ইসলামে উত্তরাধিকারের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পবিত্র কোরআনে ইসলামের অনেক বিষয় সংক্ষিপ্তভাবে উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু উত্তরাধিকারের বিধান পবিত্র কোরআনে বিস্তারিত ও সুস্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। ফলে উত্তরাধিকারের বিধান নিয়ে আমাদের নতুন করে চিন্তা-ভাবনার কোন সুযোগ নেই। পবিত্র কোরআনে উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে পিতা-মাতার সম্পদে ছেলে মেয়ের অংশ নির্ধারণে বৈষম্যের বিধান রাখা হয়েছে। পিতা-মাতার সম্পদ থেকে একজন মেয়ে যতটুকু পাবে ছেলে তার দ্বিগুণ পাবে। অন্যভাবে বললে, একজন ছেলে যা পাবে মেয়ে তার অর্ধেক পাবে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে আল্লাহতায়ালা তোমাদের সন্তানদের সম্পর্কে আদেশ দিচ্ছেন, একজন পুরুষের অংশ দু’জন নারীর সমান (নিসা. ১১) এ বিধানটি পবিত্র কোরআনের বলে এটা পরিবর্তনের অধিকার মানুষের নেই। কারণ, আমরা মুসলমান। আমরা বিশ্বাস করি, আল্লাহর বাণী ও বিধান চিরন্তন সত্য, কালোত্তীর্ণ সব যুগে সব মানুষের জন্য সমানভাবে কল্যাণকর। সুতরাং কোরআনের কোন বিধান পরিবর্তনের প্রশ্নই ওঠে না। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, সত্য ও ন্যায়ের দিক দিয়ে তোমার প্রতিপালকের বাণী পরিপূর্ণ। তার বাণী পরিবর্তনের কেউ নেই। তিনি সর্বশ্রোতা সর্বজ্ঞ। (আনআম-১১৫) প্রশ্ন হল, উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ বা ছেলেমেয়ের মধ্যে এ বৈষম্যের বিধানের যৌক্তিকতা কি? আমরা যদি একটু চিন্তা করি তাহলে সে যৌক্তিকতা সহজেই উপলব্ধি করতে পারি। একজন নারীর বিয়ের পূর্ব পর্যন্ত তার ভরণ-পোষণের দায়িত্ব পিতার, অথচ ছেলে সাবালগ হওয়ার পরই তার ভরণ-পোষণের দায়িত্ব আর পিতার ওপর থাকে না। তার নিজের ওপর চলে আসে। বিয়ের সময় একজন নারী স্বামীর কাছ থেকে সম্মানজনক দেনমোহর পান। এটা তার ন্যায্য অধিকার। অপরদিকে স্বামী-স্ত্রীর কাছ থেকে বিয়ের সময় কোন প্রকার যৌতুক নিতে পারবে না। উপরন্তু দেনমোহর দিতে সে বাধ্য।
বিয়ের পর স্ত্রীর ভরণ-পোষণের দায়িত্ব স্বামীর ওপর বর্তায়। স্বামী মারা গেলে একজন নারীর ভরণ-পোষণের দায়িত্ব বর্তায় সন্তানের ওপর। এভাবে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, একজন পুরুষ সাবালক হওয়ার পর আজীবন অন্যদের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব পালন করে। কিন্তু নারীকে সারাজীবন কোন সময়ই অন্যের ভরণ-পোষণ করতে হয় না। বরং তার ভরণ-পোষণ অন্যরা করে। সুতরাং সে উত্তরাধিকার হিসেবে পিতা-মাতা, স্বামী-সন্তান আরও অন্যদের থেকে যা পায় তা তার সঞ্চয় থেকে যায়। যদি ব্যয় করে তাহলে সেটা একান্ত সখ ও ইচ্ছা ছাড়া আর কিছুই নয়। সুতরাং পিতা-মাতার সম্পদে মেয়ের অংশ ছেলের অর্ধেক হলেও তা কম তো নয়ই। বাস্তবে প্রয়োজনাতিরিক্তই বটে। আমরা যদি এই সত্যকে চিন্তা এবং উপলব্ধি করি তাহলে আর কোন প্রশ্নই থাকে না।
-মুফতি মুতীউর রাহমান
Post a Comment