السلام عليكم

যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার (তওবা) করবে আল্লাহ তাকে সব বিপদ থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন। [আবূ দাঊদ: ১৫২০; ইবন মাজা: ৩৮১৯]

পবিত্র শবেবরাতের আমল

| comments

বছরের একটি ফজিলতপূর্ণ রাত হচ্ছে 'লাইলাতুম মিন নিসফি শাবান' তথা লাইলাতুল বরাত বা শবেবরাত। ১৪ শাবানের দিবাগত রাত লাইলাতুল বরাত বা শবেবরাত নামে অভিহিত। এই পবিত্র রাতে নিহিত রয়েছে মানবতার মুক্তি ও কল্যাণ। তেমনি রয়েছে বহু তাৎপর্য, ফজিলত ও বরকত। তাই এ রাতকে বলা হয়েছে লাইলাতুল বরাত বা মুক্তির রাত। অন্যদিকে পবিত্র মাহে রমজানের আগের মাস হওয়ায় শাবানকে বলা হয়েছে রমজান শরিফের প্রস্তুতির মাস।
মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, 'শাবান মাস হলো আমার মাস আর পবিত্র রমজান মাস হলো মহান আল্লাহ তায়ালার মাস।' প্রিয় নবীজি (সা.) আরো বলেন, 'তোমরা রমজানের জন্য শাবান মাসের চাঁদের সঠিক হিসাব রেখো। কেননা শাবানের হিসাব সঠিক হলে রমজানের চাঁদের হিসাব নিয়ে মতভেদ হবে না।' (মিশকাত : ১১৫ পৃ.)
মুসলিম শরিফে বর্ণিত রয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) কয়েক দিন ব্যতীত পূর্ণ শাবান মাসের রোজা রাখতেন। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, অন্যান্য মাসের তুলনায় শাবান মাসের রোজা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে অধিক প্রিয় ছিল।
শাবান মাসের ১৫তম রাত বা শবেবরাত সম্পর্কে রাসুলে করিম (সা.) ইরশাদ করেন, 'তোমরা শবেবরাতের রজনীতে জাগ্রত থেকে ইবাদত করবে এবং দিনের বেলায় রোজা রাখবে।' (মিশকাত)
'শব' অর্থ রাত বা রাজনী, আরবি 'বারাতুন' অর্থ-নাজাত বা নিষ্কৃতি, মুক্তি, পরিত্রাণ প্রভৃতি। হাদিস শরিফের বর্ণনা অনুযায়ী এ রাতটি হচ্ছে শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত ১৫ তারিখের রাত। এ সম্পর্কে হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে, 'লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান' অর্থাৎ শাবানের মধ্যভাগের রাত।
লাইলাতুল বরাতে উম্মতে মুহাম্মদী একাগ্রচিত্তে তওবা, ইস্তেগফার ও ইবাদত-বন্দেগির দ্বারা স্বীয় গুনাহ থেকে ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়ে জাহান্নামের ভয়াবহ পরিণতি থেকে নিষ্কৃতি লাভ করে চিরস্থায়ী আবাসস্থল-জান্নাতের পথ সুগম করে বলেই এর নামকরণ হয়েছে শবেবরাত বা নাজাতের রজনী। লাইলাতুল বরাত অর্থ গুনাহ থেকে মুক্তি লাভের রাত। এ রাতে ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে মুমিন মুসলমানদের গুনাহ মাফ হয় এবং মর্যাদা বৃদ্ধি পায়।
লাইলাতুল বরাত শব্দের অর্থ হলো গুনাহ থেকে মুক্তির রজনী। এই পবিত্র রজনীতে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে গুনাহগার বান্দাদের গুনাহ মাফের উত্তম সুযোগ প্রদান করা হয়ে থাকে।
মহানবী (সা.) তাঁর অজস্র হাদিসে পবিত্র শবেবরাতের মর্যাদাপূর্ণ রজনীর অসংখ্য মরতবা, ফজিলত ও তাৎপর্যের কথা জানা যায়। এ মহিমান্বিত রাত সম্পর্কে নিম্নবর্ণিত বিষয়াদি পাওয়া যায়- ১. এ পবিত্র রজনীতে মহান আল্লাহর দরবারে মানুষের আমলনামা পেশ করা হয়। ২. এই মহিমান্বিত রজনীতে মহান রাব্বুল আলামিন মুমিন বান্দাদের প্রতি তাঁর বিশেষ অনুগ্রহ বা রহমতের বারিধারা বর্ষণ করেন এবং তাদের গুনাহ মাফ করেন। ৩. শবেবরাতের এ পুণ্যময় রজনীতেই পরবর্তী এক বছরের মৃত্যুবরণকারীদের তালিকা প্রস্তুত করা হয়। ৪. এ রজনীতেই পরবর্তী এক বছরের রিজিক নির্ধারণ করা হয়। ৫. এ রাতে বিশেষ কিছু অপরাধী ছাড়া নেক আমলে মগ্ন বাকি সব অপরাধীর জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হয়। ৬. এ মহিমান্বিত রজনীতেই মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সূর্যাস্তের পর থেকেই পৃথিবীর আকাশে তাশরিফ আনেন এবং ফজর পর্যন্ত নিজ রহমতের কৃপা বর্ষণ করতে থাকেন। ৭. এ রজনীতে মহান আল্লাহ নিজ বান্দাদের ক্ষমা ও বিভিন্ন সমস্যার সমাধান প্রার্থনার জন্য আহ্বান করতে থাকেন এবং যারা যা প্রার্থনা করে, তাদের তা দান করেন।
আর মহিলাদের সম্পূর্ণ ব্যক্তিগতভাবে নিজ নিজ ঘরের অভ্যন্তরে সংগোপনে এ রাতে ইবাদত-বন্দেগিতে লিপ্ত থাকা কর্তব্য। পুরুষদের জন্য ফরজ নামাজ তো অবশ্যই মসজিদে আদায় করতে হবে। তবে আমাদের সবাইকে মনে রাখতে হবে, শবেবরাতে হালুয়া-রুটি বণ্টনের কোনো নিয়ম শরিয়তে নেই। এ ছাড়া এ রাতে অধিক আলোকসজ্জা বা জাঁকজমক আয়োজন করা, বাজি-পটকা ফোটানো, তারাবাতি জ্বালানো ইত্যাদি গর্হিত ও নাজায়েজ, বিদআত কাজ। এগুলো শয়তানের ধোঁকা। এসব অযাচিত কাজ থেকে মুসলমানদের দূরে থাকা কর্তব্য।
এ পবিত্র রজনীতে খাস দিলে আমল করলে আল্লাহর রহমতের আশা করা যায় এবং বিশেষ করে সারা জীবনের গুনাহ থেকে তওবা করে এ রাতে আত্মশুদ্ধির প্রত্যয় গ্রহণ করা এবং সেই অনুযায়ী চলা আমাদের সবার কর্তব্য, তাহলেই আমাদের পরিশ্রম ও আমল সার্থক হবে। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের শবেবরাতের ইবাদত-বন্দেগি করার তাওফিক দান করুন।

