السلام عليكم

যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার (তওবা) করবে আল্লাহ তাকে সব বিপদ থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন। [আবূ দাঊদ: ১৫২০; ইবন মাজা: ৩৮১৯]

ইসলামের দৃষ্টিতে ব্যভিচার সবচেয়ে নিকৃষ্ট কাজ ও হারাম

| comments

শুধু ইসলাম নয়, কোনো ধর্মেই ব্যভিচারের শিক্ষা নেই। ইসলাম ব্যভিচারকে সবচেয়ে নিকৃষ্ট কাজ এবং হারাম আখ্যায়িত করেছে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, 'তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয় এটা প্রকাশ্য অশ্লীলতা এবং অত্যন্ত মন্দ পথ' (সুরা বনি ইসরাইল : ৩২)। আর বাইবেলে বলা হয়েছে, 'তোমরা ব্যভিচার করবে না।' কয়েক দিন ধরে দেশ-বিদেশের সংবাদপত্র ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় সবচয়ে বেশি যে সংবাদ আলোচনা হয়েছে, তা মনে হয় নারীঘটিত বিষয় নিয়ে। গত মাসে দিল্লিতে চলন্ত বাসে ছয় নরপশুর গণধর্ষণের কবলে পড়ে মেডিক্যাল ছাত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা শুধু ভারতকেই নয়, বরং কাঁপিয়ে দিয়েছে গোটা উপমহাদেশ ও বিশ্ববাসীকে। জাতিসংঘের মহাসচিব স্বয়ং গভীর শোক প্রকাশ করেছেন জ্যোতির মৃত্যুতে। তাঁর পরিবারসহ গোটা বিশ্বের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তি। ভারতে এর জন্য প্রচলিত আইন সংশোধনেরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আইনে দণ্ডিত ধর্ষকের ফাঁসি অথবা রাসায়নিক পদার্থ প্রয়োগে খোজা করে দেওয়ার প্রস্তাব রয়েছে। দিল্লির এই ক্ষত শুকাতে না শুকাতেই বাংলাদেশের টাঙ্গাইলে গণধর্ষণের শিকার হয়েছে নবম শ্রেণীর এক ছাত্রী। দরিদ্র পরিবারের মেয়েটিকে তার এক বান্ধবী প্রলোভিত করে নিয়ে যায় মধুপুরের এক নির্জন বাড়িতে। সেখানে আগে থেকেই ওত পেতে থাকা কয়েকজন পালাক্রমে ধর্ষণ করে মেয়েটিকে। তারা এটুকু করেই ক্ষান্ত হয়নি। ভিডিও ক্যামেরায় ধর্ষণের চিত্রও ধারণ করে। কয়েক দিন ধরে চলে এ নারকীয় তাণ্ডব। পরে অজ্ঞান অবস্থায় মেয়েটিকে ফেলে রেখে যায় রেললাইনের ওপর। মেয়েটি এখন গুরুতর অসুস্থ- শারীরিক ও মানসিক উভয় অর্থে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে অসহায় মেয়েটি চিকিৎসাধীন। চিকিৎসকের ভাষ্যমতে, মেয়েটি বর্তমানে মানসিকভাবে হতবিহ্বল ও অসুস্থ। তার ধর্ষিত হওয়ার ছবি ইন্টারনেট ও মোবাইল ফোনে ছেড়ে দেওয়ার হুমকিতে সে দিশেহারা ও আতঙ্কিত। দেখা যায়, আমাদের দেশে ২০১২ সালে ৮০০ নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এ প্রবণতা ক্রমেই বাড়ছে। সম্প্রতি কয়েক দিনের ব্যবধানে গ্যাংরেপসহ এমন কিছু ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে, যা মানুষের হৃদয় স্পর্শ করেছে। সবশেষ রাজধানীর মিরপুরস্থ শাহআলীতে ১০ বছরের শিশু চাঁদনী গ্যাংরেপের শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে। আড়াই বছরের শিশু থেকে বৃদ্ধা পর্যন্ত