আল্লাহ পবিত্র কোরআন নাজিল করেছেন সহজ ভাষায়। মানুষ যাতে সত্য, সুন্দর ও কল্যাণের দিকে আসে তা নিশ্চিত করতেই সহজভাবে তাদের কোনটি আলোকিত পথ তা বাতলে দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ নিজেও পবিত্র কোরআনে এ বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও সহজভাবে মানুষকে আল্লাহ তথা সত্য ও সুন্দরের পথে আসার জন্য শিক্ষা দিয়েছেন।
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রহ.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা দীনের জ্ঞান শিক্ষা দাও ও সহজ করে পেশ কর। এ কথা তিনি তিনবার বলেছেন। তুমি উত্তেজিত হয়ে পড়লে নীরবতা অবলম্বন কর। এ কথাও তিনি তিনবার বলেছেন (ইমাম বুখারীর আদাবুল মুফরাদ গ্রন্থ থেকে)।
তাবিঈ শাকীক (রহ.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) প্রতি বৃহস্পতিবার লোকদের উদ্দেশে ওয়াজ-নসিহত করতেন। এক ব্যক্তি তাকে বলল, হে আবদুর রহমানের পিতা! আমার আকাক্সক্ষা এই যে, আপনি যদি প্রতিদিন আমাদের উদ্দেশে ওয়াজ-নসিহত করতেন। তিনি বলেন, একটা আশংকাই আমাকে তা করতে বাধা দেয়। তোমাদের বিরক্ত হয়ে যাওয়ার ভয়ে আমি দৈনিক ওয়াজ-নসিহত করা পছন্দ করি না। এ ব্যাপারে আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নীতি অনুসরণ করি। পাছে আমরা তাঁর নসিহতে বিরক্ত হয়ে যাই সেদিকে তিনি খেয়াল রাখতেন (বুখারী, মুসলিম থেকে মিশকাতে)।
আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কারো কোনো আচরণ অপছন্দ হলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার এই দোষ সামনা-সামনি খুব কমই ধরতেন। একদিন এক ব্যক্তি তার কাছে এলো। তার দেহে (পোশাকে) হলুদ রংয়ের চিহ্ন ছিল। সে যখন (মজলিশ থেকে) উঠে দাঁড়ালো তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের বলেন, সে যদি এই রং পরিবর্তন অথবা পরিষ্কার করে ফেলত! (আদাবুল মুফরাদ থেকে)
সমাজের প্রভাবশালী ও দায়িত্বশীল ব্যক্তিগণ যদি পদে পদে লোকের ভুল ধরে তবে তাতে সুফল হওয়ার পরিবর্তে অবাধ্যতার প্রবণতা সৃষ্টি হওয়ার আশংকা রয়েছে। এজন্য সংস্কার-সংশোধনের ক্ষেত্রে বিজ্ঞোচিত কর্মপন্থা অবলম্বন করা উচিত। যারা দীনের প্রচারক তাদের উচিত তাদের কথা এবং কাজে কোনো মানুষ যাতে কষ্ট না পায়। মানুষকে সংশোধন করা এবং অন্ধকারের পথ থেকে আলোর পথে নিয়ে আসার ক্ষেত্রেও এ সতর্কর্তা থাকতে হবে। মানুষের কাছে সহজ ও গ্রহণযোগ্যভাবে আল্লাহ ও তার রাসূলের (সা.) কথা বলতে হবে। সাধারণ মানুষ ভুল করতেই পারে। কিন্তু কথায় কথায় ভুল ধরার বদলে কোনটি সঠিক তা জানাবার দিকে বেশি নজর দিতে হবে।
লেখক : হাফেজ শেখ মিরাজ, ইসলামী গবেষক।
Post a Comment