السلام عليكم

যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার (তওবা) করবে আল্লাহ তাকে সব বিপদ থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন। [আবূ দাঊদ: ১৫২০; ইবন মাজা: ৩৮১৯]

রাসূল সাঃ-এর শেষ ভাষণ

| comments

দশম হিজরি। জিলহজ মাস। ২৩ বছর আগে হেরাগুহায় জ্বলে উঠেছিল সত্যের আলো। আজ তা পূর্ণতায় উপনীত। এক কঠিন দায়িত্ব নিয়ে তিনি প্রেরিত হয়েছিলেন এ পৃথিবীতে। ২৩ বছর কঠিন পরিশ্রম, সংগ্রাম, অপরীসীম কোরবানি ও ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছিল। তা আজ সমাপ্তির পথে। যে উদ্দেশ্য নিয়ে তিনি প্রেরিত হয়েছিলেন মানুষের কাছে দূত হিসেবে তা আজ পূর্ণতার পথে। দীর্ঘ ২৩ বছর তিনি সাধনা করে একটি রাষ্ট্র গঠন করলেন। গঠন করলেন শোষণমুক্ত জুলুমহীন ন্যায়বিচারের সমাজ। গড়ে তুললেন তাওহিদভিত্তিক নব সভ্যতার এক নতুন জাতি­ মুসলিম উম্মাহ।

তাই নবী করীম সাঃ সঙ্গীসাথীসহ হজের উদ্দেশ্যে মক্কা নগরীতে গমন করেন এবং হজ সম্পাদন করেন। আজ লাখো কণ্ঠে ধ্বনিত হচ্ছে লাব্বায়েক আল্লাহুম্মা লাব্বায়েক। আজ থেকে প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে ইব্রাহীম আঃ ও ইসমাইল আঃ যেখানে দাঁড়িয়ে কাবার প্রাচীর নির্মাণ করেছিলেন সেখানে দাঁড়িয়ে এক মুসলিম উম্মাহ গঠনের জন্য মহান আল্লাহ তা’য়ালার দরবারে দোয়া করেছিলেন। মুসলমানরা আজ মাকামে ইবরাহীমে সমবেত। ৯ জিলহজ রাসূল সাঃ সব মানুষের সামনে দাঁড়ালেন। মহানবী সাঃ প্রথমে আল্লাহ তা’য়ালার প্রশংসা করলেন। এরপর তিনি তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণ পেশ করলেন­ তিনি বললেন, সমবেত জনতা­
১. আজ সকল প্রকার কুসংস্কার অন্ধ বিশ্বাস এবং সকল প্রকার অনাচার আমার পদতলে দলিত-মথিত হয়ে গেল।
২. তোমরা তোমাদের দাসদাসীদের সাথে ভালো ব্যবহার করো। তাদের সাথে তোমরা খারাপ ব্যবহার কোরো না। তাদের ওপর নির্যাতন করবে না। তোমরা যা খাবে তাদেরকে তোমরা তাই খেতে দিবে। তোমরা যে বস্ত্র পরিধান করবে তাদেরকে তাই পরিধান করতে দিবে। মনে রেখো তারাও মানুষ তোমরাও মানুষ। এরাও একই আল্লাহর সৃষ্টি।
৩. সাবধান! নারীদের সাথে ভালো ব্যবহার করবে। তাদের ওপর কখনো অন্যায়-অত্যাচার করবে না। কেননা তারা হলো অবলা। কেননা তাদের দায়িত্ব তোমাদের ওপরই। তোমাদের যেমন নারীদের ওপর অধিকার আছে। তেমনি তোমাদের ওপরও নারীদের অধিকার আছে। দয়া ও ভালোবাসার মাধ্যমে তাদের সাথে আচরণ করবে।
৪. আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করবে না। কারণ যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করে সে কুফুরি করল।
৫. সুদ ঘুষ রক্তপাত অন্যায় অবিচার জুলুম নির্যাতন কোরো না। কারণ এক মুসলমান আরেক মুসলমানের ভাই। আর মুসলমান পরস্পর ভ্রাতৃসমাজ।
৬. তোমরা মিথ্যা বোলো না। কারণ মিথ্যা সব পাপ কজের মূল। কারণ মিথ্যাই বিপদ ডেকে আনে।
৭. চুরি কোরো না। ব্যভিচার কোরো না। সর্বপ্রকার মলিনতা হতে দূরে থেকো। পবিত্রভাবে জীবনযাপন করো। সাবধান! শয়তান থেকে তোমরা দূরে থেকো। তোমরা কোনো একটি কাজকে খুব সামান্য মনে করবে, কিন্তু শয়তান এসবের মাধ্যমে তোমাদের সর্বনাশ করিয়ে ছাড়বে।
৮. তোমরা তোমাদের আমীরের আদেশ অমান্য করবে না। যদিও হাবশি নাক কাটা গোলাম হয়। তোমরা তার আনুগত্য করবে। যতক্ষণ পর্যন্ত সে আল্লাহর দীনের ওপর থাকবে।
৯. ধর্মের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি কোরো না। কারণ তোমাদের পূর্ব-পুরুষেরা এই কারণে ধ্বংস হয়েছে।
১০. বংশের গৌরব কোরো না। যে ব্যক্তি নিজ বংশকে হেয় প্রতিপন্ন করে অপর বংশের পরিচয় দেয় তার ওপর আল্লাহর অভিশাপ।
১১. তোমরা তোমাদের প্রভুর এবাদত করবে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়বে। রোজা রাখবে, তাঁর আদেশ-নিষেধ মেনে চলবে, তবেই তোমরা জান্নাতি হতে পারবে।
১২. আমি আমার পরে তোমাদের জন্য যা রেখে যাচ্ছি তা তোমরা দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরে রাখবে। তার ওপর আমল করবে। তাহলে তোমাদের পতন ঘটবে না। আর তা হচ্ছে আল্লাহর কুরআন ও নবীর সুন্নত।
১৩. তোমরা ভালোভাবে জেনে রাখো আমিই সর্বশেষ নবী আমার পরে আর কোনো নবী আসবেন না। আমিই আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম। আমার এই সকল বাণী তোমরা যারা শুনেছ তারা যারা অনুপস্থিত তাদের নিকট পৌঁছে দিবে।


