السلام عليكم

যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার (তওবা) করবে আল্লাহ তাকে সব বিপদ থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন। [আবূ দাঊদ: ১৫২০; ইবন মাজা: ৩৮১৯]

উমাইয়া মসজিদ, দামেস্ক

| comments

সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের প্রাচীন অংশ কারবালা পরবর্তী করুণ উপাখ্যানের নীরব সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে উমাইয়া মসজিদ। দামেস্কের কেন্দ্রীয় মসজিদ বা বড় মসজিদ নামেও এ মসজিদের সুখ্যাতি রয়েছে। শিয়া সম্প্রদায়ের কাছে এ মসজিদ পৃথিবীর চতুর্থ পবিত্রতম মসজিদ। কারণ কারবালা যুদ্ধের পর হজরত মোহাম্মদ (সা.)-এর পরিবারের সদস্য এবং তার প্রিয় দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসেন (রা.)কে এ মসজিদের গেটে এবং পরবর্তীতে মসজিদের একটি অংশে বন্দী করে রাখা হয়। এ মসজিদেই তৎকালীন শাসক ইয়াজিদ বিচারের নামে প্রহসন পরিচালনা করে। হজরত হোসেন (রা.)কে হত্যার পর এ মসজিদের দেয়ালে একটি অংশ তার পবিত্র মস্তক মোবারক আর বর্তমানে ধাতব গ্রিল দেওয়া অংশে রাখা হয়েছিল অন্যদের মস্তক। তাই মুসলমান সম্প্রদায় বিশেষত শিয়াদের কাছে এ মসজিদের সম্পর্ক অত্যন্ত আবেগময়। খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের কাছেও এ মসজিদের আবেদন ভিন্ন মাত্রার। খ্রিস্টান ধর্মমতে তাদের বাপিস্ট ধর্মযাজক যিনি ইসলাম ধর্মে হযরত ইয়াহিয়া (আ.) নামে পরিচিত; এ স্থানে একটি উপাসনালয় স্থাপন করেছিলেন। খ্রিস্টান সম্প্রদায় আরও মনে করে এ মসজিদেই রয়েছে অতি পবিত্র একটি অংশ, যেখানে কেয়ামতের আগে তাদের ধর্মপিতা যিশু (ইসলাম ধর্ম মতে হজরত ঈসা (আ.) স্বর্গ থেকে পৃথিবীতে পুনরায় আবির্ভূত হবেন)। আলাদাভাবে চিহ্নিত মসজিদের একটি অংশকে এ আবির্ভাব বা অবতরণের স্থান বলে অনেকেই ধারণা করে থাকেন। ৬৩৪ সালে ষষ্ঠ উমাইয়া শাসক খালেদ বিন ওয়ালিদের নেতৃত্বে আরবরা দামেস্ক জয় করে। মূলত এরপর থেকেই এ মসজিদকে মুসলিম বিশ্বের প্রশাসনিক কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করার প্রয়াস চলতে থাকে। একই সঙ্গে চলতে থাকে মসজিদের সংস্কার এবং পরিবর্ধন। মূলত ৭১৫ সালে একটি পূর্ণাঙ্গ মসজিদ হিসেবে উমাইয়া মসজিদ ব্যাপক খ্যাতি লাভ করে। এ সময় মসজিদের নির্মাণ বাবদ মতান্তরে ছয় থেকে দশ লাখ সিরীয় দিনার ব্যয় হয়। তৎকালীন পারস্য, ভারতবর্ষ, গ্রিক এবং মক্কার প্রায় ১২ হাজার শ্রমিক দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর পরিশ্রম করে ৭১৫ সালে মসজিদের মূল নির্মাণকাজ সম্পন্ন করে। অপরদিকে মসজিদ ধ্বংসের জন্য ১০৬৯ সাল থেকে ১৮৯৩ সালের মধ্যে মোট ছয় বার মসজিদে অগি্নসংযোগ করা হয়। এ ছাড়াও ১৭৫৯ সালের ভূমিকম্পে মসজিদের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এক সময় অত্যন্ত সমৃদ্ধ একটি লাইব্রেরি জন্য মসজিদটির ব্যাপক সুনাম ছিল। তবে পরবর্তীতে উপনিবেশ শাসনকালে লাইব্রেরির স্থানান্তর করা হয়, যার বিরাট অংশ বর্তমানে জার্মানিতে রয়েছে বলে জানা যায়। তবে দামেস্কের ন্যাশনাল লাইব্রেরিতে এসব মূল্যবান বইয়ের কিছু অংশ আজও সংরক্ষিত আছে। বর্তমানে মসজিদ এলাকার দৈর্ঘ্য ৪৪৬ ফুট এবং প্রস্থ ১২১ ফুট। মূল মসজিদটি (৩৯৮৯৭) প্রায় ৩১,০০০ বর্গফুট এলাকার ওপর অবস্থিত। মসজিদের কেন্দ্রে রয়েছে প্রায় ১৮৮ ফুট উঁচু একটি গম্বুজ। মূলত এ গম্বুজটি ছিল কাঠের তৈরি। ১৮৯৩ সালে এক অগি্নকাণ্ডে কাঠের গম্বুজটি পুড়ে গেলে পরবর্তীতে পাথর দিয়ে বর্তমান গম্বুজ নির্মাণ করা হয়। যার সর্বোচ্চ অংশ প্রায় ১১৮ ফুট উঁচু। এ ছাড়াও মসজিদের রয়েছে ৩টি সুউচ্চ মিনার যা সর্বোচ্চটির উচ্চতা ২৫৩ ফুট উঁচু। এই মিনার বেয়েই খ্রিস্টানদের পিতা যিশু (ইসলাম ধর্ম মতে হজরত ঈসা (আ.) কেয়ামতের আগে পৃথিবীতে অবতরণ করবেন বলে অনেকের ধারণা)। ইতিহাসের অনন্য এক সাক্ষী হয়ে আছে সিরিয়ার দামেস্কে অবস্থিত উমাইয়া মসজিদ। এ মসজিদকে ঘিরে বহু সংঘাত ঘটেছে। অতি সাম্প্রতিক সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আসাদের বিরুদ্ধে যে বিপ্লব অনুষ্ঠিত হচ্ছে, আরও সূত্রপাত এ মসজিদ প্রাঙ্গণে ২০১১ সালে ১৫ মার্চ তারিখ। কেয়ামতের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত এ মসজিদের প্রতি মুসলমান এবং খ্রিস্টানদের তীব্র আকর্ষণ থাকবে।

--মেজর (অব.) নাসির উদ্দিন আহমেদ
Share this article :

Post a Comment

 
Support : Creating Website | Johny Template | Mas Template
Copyright © 2011. ইসলামী কথা - All Rights Reserved
Template Created by Creating Website Published by Mas Template
Proudly powered by Premium Blogger Template