السلام عليكم

যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার (তওবা) করবে আল্লাহ তাকে সব বিপদ থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন। [আবূ দাঊদ: ১৫২০; ইবন মাজা: ৩৮১৯]

হালাল-হারামের গুরুত্ব

| comments

হজরত নুমান ইবনে বাশীর (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, 'হালাল বা বৈধ সুস্পষ্ট এবং হারাম বা অবৈধও স্পষ্ট। আর এ দু'য়ের মধ্যবর্তী বিষয়গুলো হলো সন্দেহজনক। আর বেশিরভাগ লোকই সেগুলো (এসবের পরিচয়) জানে না। অতএব যে ব্যক্তি ওই সন্দেহজনক জিনিসগুলো পরিহার করল সে তার দীন ও মান-সম্মানকে পবিত্র রাখল। আর যে ব্যক্তি সন্দেহজনক জিনিসে জড়িয়ে পড়ল সে হারামের মধ্যে পড়ে গেল। যেমন, কোনো রাখাল (কোনো নিষিদ্ধ) মাঠের আশপাশে গরু চরায়, আর এতে সম্ভাবনা আছে যে, সে তাতে (নিষিদ্ধ মাঠে) তার পশু ঢুকিয়ে দেবে। সাবধান! নিশ্চয়ই প্রত্যেক বাদশাহর একটি নিষিদ্ধ মাঠ থাকে। মনে রেখ, আল্লাহর নিষিদ্ধ মাঠ হলো তাঁর হারাম জিনিসগুলো। আর সাবধান! মানুষের দেহের মধ্যে এক টুকরো গোশত আছে, যখন সেই গোশতের টুকরোটি সুস্থ থাকে, তখন গোটা দেহ সুস্থ থাকে, আর যখন তা দূষিত হয়ে যায় তখন গোটা দেহটাই অসুস্থ হয়ে পড়ে। জেনে রেখ, এটাই হলো কলব বা অন্তর। _বুখারি ও মুসলিম
আলোচ্য হাদিসের প্রথমেই হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, শরিয়তে যেসব জিনিস হালাল করা হয়েছে তা কোরআন এবং হাদিস দ্বারা স্পষ্ট উলেল্গখ করা হয়েছে। অনুরূপভাবে শরিয়তের হারাম জিনিসগুলোও স্পষ্ট উলেল্গখ করা হয়েছে। এগুলো গ্রহণ বা বর্জন করতে মানুষকে বেগ পেতে হয় না। কিন্তু যেসব জিনিস শরিয়তে স্পষ্টভাবে উলেল্গখ করা হয়নি, সে সম্পর্কে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, 'আর এ দু'য়ের মধ্যবর্তী বিষয়গুলো হলো সন্দেহজনক। আর বেশিরভাগ লোকই সেগুলো জানে না।' অর্থাৎ দুনিয়ায় অনেক জিনিস আছে যেগুলো সম্পর্কে শরিয়তে স্পষ্টভাবে হালাল বা হারাম তা উলেল্গখ করা হয়নি, যা বিশেষজ্ঞ আলেম ছাড়া সাধারণ লোকদের জানা সম্ভব নয়। সুতরাং সমাজের অধিকাংশ লোকেরই সেসব বিষয় সম্পর্কে (হালাল-হারাম) বাছবিচার করা সম্ভব নয়। অতএব এ ধরনের সন্দেহজনক জিনিস সম্পর্কে লোকদের করণীয় কী হবে তার নীতিমালা উলেল্গখ করে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) হাদিসের পরবর্তী অংশে বলেন, 'অতএব যে ব্যক্তি ওই সন্দেহজনক জিনিসগুলোকে পরিহার করল সে তার দীন ও মান-সম্মানকে পবিত্র রাখল। আর যে ব্যক্তি সন্দেহজনক জিনিসে জড়িয়ে পড়ল সে হারামের মধ্যে পড়ে গেল।' হাদিসের এ অংশে সন্দেহজনক জিনিস ত্যাগ করার কথা বলা হয়েছে। একজন পরহেজগার লোকের কাজ হবে যখন সে কোনো সন্দেহজনক জিনিসের সম্মুখীন হবে তখন সঙ্গে সঙ্গে তা পরিহার করা। কেননা এতে তার দীন সংরক্ষিত হয় অর্থাৎ হারাম থেকে বাঁচতে পারে এবং হারাম থেকে বাঁচার কারণে তার দেহ-মন পবিত্র থাকে এবং মান-সম্মানও রক্ষা পায়। অপরপক্ষে যে ব্যক্তি এসব সন্দেহজনক জিনিসে জড়িয়ে পড়ে অথচ তার জানা নেই যে এটা হালাল না হারাম; সুতরাং এসব সন্দেহজনক জিনিস গ্রহণ করার কারণে হারামের মধ্যে নিপতিত হয়ে নিজের দীনকে ধ্বংস করে এবং হারাম ভক্ষণের কারণে দুনিয়া এবং আখিরাতে সে অপমানিত ও লাঞ্ছিত হয়। কিন্তু আমাদের সমাজের বেশিরভাগ লোককেই দেখা যায় কোনো সন্দেহযুক্ত অথবা বিতর্কিত জিনিসকে হালাল করার উদ্দেশ্যে ফতোয়ার জন্য ছোটাছুটি করে বেড়ায় এবং বিভিন্ন কায়দা-কানুনের মাধ্যমে তা গ্রহণ করার চেষ্টা করে।