মহানবী সাঃ ভাষণ শেষ করলেন। এবং তাঁর চেহারা মোবারক উজ্জ্বল হয়ে উঠল। তিনি করুণ স্বরে করুণভাবে আকাশ পানে তাকালেন এবং তিনি বললেন, ‘হে মহান প্রভু! হে পরওয়ার দিগার! আমি কি তোমার দীনের দাওয়াত পরিপূর্ণভাবে মানুষের কাছে পৌঁছাতে পেরেছি। তখন উপস্থিত জনতা সবাই সম্মিলিতভাবে বললেন, নিশ্চয়ই আপনি আপনার দীন পরিপূর্ণভাবে পৌঁছাতে পেরেছেন। তখন তিনি আবার বললেন যে, ‘হে প্রভু! আপনি শুনুন, আপনি সাক্ষী থাকুন, এরা বলেছ আমি আপনার দীনকে লোকদের নিকট পৌঁছাতে পেরেছি। আমি আমার কর্তব্য পালন করতে পেরেছি।
ভাবের অতিশয্যে নবী নীরব হলেন। জান্নাতি নূরে তাঁর চেহারা আলোকদীপ্ত হয়ে উঠল। এই মুহূর্তে কুরআনের শেষ আয়াতটি নাজিল হয়। ‘আজকের এই দিনে তোমাদের দীনকে পূর্ণ করে দিলাম। তোমাদের ওপর আমার নিয়ামত পূর্ণ করে দিলাম। ইসলামকেই তোমাদের ওপর দীন হিসেবে মনোনীত করলাম।’
হজরত রাসূল সাঃ কিছুক্ষণ চুপ রইলেন। জনতা নীরব। কিছুক্ষণ পর হজরত সাঃ জনতার দিকে তাকালেন এবং করুণ গম্ভীর কণ্ঠে বললেন­ বিদায় বন্ধুগণ, বিদায়।
Share this article :

Post a Comment

 
Support : Creating Website | Johny Template | Mas Template
Copyright © 2011. ইসলামী কথা - All Rights Reserved
Template Created by Creating Website Published by Mas Template
Proudly powered by Premium Blogger Template