মাসুদা বেগম


পুণ্যময় রাতের আমল
হজরত আয়শা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, রজব মাসের শুরুতে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) এই দোয়া করতেন_ 'আল্লাহুমা বারিক লানা ফি রাজাবা ওয়া শাবান, ওয়া বালি্লগনা রামাজান।' অর্থাৎ হে আল্লাহ, রজব ও শাবানকে আমাদের জন্য বরকতময় করো এবং আমাদের রমজানে পেঁৗছে দাও। আল্লাহতায়ালা বিভিন্ন দিন, রাত, মাস ও সময়কে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ করেছেন। মানুষের ক্ষমার জন্য বিশেষ কিছু মুহূর্তও রেখেছেন। এর মধ্যে অর্ধশাবানের রাত তথা শবেবরাত একটি। এ ছাড়া পূর্ণ মাসই অফুরন্ত সওয়াব হাসিলের মোক্ষম সুযোগ রয়েছে। এ মাসে আল্লাহতায়ালা বান্দাদের আমলের প্রতিদান বাড়িয়ে দেন। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, এ মাসে সামর্থ্য অনুযায়ী ভালো কাজ করতে থাকো। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্লান্ত হন না। বরং তোমরা ক্লান্ত হয়ে যাও। বুজুর্গরা শবেবরাতে রাত জাগরণের পক্ষে মত প্রকাশ করেছেন। তারা এ রাতে পরিচ্ছন্ন পোশাক পরতেন, সুরমা-সুগন্ধি ব্যবহার করতেন এবং গোটা রাত মসজিদে ইবাদতে মশগুল থাকতেন। তবে নফল ইবাদতের জন্য নিজের ঘর এবং নিরিবিলি পরিবেশই উত্তম। হাদিসবেত্তারা এ মত পোষণ করেন।
হাদিসে বলা হয়েছে, শবেবরাতে ক্ষমা চাইলে গোনাহগারদের ক্ষমা করা হয়। কিন্তু খাঁটি তওবা ছাড়া কিছুসংখ্যক লোককে শবেবরাতেও ক্ষমা করা হয় না। তারা হচ্ছে_ এক. আল্লাহর সঙ্গে যারা শরিক করে; দুই. হিংসুক; তিন. মাতা-পিতার অবাধ্য সন্তান; ৪. আত্মীয়দের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদকারী; পাঁচ. মদপানকারী; ছয়. পায়ের গোড়ালির নিচে কাপড় পরিধানকারী পুরুষ; সাত. জাদুকর ও আট. গণক। কোনো কোনো হাদিসে জুলুম করে যারা ট্যাক্স আদায় করে, হাতের রেখা দেখে যারা ভাগ্যের খবর বলে, অত্যাচারী সৈন্য এবং যারা ঢোল বাজায় ও তাস খেলে_ এসব লোককে ক্ষমা না করার কথাও এসেছে।
রহমত, বরকত ও কল্যাণের আঁধার মুক্তির এ রাতকে আড্ডা, অযথা গল্প, হাসি-তামাশায় পার না করে, বিনয়াবনতচিত্তে জিকির-আজকার, দোয়া-দরুদ ও নফল নামাজ ইত্যাদি ইবাদতে মশগুল থাকা উচিত এবং পরের দিন রোজা রাখা উচিত। মাওলানা আবদুল হক মুহাদ্দিসে দেহলবি (রহ.) বলেন, আল্লাহতায়ালা প্রতি রাতেই দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন। তবে সে অবতীর্ণ হয় শেষ রাতে। কিন্তু রাতে সন্ধ্যা থেকেই আল্লাহতায়ালা দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন। শবেবরাতে বিশেষ পদ্ধতির কোনো নামাজ বা আমল নেই। স্বাভাবিক পদ্ধতিতে যত ইচ্ছা নফল নামাজ পড়া যাবে। কোরআন তেলাওয়াতসহ জিকির করা যাবে। দরুদ শরিফ পাঠ ও ইসতেগফার পড়া এবং দোয়া করা যাবে। শাবানে আল্লাহর দরবারে বান্দার বার্ষিক আমল পেশ করা হয়।
Share this article :

Post a Comment

 
Support : Creating Website | Johny Template | Mas Template
Copyright © 2011. ইসলামী কথা - All Rights Reserved
Template Created by Creating Website Published by Mas Template
Proudly powered by Premium Blogger Template