ধর্ষণের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আদিবাসী নারীদের ওপর নির্যাতন। ভারতসহ বিশ্বব্যাপী তোলপাড় করা চলন্ত বাসে ধর্ষণ-ঘটনার চার দিন পরই ২১ ডিসেম্বর রাঙামাটির কাউখালীতে অষ্টম শ্রেণীর এক আদিবাসী ছাত্রীকে ধর্ষণ শেষে খুন করা হয়। ২০১১ সালের ১৫ জুন লংগদুর ইয়ারেংছড়ি গ্রামের সপ্তম শ্রেণীর আদিবাসী স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। এ ধরনের ধর্ষণের ঘটনা প্রচুর রয়েছে। একের পর এক ঘটনা ঘটেই যাচ্ছে। যারা এ ধরনের অপকর্ম করে, তাদের মনে হয় পশু বলাটাও ভুল হবে। কারণ পশুরাও এমন অপকর্ম করে না। ধর্ষণ নামের এই সামাজিক ব্যাধি নির্মূল করতে ধর্ষকের দ্রুত শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। তাদের এমন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে, যাতে অন্য অপরাধীরাও সচেতন হয়ে যায়। পবিত্র কোরআন এবং হজরত রাসুল করিম (সা.) আমাদের এ শিক্ষাই দেয়, তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যাবে না। আমাদের এমন সব কর্ম থেকে দূরে থাকতে হবে, যা নিজেদের মনে কুপ্রভাবের সৃষ্টি করে। হজরত রাসুল করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, 'যে ব্যক্তি তার দুই চোঁয়ালের হাড্ডির মাঝখান অর্থাৎ জবানের এবং দুই পায়ের মাঝখানের অর্থাৎ লজ্জাস্থানের জামানত আমাকে দেবে, আমি তার জান্নাতের জামিন' (বুখারি)। হজরত নবী করিম (সা.) আরো বলেছেন, 'অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে উপার্জন করা ব্যভিচার। নিষিদ্ধ বস্তুর প্রতি দৃষ্টিপাত করা চোখের ব্যভিচার। যা শ্রবণ করা নিষিদ্ধ, তা শোনা কর্ণের ব্যভিচার, যে কথা বলা নিষেধ, তা বলা জিহ্বার ব্যভিচার। নিষিদ্ধ জিনিসে হাত দেওয়া হাতের ব্যভিচার, নিষিদ্ধ স্থানে যাওয়া পায়ের ব্যভিচার' (বুখারি ও মুসলিম)। নিজ স্ত্রী ছাড়া কারো সঙ্গে কোনোরূপ যৌন সম্পর্ক স্থাপন করাকে ইসলাম কঠিনভাবে নিষিদ্ধ করেছে এবং এটিকে মহাপাপ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তাই পবিত্র কোরআনের সুরা নিসায় যুদ্ধবন্দিনীকেও বিবাহ না করা পর্যন্ত তার সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের অনুমতি তো দেয়ইনি, বরং কোরআনে স্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে যে এই বন্দিনীদের স্ত্রী হিসেবে রাখার আগে স্বাধীন নারীদের ন্যায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করতে হবে। এই যে একের পর এক নারী নির্যাতিত হচ্ছে এর কি শেষ হবে না? যারা এসব অপকর্মে লিপ্ত তারাও তো কোনো না কোনো মা-বাবারই সন্তান। প্রত্যেকেই যদি তার পরিবারের প্রতি সব সময় খেয়াল রাখতেন, তাহলে হয়তো আপনার-আমার সন্তানটি এ ধরনের জঘন্য কাজটি করতে পারত না। আমাদের সন্তানরা কোথায় যায়, কী করে, কার সঙ্গে সময় কাটায়, তা নিয়ে কি আমরা আদৌ চিন্তিত? আমরা যদি আমাদের সন্তানকে ছোটবেলা থেকেই উত্তমভাবে ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত করতাম, তাহলে কি আজ এ পর্যায়ে যেত? আমরা আমাদের সন্তানদের উত্তম তরবিয়তের প্রতি কোনো দৃষ্টি দেব না আর তাদের কাছ থেকে ভালো কিছু আশা করব, তা তো হতে পারে না। এ জন্যই ইসলাম সন্তানের জন্মের পরই তাকে উত্তম শিক্ষায় গড়ে তোলার আদেশ প্রদান করেছে। সন্তান যেন উত্তম গুণের অধিকারী হয়, সে জন্য মা-বাবাকে সব সময় দোয়াও করতে হয়। যেভাবে পবিত্র কোরআনে সন্তানদের জন্য দোয়ার উল্লেখ রয়েছে, 'হে আমাদের প্রভু-প্রতিপালক! তুমি আমাদের জীবনসঙ্গিনী ও সন্তানসন্ততিকে আমাদের জন্য চোখ জুড়ানো করে দাও এবং আমাদের প্রত্যেককে মুত্তাকিদের ইমাম বানাও' (সুরা আল ফুরকান : ৭৪)। তাই সর্বদা আমাদের সন্তানদের জন্য দোয়া করতে হবে, তবে তার আগে আমাদের পবিত্র হতে হবে। আমি নিজেই যদি খারাপ কাজে লিপ্ত থাকি আর সন্তানকে ভালো কাজের উপদেশ দিই, তাহলে তা কোনো কাজে লাগবে না। হজরত নবী করিম (সা.) বলেছেন, 'কোনো বাবা তাঁর সন্তানকে উত্তম শিষ্টাচার অপেক্ষা অধিক শ্রেয় কোনো বস্তু দান করতে পারে না' (তিরমিজি)। অন্য এক জায়গায় মহানবী (সা.) বলেছেন, 'প্রতিটি মানবসন্তান ইসলামের ওপর জন্মগ্রহণ করে, কিন্তু পরে তার মা-বাবা তাকে ইহুদি অথবা নাসারায় পরিণত করে' (বুখারি)। তাই এ থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, সন্তান খারাপ হওয়ার পেছনে মা-বাবাও দায়ী রয়েছেন। আজ একের পর এক যেসব জঘন্য কাজ সংঘটিত হচ্ছে, তা তো সবই কোনো না কোনো মা-বাবারই সন্তানের কাজ। অপকর্ম করার অপরাধে কোনো মা-বাবা কি তার সন্তানকে ধরে নিজেই আইনের হাতে তুলে দিয়েছেন? আজ যদি প্রতিটি পরিবার এই অঙ্গীকার করে যে- আমার সন্তান যদি কোনো খারাপ কাজ করে, তাহলে প্রথমে আমিই তাকে আইনের হাতে তুলে দেব। সরকারি বাহিনী কেন লাগবে, আপনার-আমার সন্তানকে গ্রেপ্তার করতে। আমরা নিজেরাই কি পারি না, এ ধরনের কুসন্তানকে পুলিশের হাতে তুলে দিতে? আমরা যদি নিজেরা আদর্শবান হই, তাহলে আমাদের সন্তানরাও আদর্শবান হবে, যদি দু-একটি ব্যতিক্রম হয়, তাহলে তাকে তার শাস্তি ভোগ করারও ব্যবস্থা আমাদেরই নিতে হবে। আমার সন্তান আরেক মায়ের বুক খালি করবে আর আমি সেই সন্তানকে আবার আশ্রয় দেব- এটা কোন ধর্মের শিক্ষা? তাই প্রতিটি পরিবারকে প্রথমে সোচ্চার হতে হবে, অপরাধী যে-ই হোক না কেন, তাকে কোনোভাবেই প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে প্রকৃত ইসলামের শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার এবং নিজেদের পরিবারকে সঠিক তরবিয়ত করার তাওফিক দান করুন। 

 লেখক : মাহমুদ আহমদ সুমন, ইসলামী গবেষক ও কলামিস্ট
masumon83@yahoo.com
Share this article :

Post a Comment

 
Support : Creating Website | Johny Template | Mas Template
Copyright © 2011. ইসলামী কথা - All Rights Reserved
Template Created by Creating Website Published by Mas Template
Proudly powered by Premium Blogger Template