السلام عليكم

যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার (তওবা) করবে আল্লাহ তাকে সব বিপদ থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন। [আবূ দাঊদ: ১৫২০; ইবন মাজা: ৩৮১৯]

শবেবরাতে আমাদের করণীয়

| comments

আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কালামে হাকিমে ইরশাদ করেছেন, 'নিশ্চয়ই আমি এ মহান গ্রন্থ নাজিল করেছি এক বরকতময় রজনীতে।' পরম করুণাময়, অসীম দয়ালু, মহাপরাক্রমশালী আল্লাহপাক দয়া করে মানবজাতির সার্বিক কল্যাণার্থে মহাগ্রন্থ পবিত্র কোরআন অবতীর্ণ করেছেন। অতএব বান্দামাত্রেরই কর্তব্য হলো মহান স্রষ্টা আল্লাহপাকের তরফ থেকে অবতীর্ণ গ্রন্থের সত্যতা বিশ্বাস করা এবং তাঁর শিক্ষা গ্রহণ করা, কেননা আল্লাহপাক স্বয়ং এ গ্রন্থ নাজিল করেছেন, আল্লাহপাক পবিত্র কোরআনকে অত্যন্ত বরকতময় রজনীতে নাজিল করেছেন। যাবতীয় বরকত, রহমত এবং কল্যাণের মূল উৎস পবিত্র কোরআন। তদুপরি তা এক বরকতময় রজনীতে অবতীর্ণ হয়েছে। সব সময়ই আল্লাহপাকের সৃষ্টি, এর মধ্যে কোনো কোনো সময়ের আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেমন- হজ শুধু বছরের একটি বিশেষ সময়েই আদায় করা হয়, অন্য সময় নয়। সপ্তাহের সব দিনই আল্লাহপাকের, কিন্তু শুক্রবার জুমার দিনটি বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। এর বরকতই ভিন্ন। সব দিনই আল্লাহপাকের; কিন্তু এর একেকটি নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট নামাজ আদায় করতে হয়। যেমন ইচ্ছা, তেমন নীতি এ ক্ষেত্রে অচল, সময়ানুবর্তিতাই এখানে কর্তব্য, নিয়মানুবর্তিতা এখানে শর্ত, এতদ্ব্যতীত সাধনা ব্যর্থ- কোনো ইবাদতই গ্রহণযোগ্য নয়। আর এটিই আল্লাহ পাকের বন্দেগি। আল্লাহপাক যে সময়ের জন্য যে আদেশ দিয়েছেন, সে সময় তা পালন করা, কেননা কোন সময়ে কী বরকত এবং কী কল্যাণ রয়েছে, তা এক আল্লাহপাকই জানেন। আল্লাহপাকের শ্রেষ্ঠ নেয়ামত হলো তাঁর মহান বাণী পবিত্র কোরআন। কেননা পবিত্র কোরআনের মাধ্যমেই মাটির মানুষ আল্লাহপাকের নৈকট্যে ধন্য হতে পারে।
শবেবরাত উপলক্ষে আমাদের কী কী করণীয়, এ সম্পর্কে হাদিস ও ফিকাহর কিতাবে শবেবরাত উপলক্ষে আমাদের সর্বমোট ছয়টি আমল করার কথা রয়েছে, আর তা হলো- এক. রাত জাগরণ করা। অর্থাৎ রাত জেগে নফল ইবাদত করা অর্থাৎ ইশার পর থেকে সুবহে সাদিক পর্যন্ত নফল নামাজ পড়া। দুই. পরের দিন রোজা রাখা। অর্থাৎ ১৫ শাবান একটা রোজা রাখা নফল। নফলের নিয়ত করে এই রোজা রাখতে হবে। তিন. আল্লাহ তায়ালার কাছে গুনাহ মাফ চাওয়া, রোগ-শোক থেকে মুক্তি চাওয়া, রিজিক চাওয়া ইত্যাদি বিষয় চাওয়া বা দোয়া করা। এ রাতে যার যা চাওয়ার আছে, আল্লাহর কাছে চাওয়ার জন্য বলা হয়েছে। আরেকটি হাদিসে এসেছে, হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, একদিন রাতে রাসুল (সা.) আমার কাছে আসলেন, গায়ের কাপড় খুললেন। তারপর না শুয়ে আবার কাপড় পরিধান করে বের