকে এক আল্লাহর এবাদত করতে ‎বলতেন। কোনোদিন দাওয়াতি কাজ ছেড়ে দেননি, কখনো নিরাশ হননি।


তার অঞ্চলের নেতৃবৃন্দ বলল, ‎‎‘হে নুহ, তুমি যদি বিরত না হও, তাহলে পাথর মেরে তোমার মাথা চূর্ণবিচূর্ণ করে দেব।’‎ (সুরা শুআরা, আয়াত ২৬৬) এরপরেও নুহ ‎‎(আ) থেমে যাননি, তিনি উলটো দোয়া করেন, ‘হে খোদা, তুমি তাদের ক্ষমা করো, তারা বোঝে না।’‎


কিন্তু দিনের পর দিন শুধু অত্যাচারের পরিমাণ বাড়তেই থাকে। অভিজাত লোকেরা তাদের সন্তানদেরও ‎শিখিয়ে দিত কীভাবে নবী ও মুসলিমদের প্রতি জুলুম করতে হবে।


নুহ (আ.) আল্লাহর কাছে কেঁদে কেঁদে ‎বললেন, ‘হে আমার প্রতিপালক, তারা তো আমাকে অমান্য করছে, আর অনুসরণ করছে এমন ব্যক্তির—‎যার সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতি দুর্দশা ছাড়া কিছুই বৃদ্ধি করবে না।’‎ ‎(সুরা নুহ, আয়াত ২১)


এক পর্যায়ে আল্লাহ তাআলা ওহি ‎মারফত জানালেন, ‘তোমার কওমের যারা ঈমান এনেছে তারা ছাড়া আর কেউ ঈমান আনবে না।’‎ (সুরা হুদ, আয়াত ৩৬)‎


‎হজরত নুহ (আ.) তখন কাতরকণ্ঠে ফরিয়াদ করলেন, ‘হে খোদা, আমাকে সাহায্য করুন। তারা আমাকে ‎মিথ্যাবাদী বলছে।’‎ ‎(সুরা মুমিনুন, আয়াত ২৬)


তিনি আরও বলেন, ‘আপনি আমার ও তাদের মাঝে চূড়ান্ত ফয়সালা করে দেন, ‎আমাকে ও মুমিনদের (তাদের হাত থেকে) রেহাই দিন।’‎ (সুরা শুআরা, আয়াত ১৮৮)‎


একদম শেষে তিনি বদদোয়া করেন, ‘হে আমার ‎রব! পৃথিবীতে বসবাসকারী কাফিরদের একজনকেও আপনি ছাড় দিবেন না। আপনি যদি তাদেরকে রেহাই ‎দেন, তাহলে তারা আপনার বান্দাদেরকে গুমরাহ করবে আর কেবল পাপাচারী কাফির জন্ম দিতে ‎থাকবে।’‎ (সুরা নুহ, আয়াত ২৬-২৭)


এরপর আল্লাহ তাআলা তাকে একটি বিশাল নৌকা তৈরি করতে বলেন। কীভাবে নৌকা বানাতে হবে ‎আল্লাহ তাআলাই শিখিয়ে দেন।

হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘নৌকাটি লম্বায় ছিল ১২০০ হাত, আর ‎পাশ ছিল ৬০০ হাত।’‎ ‎ উচ্চতা ছিল ৩০ হাত, তিনতলা ছিল—নিচতলায় কীট-পতঙ্গ ও জন্তু-জানোয়ার, ‎দোতলায় মানুষ আর তেতলায় থাকবে পাখ-পাখালি। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ২৫৮, ইফা)


এরপর আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যখন আমার নির্দেশ ‎আসবে আর চুলা (পানিতে) উথলে উঠবে, তখন প্রত্যেক জীবের এক এক জোড়া আর তোমার পরিবার-‎পরিজনদের নৌকায় তুলে নেবে, তবে তাদের মধ্যে যাদের বিপক্ষে (ডুবে মরার) পূর্বসিদ্ধান্ত হয়ে গেছে ‎তাদেরকে বাদ দিয়ে। আর জালিমদের পক্ষে আমার নিকট আবেদন করো না, তারা (বন্যায়) ডুবে ‎মরবেই।’‎ ‎ ‎(সুরা মুমিনুন, আয়াত ২৭)


যেহেতু ওই অঞ্চলে কখনোই বন্যা হয়নি, বছরের বেশির ভাগ সময় খরা থাকত, তাই কাফেরেরা নৌকা ‎নিয়ে হাসি-মজাক করত। তারা ঠাট্টা করে বলত, নুহ এতদিন ছিলে নবী, নবুওয়তি ছেড়ে এখন হয়েছ ‎কাঠমিস্ত্রি! অবশেষে নির্দিষ্ট দিন আসে।


হজরত নুহ (আ.) নারী ও পুরুষ মিলিয়ে ৮০ জন মুমিন এবং পশু-‎পাখি নিয়ে নৌকায় চড়ে বসেন। তারা নৌকায় ওঠার পরেই আকাশ ভেঙ্গে তুফান শুরু হয়, মাটির নিচ ‎থেকেও পানি উঠতে শুরু করে। দুই দিকের পানি মিলে সবচেয়ে উঁচু পাহাড়েরও ১৫ হাত উপরে পানি ‎উঠে যায়।


দুনিয়ায় থাকা এমন একজন কাফেরও ছিল না যে আল্লাহর এই আজাব থেকে বাঁচতে পেরেছে। ‎বিশাল এই নৌকাটি ১৫০ দিন ভেসে বেড়ায়, তারপর মুহাররমের ১০ তারিখে জুদি পাহাড়ে নোঙর ফেলে।

Share this article :

Post a Comment

 
Support : Creating Website | Johny Template | Mas Template
Copyright © 2011. ইসলামী কথা - All Rights Reserved
Template Created by Creating Website Published by Mas Template
Proudly powered by Premium Blogger Template