সুতরাং কলব এবং দেহকে সুস্থ, পবিত্র ও কলুষমুক্ত রাখতে হলে হালাল পথে অর্থ উপার্জন করতে হবে; হালাল গ্রহণ করতে হবে। হারাম ও সন্দেহজনক জিনিস পরিহার করতে হবে। সৎ ও কলুষমুক্ত জীবনযাপন করতে হবে। আর যত প্রকারের অন্যায়, অসৎ ও পাপের পথ রয়েছে, তা বর্জন করতে হবে। কেননা মানুষ যখন কোনো অন্যায় ও পাপকাজ করে তখন তার অন্তঃকরণের ওপর প্রভাব পড়ে। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) এ সম্পর্কে বলেন, 'আর যখন তা দূষিত বা খারাপ হয়ে যায় তখন গোটা দেহটাই অসুস্থ হয়ে পড়ে।' সুতরাং কল্বকে পূত-পবিত্র রাখার জন্য সকল প্রকার হারাম এবং সন্দেহজনক জিনিসকে বর্জন করে শরিয়তে যা স্পষ্ট হালাল তা গ্রহণ করতে হবে এবং সকল প্রকার গুনাহর কাজ থেকে দূরে থেকে সৎ ও নেকির কাজ করতে হবে। তাহলেই মানুষের গোটা দেহের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সৎ, কল্যাণকর ও নেকির কাজে জড়িত হবে।
উপরোলিল্গখিত হাদিসের আলোকে আমাদের জন্য যেসব শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে তা হলো_ শরিয়তে যেসব জিনিসকে স্পষ্টভাবে হালাল ঘোষণা করা হয়েছে তা গ্রহণ করতে হবে এবং যেসব জিনিসকে স্পষ্টভাবে হারাম করেছে, তা থেকে দূরে থাকতে হবে।
স্পষ্ট হারাম বর্জন করার পর যেসব জিনিস সন্দেহজনক তাও বর্জন করতে হবে। কেননা সন্দেহজনক জিনিস গ্রহণ করলে হারামে জড়িয়ে পড়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। সন্দেহজনক জিনিস বর্জন করা মুত্তাকিদের বৈশিষ্ট্য।
হারামে জড়িয়ে পড়ার ভয়ে প্রয়োজন হলে হালাল জিনিসও বর্জন করতে হবে।
মনকে পবিত্র এবং কলুষমুক্ত রাখার জন্য হালাল, বৈধ উপায়ে উপার্জিত রুজি খেতে হবে এবং খারাপ, অন্যায় ও গুনাহর কাজ থেকে দূরে থাকতে হবে। কেননা মনের ভালো-মন্দের ওপর নির্ভর করে দেহের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ভালো-মন্দ কাজের তৎপরতা। জান্নাতে যেতে হলে বৈধ উপায়ে অর্জিত রুজি দ্বারা দেহ গঠন করতে হবে। কেননা এর ওপর নির্ভর করছে ইবাদত কবুল হওয়া-না-হওয়া। এক হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, 'হারাম মাল দ্বারা রক্ত-মাংস গঠিত দেহে আল্লাহর ইবাদত কবুল হয় না।' অন্য হাদিসে বলা হয়েছে, 'হারাম মাল দ্বারা গঠিত দেহ জান্নাতে যাওয়ার জন্য অনুপযোগী। বরং তার জন্য জাহান্নামই উপযোগী।'

-মুফতি এনায়েতুল্লাহ
Share this article :

Post a Comment

 
Support : Creating Website | Johny Template | Mas Template
Copyright © 2011. ইসলামী কথা - All Rights Reserved
Template Created by Creating Website Published by Mas Template
Proudly powered by Premium Blogger Template