হয়ে গেলেন। আমার আত্মমর্যাদাবোধে আঘাত লাগল। আমি ভাবলাম, রাসুল (সা.) হয়তো আমার কোনো সতিনের ঘরে গিয়ে থাকবেন। আমি খুঁজতে বের হলাম। দেখি অন্য কোনো বিবির ঘরে গিয়েছিলেন কি না। কিন্তু কোনো বিবির ঘরে তাঁকে খুঁজে পেলাম না। খুঁজতে খুঁজতে জান্নাতুল বাকিতে অর্থাৎ মদিনার কবরস্থানে গিয়ে আমি তাঁকে পেলাম। দেখলাম তিনি আসমানের দিকে হাত তুলে মুমিন-মুসলমান নর-নারী এবং শহীদদের জন্য দোয়া করছেন, তাঁদের জন্য ইস্তেগফার করছেন- এটা ছিল বরাতের রাতের ঘটনা। চার. যারা দুনিয়া থেকে চলে গেছেন তাঁদের জন্য দোয়া করা- যেমন মুমিন নর-নারী এবং শহীদদের জন্য দোয়া করা। এটি ইছালে ছওয়াব। 'ইছালে ছওয়াব' অর্থ হলো সওয়াব পৌঁছে দেওয়া। যাঁরা দুনিয়া থেকে চলে যান, তাঁদের কাছে আমরা বিভিন্নভাবে সওয়াব পৌঁছাতে পারি। দোয়া করলেও সওয়াব পৌঁছে, যেকোনো ইবাদত যেমন নফল নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত, জিকির আজকার, দান-সদকা, যেকোনোভাবে নফল ইবাদতের মাধ্যমে এর সওয়াব তাঁদের কাছে পৌঁছাতে পারি। এটাও ইছালে ছওয়াব। এই রাতে রাসুল (সা.) মুমিন নর-নারী এবং শহীদদের জন্য দোয়া করেছিলেন। এটা ইছালে ছওয়াবের পর্যায়ভুক্ত। তাই এই রাতে মুরদারদের জন্য যেকোনোভাবে ইছালে ছওয়াব করতে পারি। দান-সদকা করেও করতে পারি। পাঁচ. আমরা হাদিস থেকে জানতে পারলাম, এ রাতে রাসুল (সা.) জান্নাতুল বাকি কবরস্থানে গিয়েছিলেন জিয়ারতের জন্য। সুতরাং এ রাতে জিয়ারতের জন্য কবরস্থানে যাওয়া যায়, তবে একটা বিষয় লক্ষণীয়, রাসুল (সা.) জিয়ারতে গেলেন একাকী, দলবল নিয়ে নয়। আমাদেরও একাকী যেতে হবে, দলবল নিয়ে যাওয়া যাবে না। আড়ম্বর করে যাওয়া যাবে না। ছয়. এই রাতে বেশি বেশি ইবাদত করতে হবে, যেহেতু ফজিলতের রাত, যত পবিত্র অবস্থায় থাকা যায় আর বেশি বেশি ইবাদত করা যায়, ততই উত্তম। এ রাতে গোসল করাকে ফকিহরা মুস্তাহাব বলেছেন। এ ছয়টা আমলের কথা আমরা কোরআন, হাদিস ও ফিকাহর কিতাবে পাই। এর অতিরিক্ত কোনো আমলের কথা কোরআন ও হাদিসে আসেনি। এর বাইরে মানুষ যা কিছু করে, তা মানুষের মনগড়া তৈরি। যেমন- পটকা ফোটানো, আতশবাজি করা, মোমবাতি জ্বালানো ইত্যাদি। আলহামদুলিল্লাহ, মানুষ এখন আগের চেয়ে অনেক সচেতন, আগের চেয়ে এসব জিনিস অনেক কমে এসেছে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে কোরআন ও হাদিসে বর্ণিত বিষয়াবলি সঠিকভাবে আমল করা এবং শবেবরাতকে মুক্তির রজনী হিসেবে গ্রহণ করার তাওফিক নসিব করুন।

লেখক :মুফতি আইনুল ইসলাম কান্ধলবী; খতিব, বাইতুল মামুর জামে মসজিদ, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, ঢাকা
Share this article :

Post a Comment

 
Support : Creating Website | Johny Template | Mas Template
Copyright © 2011. ইসলামী কথা - All Rights Reserved
Template Created by Creating Website Published by Mas Template
Proudly powered by Premium Blogger Template